বীরভূম: বাঙালি জাতিসত্তা, ভাষা ও সংস্কৃতির ওপর ধারাবাহিক আঘাতের বিরুদ্ধে এবার পথে নামছেন তৃণমূল সুপ্রিমো। আগামী ৮ জুলাই বীরভূম সফরে আসছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee Birbhum Visit)। সফরের অন্যতম কেন্দ্রবিন্দু ইলামবাজার, যেখানে একদিকে একাধিক প্রশাসনিক প্রকল্পের উদ্বোধন, অন্যদিকে রয়েছে রাজনৈতিক বার্তায় মোড়া পদযাত্রার কর্মসূচি।
বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি কাজল শেখ জানিয়েছেন, ইলামবাজার থেকে পশ্চিম বর্ধমানের সংযোগকারী একটি গুরুত্বপূর্ণ ব্রিজের শিলান্যাস করবেন মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি প্রশাসনিক বৈঠকে আরও বেশ কিছু প্রকল্প উদ্বোধনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে মুখ্যমন্ত্রীর সফরের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ দিক হতে চলেছে একটি পদযাত্রা, যেখানে মুখ্যমন্ত্রী সরাসরি পথে নামবেন বাঙালি পরিচয়ের ওপর আঘাতের প্রতিবাদ জানাতে।
মমতার গলায় বাঙালিয়ানার সুর
গত কয়েক সপ্তাহ ধরে বিভিন্ন রাজনৈতিক মঞ্চে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বারবার অভিযোগ করেছেন, বাংলা ও বাঙালিকে লক্ষ্য করে উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আক্রমণ করা হচ্ছে, পরিযায়ী শ্রমিকদের বাংলাদেশি বলা থেকে শুরু করে বাংলা ভাষাকে উপেক্ষা করা পর্যন্ত। এবার সেই ক্ষোভেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটবে ইলামবাজারের পদযাত্রায়। কাজল শেখের কথায়, “বাংলা-ভাষা, বাঙালি মানুষ ও সংস্কৃতির উপর অপমান সহ্য করা হবে না। তাই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এই পদযাত্রা শুধুই রাজনৈতিক বার্তা নয়, আত্মপরিচয়ের লড়াই।”
তিনি আরও বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী এলেই বোলপুরের রাস্তায় জনস্রোত দেখা যাবে। মানুষের মাথা ছাড়া কিছুই দেখা যাবে না।”
অনুব্রতর ভূমিকায় অনিশ্চয়তা
তবে মমতার বীরভূম সফরের আগেই নতুন করে চর্চায় অনুব্রত মণ্ডলের ভূমিকা। একসময় জেলার অপরিহার্য নেতা হিসেবে পরিচিত ছিলেন তিনি। কিন্তু এখন আর তাঁর নামের পাশে নেই জেলা সভাপতির পদ। আছেন কেবলমাত্র কোর কমিটির সদস্য হিসেবে। গত বছর ২১ জুলাইয়ের আগের দিন পুলিশ তাঁকে মূল মঞ্চের কাছ থেকে সরিয়ে দিয়েছিল, যা নিয়ে বিতর্ক তুঙ্গে উঠেছিল। এবারে মমতার সফরে তাঁর সঙ্গে অনুব্রতের কোনও পৃথক বৈঠক হবে কি না, সে বিষয়ে দলীয় স্তরে স্পষ্ট কিছু জানানো হয়নি। তৃণমূল সূত্রে অবশ্য দাবি, স্থানীয় নেতৃত্বের সঙ্গে এক দফা আলোচনা হতে পারে।
রাজনৈতিক তাৎপর্য
একুশের আবহে বীরভূমে মমতার এই সফর নিছক প্রশাসনিক কর্মসূচি নয়, এটা রাজনৈতিক বার্তা, সাংস্কৃতিক প্রত্যাঘাত এবং দলের ভিতকে মজবুত করার কৌশল, তিনের সংমিশ্রণ। সামনে পঞ্চায়েত ও লোকসভা নির্বাচন, তার আগেই জেলাভিত্তিক সাংগঠনিক উত্তাপ বুঝতে চাইছেন নেত্রী। আর সেই কাজেই তিনি আবারও ফিরছেন তাঁর ‘অগ্নিপরীক্ষার জেলা’ বীরভূমে।