পশ্চিম মেদিনীপুরের চন্দ্রকোনা রোডে (Chandrakona Road ) আজ, রবিবার একটি বড় রেল দুর্ঘটনার হাত থেকে অল্পের জন্য রক্ষা পেয়েছে একটি কয়লা বোঝাই মালগাড়ি। ঘটনাটি ঘটেছে সকাল ৭টা নাগাদ, যখন মালগাড়িটি চন্দ্রকোনা রোড স্টেশন (আদ্রা ডিভিশন) পেরিয়ে মেদিনীপুর স্টেশনের দিকে যাচ্ছিল। স্টেশন ছাড়ার পরপরই মালগাড়ির ২২টি বগি ইঞ্জিন থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে থাকে, আর ইঞ্জিনটি মাত্র পাঁচটি বগি নিয়ে অনেক দূর এগিয়ে যায়। চালক প্রথমে কিছুই বুঝতে না পারলেও পরে বিষয়টি আঁচ করতে পেরে তৎক্ষণাৎ ট্রেনটি থামিয়ে দেন। এই ঘটনায় বড় ধরনের দুর্ঘটনা এড়ানো গেলেও রেল পরিষেবা ব্যাপকভাবে ব্যাহত হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার পর তড়িঘড়ি রেলকর্মী ও কর্মকর্তারা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। প্রায় ৩০ থেকে ৩৫ মিনিটের চেষ্টায় বিচ্ছিন্ন হওয়া ২২টি বগিকে ইঞ্জিনের সঙ্গে পুনরায় যুক্ত করা হয়। এরপর মালগাড়িটি আবার তার গন্তব্যের উদ্দেশে রওনা দেয়। তবে এই সময়ের মধ্যে চন্দ্রকোনা রোড থেকে মেদিনীপুরের দিকে যাওয়ার ডাউন লাইনে রেল পরিষেবা ব্যাহত হয়। দূরপাল্লার এবং লোকাল বহু ট্রেন বিভিন্ন স্টেশনে আটকে পড়ে বা দেরিতে চলতে শুরু করে। যাত্রীদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা দিলেও রেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, চালকের তৎপরতা এবং সময়মতো ব্যবস্থা নেওয়ার কারণে একটি সম্ভাব্য বিপর্যয় এড়ানো সম্ভব হয়েছে।
এই ঘটনা নিয়ে স্থানীয়দের মধ্যে আলোচনা চলছে। একজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, “মালগাড়িটি যখন চন্দ্রকোনা রোড পেরিয়ে গেল, তখন হঠাৎ দেখি বগিগুলো পিছনে পড়ে রয়েছে। ইঞ্জিন অনেক দূর চলে গিয়েছিল। যদি চালক সময়মতো না থামাতেন, তাহলে বড় ক্ষতি হতে পারত।” রেল সূত্রে জানা গেছে, এই দুর্ঘটনার কারণ এখনও তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, কাপলিংয়ে কোনও ত্রুটির কারণে বগিগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তবে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে এই বিষয়ে আনুষ্ঠানিক বক্তব্য জানতে চাওয়া হলে তারা এখনও কোনও স্পষ্ট উত্তর দেয়নি।
এই ঘটনার প্রভাবে চন্দ্রকোনা রোড থেকে মেদিনীপুর রুটে চলাচলকারী যাত্রীবাহী ট্রেনগুলির সময়সূচী ব্যাহত হয়েছে। হাওড়া-মেদিনীপুর লোকাল, রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস এবং অন্যান্য দূরপাল্লার ট্রেনগুলি বিভিন্ন স্টেশনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে। যাত্রীদের মধ্যে কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন, “একটু আগে ট্রেন ছাড়ার কথা ছিল, কিন্তু এখনও দাঁড়িয়ে আছে। কী হয়েছে, কেউ কিছু বলছে না।” রেলওয়ে স্টেশনে ঘোষণার মাধ্যমে যাত্রীদের পরিস্থিতি সম্পর্কে অবহিত করা হলেও, সঠিক সময়সূচী ফিরে আসতে আরও কিছু সময় লাগতে পারে বলে জানা গেছে।
এই ঘটনা ভারতীয় রেলের রক্ষণাবেক্ষণ এবং নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মালগাড়ির কাপলিং এবং অন্যান্য যান্ত্রিক অংশের নিয়মিত পরীক্ষা না করা হলে এমন ঘটনা ঘটতে পারে। তবে চালকের সতর্কতার জন্য এই ঘটনা শুধুমাত্র একটি বিঘ্ন হিসেবে থেকে গেছে, বড় ক্ষতি হয়নি। রেল কর্তৃপক্ষের তরফে এই বিষয়ে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হতে পারে বলে সূত্রের খবর।
চন্দ্রকোনা রোড এলাকার বাসিন্দারা এই ঘটনাকে ‘ভাগ্যের জোরে রক্ষা’ হিসেবে দেখছেন। একজন স্থানীয় ব্যবসায়ী বলেন, “এই লাইনে প্রায়ই মালগাড়ি চলাচল করে। যদি এটা দুর্ঘটনায় রূপ নিত, তাহলে অনেক ক্ষতি হতে পারত।” এই ঘটনা থেকে শিক্ষা নিয়ে ভবিষ্যতে রেলের নিরাপত্তা বাড়ানোর দাবি উঠেছে স্থানীয়দের মধ্যে।