ফিরতে না ফিরতেই বিধায়কদের বিরুদ্ধে বড় পদক্ষেপ নিতে পারেন মমতা

তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় (mamata banerjee) শুক্রবার লন্ডন থেকে ফিরছেন। তার এই সফরে এখানে-সেখানে কিছু বিশৃঙ্খলা থাকলেও, ফিরেই তাকে একটি জরুরি…

mamata banerjee can take step on MLAs

তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি তথা পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় (mamata banerjee) শুক্রবার লন্ডন থেকে ফিরছেন। তার এই সফরে এখানে-সেখানে কিছু বিশৃঙ্খলা থাকলেও, ফিরেই তাকে একটি জরুরি বিষয়ের মুখোমুখি হতে হবে—দলের বিধায়কদের শৃঙ্খলা কীভাবে ফিরিয়ে আনা যায়? তৃণমূল কংগ্রেস ইতিমধ্যেই এই প্রক্রিয়া শুরু করেছে। বাজেট অধিবেশনের শেষ দিন, ২০ মার্চ, যে ১০০-র বেশি বিধায়ক (মোট ২২০ জনের মধ্যে) অনুপস্থিত ছিলেন, তাদের নোটিশ জারি করা হয়েছে।

   

১৯ ও ২০ মার্চের জন্য দলীয় হুইপ

১৯ ও ২০ মার্চের জন্য দলীয় হুইপ জারি করা হয়েছিল। কিন্তু দেখা গেছে, এটি কেবল ১৯ মার্চ কার্যকর হয়েছিল, যখন মমতা এখনও বিদেশ সফরে যাননি। তিনি চলে যাওয়ার পর ২০ মার্চ উপস্থিতির সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যায়। তৃণমূল নেতৃত্ব এই বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। একজন নেতা বলেন, “বিধায়করা নিয়মিত অধিবেশনে উপস্থিত থাকার অনুরোধের কোনো গুরুত্ব দিচ্ছেন না। কেউই পরোয়া করছে না।”
আরও উদ্বেগজনক বিষয় হল, তৃণমূল বিধায়ক দল ২০ মার্চের উপস্থিতি রেজিস্টার পরীক্ষা করে দেখেছে যে, অনেক বিধায়ক সই করলেও অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন না।

Advertisements

সিনিয়র বিধায়ক দলের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরেন

একজন সিনিয়র বিধায়ক দলের দুর্দশার চিত্র তুলে ধরে বলেন, “এই নেতারা এখন দাবি করছেন যে তারা উপস্থিত ছিলেন এবং অধিবেশনের প্রতিটি বিষয়ের বিস্তারিত বর্ণনাও দিচ্ছেন!” আরেকজন সিনিয়র বিধায়ক বলেন, “২০ মার্চ সারাক্ষণ মাত্র ৬০ জন তৃণমূল বিধায়ক উপস্থিত ছিলেন। আমরা ভাগ্যবান যে বিজেপি বিধানসভা থেকে ওয়াকআউট করেছিল। নইলে তারা থাকলে এবং অর্থ বিলের উপর ভোট চাইলে আমরা হয়তো হেরে যেতাম।” অর্থ বিল পাস করতে ব্যর্থ হওয়া প্রযুক্তিগতভাবে সরকারের বিরুদ্ধে অনাস্থা ভোট হিসেবে গণ্য হয়।

তৃণমূলের চিফ হুইপ নির্মল ঘোষ স্পিকারের কার্যালয়ের কাছে অনুপস্থিত বিধায়কদের চূড়ান্ত তালিকা চেয়েছেন বলে জানা গেছে। বর্তমানে, দলটি শনিবার মমতার সঙ্গে বৈঠক করে এই বিষয়ে আলোচনার পরিকল্পনা করেছে। তবে, শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনার কঠোর পদক্ষেপ কয়েকদিন পিছিয়ে যেতে পারে, যা বিধায়কদের জন্য সাময়িক স্বস্তি হতে পারে।

