মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্বাচন কমিশনের (ইসিআই) বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগের জবাবে বিজেপি তীব্র আক্রমণ শানিয়েছে (Malviya)। মমতা বলেছেন, “আমি নির্বাচন কমিশনকে সম্মান করি, কিন্তু কেউ যদি বিজেপির ‘দালালি’ করে, আমি তার প্রতিবাদ করব।” এই মন্তব্যের পাল্টা হিসেবে বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের সহ-ইনচার্জ অমিত মালব্য মমতার বিরুদ্ধে ভুয়ো ভোটার এবং অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থনের অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক মহলে ঝড় তুলেছেন।
তিনি দাবি করেছেন, পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় ১৭ লক্ষেরও বেশি ভুয়ো ভোটার রয়েছে, যা বিজেপি নির্বাচন কমিশনের কাছে দুবার আনুষ্ঠানিকভাবে উত্থাপন করেছে। অমিত মালব্য আরও উল্লেখ করেছেন, ২০০৫ সালের ৪ আগস্ট লোকসভায় মমতা নিজেই বলেছিলেন, “বাংলায় অনুপ্রবেশ এখন বিপর্যয়ের রূপ নিয়েছে… আমার কাছে বাংলাদেশি এবং ভারতীয় ভোটার তালিকা রয়েছে।
এই গুরুতর বিষয়টি কবে সংসদে আলোচিত হবে?” অথচ, ২০ বছর পরেও মমতা সেই তথাকথিত বাংলাদেশি ভোটার তালিকা জমা দেননি। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে তিনি কী লুকাচ্ছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বিজেপির অভিযোগ, একজন বর্তমান মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে মমতার অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের সমর্থন করা এবং প্রকৃত ভোটারদের অধিকার হরণ করা লজ্জাজনক।
আগামী ১ আগস্ট থেকে শুরু হতে চলা স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (এসআইআর) কী উন্মোচন করবে তা নিয়ে আলোচনা চললেও, বিজেপির দাবি, ২০২৬ সালে বাংলার জনগণই মমতার এই কার্যকলাপের জবাব দেবে।
বিজেপির পশ্চিমবঙ্গের সহ-ইনচার্জ অমিত মালব্য সামাজিক মাধ্যমে এক পোস্টে বলেন, “আমরা দাবি করছি যে নির্বাচন কমিশন পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকা পরিশুদ্ধ করুক এবং তৃণমূল কংগ্রেস যাদেরকে বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গা অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে, তাদের নাম বাদ দিক।
তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক তৈরির এই প্রচেষ্টা বন্ধ করতে হবে।” তিনি আরও অভিযোগ করেন, তৃণমূল ভাষাগত সংখ্যালঘু এবং হিন্দু শরণার্থীদের, বিশেষ করে মাতুয়া সম্প্রদায়ের নাম ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়ার চেষ্টা করছে। এই অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন মাত্রা যোগ করেছে, বিশেষ করে ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে।
মমতার নির্বাচন কমিশনের বিরুদ্ধে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ নতুন নয়। তিনি বারবার দাবি করেছেন, নির্বাচন কমিশন বিজেপির ইশারায় কাজ করছে। সম্প্রতি তিনি অভিযোগ করেন, বিজেপি অন্য রাজ্য থেকে ভুয়ো ভোটারদের নাম পশ্চিমবঙ্গের ভোটার তালিকায় যুক্ত করছে, যা দিল্লি এবং মহারাষ্ট্র নির্বাচনে তাদের জয় নিশ্চিত করেছে।
তিনি বলেন, “নির্বাচন কমিশনের আশীর্বাদে বিজেপি ভোটার তালিকায় কারচুপি করছে। আমার কাছে সব জেলার প্রমাণ রয়েছে। হরিয়ানা, গুজরাতের মানুষের নাম আমাদের ভোটার তালিকায় যুক্ত হয়েছে।” তিনি এই অভিযোগের সমর্থনে তৃণমূলের পক্ষ থেকে ব্লক পর্যায়ে ভোটার তালিকা যাচাইয়ের নির্দেশ দিয়েছেন এবং প্রয়োজনে নির্বাচন কমিশনের দপ্তরের সামনে ধর্নার হুমকি দিয়েছেন।
কিন্তু বিজেপির পাল্টা অভিযোগ, মমতার এই বক্তব্য কেবল রাজনৈতিক কৌশল। অমিত মালব্য বলেন, “গত ১৪ বছর ধরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং তাঁর সরকার পদ্ধতিগতভাবে ভোটার তালিকায় অবৈধ বাংলাদেশি এবং রোহিঙ্গাদের নাম যুক্ত করেছে।
এসআইআর-এর মাধ্যমে এই অবৈধ ভোটারদের চিহ্নিত করা হলে তৃণমূলের ভোটব্যাঙ্ক উন্মোচিত হবে।” তিনি আরও দাবি করেন, পশ্চিমবঙ্গে প্রায় ৮,৪১৫ জন ভোটারের একই ইপিআইসি নম্বর রয়েছে, যা ভুয়ো ভোটারের উপস্থিতি নির্দেশ করে।
তিনি তাঁর অবৈধ ভোটারদের রক্ষা করতে চাইছেন।” তিনি উল্লেখ করেন, এই অভিযোগ পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূলের শাসনের আগেও ছিল, এবং মমতা নিজেই ১৯৯৩ সালে ভোটার তালিকার কারচুপির বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন।
নির্বাচন কমিশনের তরফে জানানো হয়েছে, ভোটার তালিকার স্পেশাল ইনটেনসিভ রিভিশন (এসআইআর) আগামী ১ আগস্ট থেকে শুরু হবে, যা ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের আগে ভোটার তালিকা পরিশুদ্ধ করবে।
কমিশনের দাবি, এই প্রক্রিয়ায় প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ যাবে না, তবে মৃত এবং স্থানান্তরিত ভোটারদের নাম বাদ দেওয়া হবে। ২০০২ সালে এসআইআর-এর সময় ২৮ লক্ষ ভোটারের নাম বাদ দেওয়া হয়েছিল, এবং এবারও প্রায় ১ কোটি অবৈধ ভোটার চিহ্নিত হতে পারে বলে দাবি করা হচ্ছে।
তৃণমূলের পক্ষ থেকে এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। তৃণমূল নেতারা বলছেন “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাঙালির পরিচয় ও অধিকার রক্ষার জন্য লড়ছেন। বিজেপি ভুয়ো অভিযোগ তুলে রাজনৈতিক সুবিধা নিতে চাইছে।” তৃণমূলের দাবি, তারা প্রতিটি ব্লকে ভোটার তালিকা যাচাই করছে এবং কোনও অনিয়ম হলে তার বিরুদ্ধে আন্দোলন করবে।
৯৫% দেশীয় যন্ত্রাংশ দিয়ে এবার ভারতীয় সেনার ATAGS কামান হবে ‘সুপার-লাইট’
একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, “মমতা যদি অবৈধ ভোটারদের সমর্থন করেন, তবে এটা গণতন্ত্রের উপর আঘাত।” আরেকজন লিখেছেন, “বিজেপি বাঙালি পরিচয়ের উপর আক্রমণ করছে, মমতা ঠিকই লড়ছেন।”এই বিতর্ক আগামী দিনে কীভাবে রাজনীতিকে প্রভাবিত করবে, তা নিয়ে সবার নজর রয়েছে। ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে এই ইস্যু তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে সংঘাতকে আরও তীব্র করবে বলে মনে করা হচ্ছে।