ইংলিশবাজার শহরের ঘোড়াপীর এলাকায় সিদ্ধান্ত পরিবার সমাজের চিরাচরিত রীতি ভেঙে, মেয়েদেরও উঁচু জায়গায় বসানোর বার্তা দিতে ৯ বছর বয়সী কন্যা মধুপর্ণা সিদ্ধান্তের পৈতে সম্পন্ন করেছেন। তাঁদের দাবি, মেয়েদের উপনয়ন শুধু মালদহে নয়, এই ঘটনা উত্তরবঙ্গে প্রথম নজির গড়েছে। এই পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা ছেলে ও মেয়ের মধ্যে কোনো ভেদাভেদ না থাকার বার্তা দিয়েছেন।
ব্রাহ্মণ সমাজে উপনয়ন এবং ব্রহ্মচর্যের রীতি বেশ পুরনো। সাধারণত, পুরুষ সন্তানদেরই পৈতে দেওয়া হয়। কিন্তু সিদ্ধান্ত পরিবার মেয়ের পৈতে দিয়ে একটি ভেদাভেদ হীন সামাজিক বার্তা দিতে চেয়েছেন। মধুপর্ণা মালদহের একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলের তৃতীয় শ্রেণির ছাত্রী। তার বাবা মনোজকুমার সিদ্ধান্ত একজন ব্যবসায়ী, আর মা পায়েল সিদ্ধান্ত গৃহবধূ।
মনোজবাবু বলেন, “আমার মেয়ে হওয়ার পর অনেকেই বলেছিলেন, ‘মেয়ে হওয়া ঠিক নয়।’ আমি সমাজের এই চিন্তাধারা বদলাতে চাইছি, এবং মেয়ের পৈতে দিয়েছি।” তিনি আরও জানান, আগে মেয়েদের পৈতে দেওয়া হত, তবে পরবর্তীতে বিভিন্ন কারণে এটি বন্ধ হয়ে যায়। সিদ্ধান্ত পরিবারের উদ্দেশ্য হল, সমাজে পুরুষ এবং নারী, দুইজনকেই সমানভাবে দেখার প্রচেষ্টা করা।
এছাড়া, মা পায়েল সিদ্ধান্ত বলেন, “বৈদিক যুগে ছেলে ও মেয়ে, দুইজনেই পৈতে পেত। পরবর্তীতে সামাজিক দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে গিয়ে মেয়েদের এই অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছিল।” তিনি আরও যোগ করেন, “মধুপর্ণা ছোট হলেও, পৈতের সঠিক অর্থ ও দীক্ষা সম্পর্কে সে জানে।”
মধুপর্ণার কথা, “আমি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে পড়ছি, তবে সংস্কৃত মন্ত্রে পুজো করতে পারবো। শিখে নেবো। বাড়িতে যজ্ঞ হয়েছে। সব বন্ধুরা এসেছিলো। আমি খুব খুশি”
এছাড়া, সিদ্ধান্ত পরিবারের পুরোহিত সদানন্দ বাগচি বলেন, “ব্রাহ্মণদের ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন করা আবশ্যিক। বৈদিক যুগে নারী ও পুরুষের মধ্যে কোনও ভেদাভেদ ছিল না। প্রত্যেকেই ব্রহ্মজ্ঞান অর্জন করার অধিকারী ছিলেন।”
তবে এই পদক্ষেপের মাধ্যমে সিদ্ধান্ত পরিবার সমাজে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠার গুরুত্বপূর্ণ দৃষ্টান্ত স্থাপন করলেন।