মমতার অনুপস্থিতিতে বিধায়কদের এই আচরণ দলের অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলার অভাবকে প্রকাশ করে। তৃণমূলের একটি বড় অংশের বিধায়কদের মধ্যে দায়িত্ববোধের ঘাটতি নিয়ে নেতৃত্ব উদ্বিগ্ন। একজন নেতা বলেন, “আমরা হুইপ জারি করি, কিন্তু এটি অনেকের কাছে কোনো গুরুত্বই বহন করে না। এটা দলের জন্য লজ্জার।” বিধানসভায় উপস্থিতি শুধু দলীয় শৃঙ্খলার বিষয় নয়, এটি সরকারের সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।

আরো দেখুন ধোনি দুর্গে ‘কোহলি কোহলি’ জয়োধ্বনিতে মাতল চিপক

২০ মার্চের ঘটনা তৃণমূলের জন্য একটি সতর্কতা। অর্থ বিলের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে ভোটাভুটির সময় সংখ্যাগরিষ্ঠতা হারানো সরকারের স্থিতিশীলতার উপর প্রশ্ন তুলতে পারে। বিজেপির ওয়াকআউট না হলে পরিস্থিতি আরও জটিল হতে পারত। একজন বিধায়ক বলেন, “আমাদের ভাগ্য ভালো যে বিরোধীরা সেদিন অধিবেশনে ছিল না। এটি আমাদের দুর্বলতা ঢাকতে সাহায্য করেছে।”

মমতার (mamata banerjee) পদক্ষেপ 

মমতা (mamata banerjee) ফিরে এসে এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেন, তা নিয়ে দলের মধ্যে আলোচনা চলছে। কেউ কেউ মনে করেন, তিনি কঠোর ব্যবস্থা নিতে পারেন, যেমন অনুপস্থিত বিধায়কদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক পদক্ষেপ বা দলীয় পদ থেকে অপসারণ। অন্যরা মনে করেন, তিনি প্রথমে বিষয়টি বোঝার চেষ্টা করবেন এবং বিধায়কদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান খুঁজবেন। তবে, দলের একটি সূত্র জানায়, “মমতা দিদি এই ধরনের বিশৃঙ্খলা মেনে নেবেন না। তিনি দলের ভাবমূর্তি এবং সরকারের স্থায়িত্ব নিয়ে কোনো ঝুঁকি নিতে চান না।”

তৃণমূলের বিধায়কদের এই আচরণ নতুন নয়। অতীতেও বেশ কয়েকবার অধিবেশনে অনুপস্থিতির ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু এবার বাজেট অধিবেশনের শেষ দিনে এত বড় সংখ্যায় বিধায়কদের অনুপস্থিতি দলের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। দলের একজন সিনিয়র নেতা বলেন, “এটি শুধু শৃঙ্খলার অভাব নয়, দায়িত্বজ্ঞানহীনতারও প্রমাণ। আমাদের এটি গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে।”

মমতার (mamata banerjee) লন্ডন সফর 

মমতার লন্ডন সফরের সময় তিনি অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলার উন্নয়ন মডেল নিয়ে বক্তৃতা দিয়েছেন। কিন্তু দেশে ফিরেই তাকে এই অভ্যন্তরীণ সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। শনিবারের বৈঠকে এই বিষয়ে কী সিদ্ধান্ত হয়, তা দলের ভবিষ্যৎ কৌশল এবং শৃঙ্খলার উপর প্রভাব ফেলবে।

বিধায়কদের মধ্যে কেউ কেউ তাদের অনুপস্থিতির জন্য নানা অজুহাত দেখাচ্ছেন। কেউ বলছেন, তারা নির্বাচনী এলাকায় জরুরি কাজে ব্যস্ত ছিলেন। কিন্তু দলের নেতৃত্ব এই অজুহাতে সন্তুষ্ট নয়। একজন নেতা বলেন, “নির্বাচনী এলাকায় কাজ করা গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু বিধানসভায় উপস্থিতি একজন বিধায়কের প্রথম দায়িত্ব।” এই ঘটনা তৃণমূলের জন্য একটি শিক্ষা হতে পারে। আগামী দিনে দলকে আরও কঠোর নিয়ম এবং তদারকির ব্যবস্থা করতে হতে পারে। মমতার নেতৃত্বে দলটি কীভাবে এই সংকট মোকাবিলা করে, তা রাজ্যের রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।