‘মেট্রোর সমস্ত পরিকল্পনা আমার’- দাবি মমতার!

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ বঙ্গ সফরে আসছেন মেট্রোর তিনটি শাখার উদ্বোধন করতে (Mamata Banerjee)। যার মধ্যে রয়েছে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প। মানে সোজা বাংলা ভাষায়…

Mamata and CPIM claash

প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ বঙ্গ সফরে আসছেন মেট্রোর তিনটি শাখার উদ্বোধন করতে (Mamata Banerjee)। যার মধ্যে রয়েছে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প। মানে সোজা বাংলা ভাষায় শিয়ালদাহ থেকে হাওড়া যাওয়ার সহজ একটাই রুট।

এতদিন ধরে অগুনতি মানুষ শিয়ালদাহ নেমে হাওড়া যেতে গিয়ে নাকাল হয়েছেন। বাসের ঝাঁকুনি থেকে শুরু করে ট্যাক্সি, ওলা-উবেরদের দাদাগিরি সামলে হাওড়া পৌঁছতে লাগতো দেড় ঘন্টা সময়। এবার এই ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রোর মাধ্যমে সেই যাত্রার সময় নেমে আসবে মাত্র আধাঘন্টায়।

   

যদিও এই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত ছিলেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেননি। তার কারণ হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় বলেছেন “ভারতের রেলমন্ত্রী হিসেবে আমি কলকাতায় ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পরিকল্পনা ও অনুমোদনের সুযোগ পেয়েছিলাম।

আমি নীলনকশা তৈরি করেছি, তহবিলের ব্যবস্থা করেছি, কাজ শুরু করেছি এবং শহরের বিভিন্ন প্রান্ত—যোকা, গড়িয়া, এয়ারপোর্ট, সেক্টর ফাইভ ইত্যাদি—একটি আন্তঃশহর মেট্রো গ্রিডের মাধ্যমে সংযুক্ত করেছি।” আরও একটি কারণ তিনি দেখিয়েছেন যা হল বিজেপি শাসিত রাজ্য গুলিতে বাঙালি নিগ্রহ। বাঙালিদের প্রতি সম্মান এবং বাংলা ভাষা প্রীতির কারণেই নাকি তিনি প্রধান মন্ত্রীর সঙ্গে মঞ্চ ভাগ করবেন না।

কিন্তু মমতার এই দাবিতে সরব হয়েছেন বিরোধীরা। বিশেষ করে বামেরা। তার কারণ লুকিয়ে আছে ইতিহাসে। এই ইস্ট -ওয়েস্ট মেট্রোর স্বপ্ন দেখেছিলেন বাংলার রূপকার বিধান চন্দ্র রায়। কিন্তু তিনি তার জীবদ্দশায় এই কাজ করে যেতে পারেননি।

সালটা ২০০৮ বাংলার সরকারে তখন কমিউনিস্ট বাহিনী আর কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। তিনি ঠিক করেছিলেন দিল্লি মেট্রোর মত ভবিষ্যত মেট্রো যৌথভাবে গড়বে কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়ন মন্ত্রক আর সংশ্লিষ্ট রাজ্যের পরিবহণ দফতর।

সেই পরিকল্পনাতেই তৈরী হল মেট্রো রেলওয়ে কর্পোরেশন লিমিটেড।মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য বরাবরই শিল্প এবং উন্নয়ন অনুরাগী। তাই ২০০৯ সালে তিনি সাদরে গ্রহণ করলেন এই প্রস্তাব। ২০০৯ সালে ইস্ট ওয়েস্ট মেট্রো প্রকল্প মঞ্জুর হয়ে গেল।

ঠিক হল, প্রকল্পের ৫০ শতাংশ মালিক হবে কেন্দ্রীয় নগর উন্নয়ন মন্ত্রক আর ৫০ শতাংশ মালিক রাজ্য পরিবহণ দফতর। মেট্রো চলবে সল্ট লেক সেক্টর ৫ থেকে হাওড়া ময়দান। খরচ ৪৮৭৫ কোটি টাকা। রাজ্য আর কেন্দ্র ৭০২ কোটি টাকা করে দেবে।

Advertisements

বাকি টাকা নামমাত্র সুদে ধার দেবে জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি বা জাইকা। কিন্তু বিধি বাম সেই সময়ে মনমোহন সরকারের উপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নিয়েছে বাম বাহিনী। কিন্তু মনমোহন সরকারে গজিয়ে গিয়েছে ঘাসফুল।

কারণ তখন সদ্য রেল মন্ত্রী হয়েছেন মমতা। এই সময়ে মমতা দাবি করেন ৫০ শতাংশ মালিকানা দিতে হবে রেলকে। যেখানে স্বয়ং রেলমন্ত্রী মমতা সেখানে বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যকে কেন জায়গা দেবেন তিনি?

কিন্তু বাঁধ সাধলেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং। কিন্তু প্রণব মুখোপাধ্যায়ের তত্ত্বাবধানে ৫০ নয় ৭৫ শতাংশ মালিকানা পেল রেল। তার পর একের পর এক নানা রঙের দিন। কখনো দখলদারদের আন্দোলন আবার কখনও মামলা মোকদ্দমা।

অবশেষে ২০১৫ সালে বন্ধ হয়ে যায় এই ইস্টওয়েস্ট মেট্রোর কাজ। বিরোধীরা সরব হয়েছেন কারণ সেদিন তৃণমূলের ই এক সাংসদ দায়িত্ব নিয়ে কিছু দখলদারদের উস্কেছিলেন মামলা করার জন্য। তারা আরও বলেছেন যে সেদিন তৃণমূলের ওই সাংসদ যদি বাগড়া না দিতেন তবে দত্তাবাদ হয়ে বাইপাস টপকে সুভাষ সরোবরের পাশ দিয়ে মেট্রো ঢুকে যেত পাতালে।

এরপর শিয়ালদা হয়ে, বৈঠকখানা রোড, বিবি গাঙ্গুলি স্ট্রিট, লালবাজার স্ট্রিটের তলা দিয়ে ব্রেবোর্ন রোডে মহাকরণ স্টেশন হয়ে গঙ্গার তলা দিয়ে সোজা চলে যাওয়া যেত হাওড়া। আজ নয় আজথেকে প্রায় এক দশক আগেই শেষ হত সাধারণ মানুষের ভোগান্তির।

অপেক্ষার অবসান, কলকাতায় মোদী

বিরোধী শিবির বিজেপি এর আগেও বহুবার তৃণমূলকে এই প্রকল্পও নিয়ে আক্রমণ করেছে। আজ এই ইস্টওয়েস্ট মেট্রোর উদ্বোধনের প্রাক্কালে বামেরাও কার্যত আক্রমণ করতে ছাড়েনি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়কে।