মিলন পণ্ডা, কাঁথি: পূর্ব মেদিনীপুর জেলার কাঁথি শহর ও শহরতলিতে গত কয়েক মাস ধরে একের পর এক ছিনতাইয়ের ঘটনায় এলাকাবাসীর মধ্যে চরম আতঙ্ক ছড়িয়েছিল। বিশেষ করে মহিলাদের টার্গেট করে ‘নকল টাকা কাণ্ড’ নামের এক অভিনব ছিনতাই কৌশলে পরপর বহুজনকে ঠকানো হচ্ছিল। অবশেষে এই চক্রের মূল পান্ডা আলি হোসেন মোল্লা পুলিশের জালে ধরা পড়ল (Arrest)।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আলি হোসেন মোল্লা দক্ষিণ ২৪ পরগনার উস্তি থানার অন্তর্গত নরয়মপুর গ্রামের বাসিন্দা। কাঁথি থানার পুলিশ অফিসার প্রণব বেরার নেতৃত্বে এই বড়সড় সাফল্য অর্জন করেছে কাঁথি থানার পুলিশ।
ছিনতাইয়ের অভিনব কৌশল:
পুলিশ জানিয়েছে, ছিনতাই চক্রের সদস্যরা প্রথমে রাস্তাঘাটে মহিলাদের লক্ষ্য করত। এরপর তারা নকল টাকার বান্ডিল হাতে নিয়ে বলত, ‘‘দিদি, এই টাকা রাস্তা থেকে কুড়িয়ে পেয়েছি, আপনার ব্যাগে রাখুন।’’
যখন মহিলা সেই টাকা ব্যাগে রাখতেন, তখন তাদের বলা হত, ‘‘আপনার গয়নাগুলো খুলে ব্যাগে রাখুন, না হলে সমস্যা হতে পারে।’’
মহিলারা নিরাপত্তার কথা ভেবে গয়না খুলে ব্যাগে রাখার পর, তারা বুঝত, অল্প সময়ের মধ্যেই তাদের গয়নাগুলি উধাও হয়ে গেছে। এইভাবে কাঁথি শহর ও তার আশপাশের এলাকায় একাধিক ছিনতাইয়ের অভিযোগ জমা পড়তে থাকে কাঁথি থানায়। এরপরেই তৎপর হয় পুলিশ।
পুলিশের অভিযানে বড় সাফল্য:
কাঁথি থানার পুলিশ অফিসার প্রণব বেরা নেতৃত্বে ছিনতাইকারীদের খুঁজতে বিশেষ তদন্ত দল গঠন করা হয়। তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে তিনজনকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে। কিন্তু চক্রের মূল পান্ডা আলি হোসেন মোল্লা তখনও পলাতক ছিল।
তদন্ত চলাকালীন পুলিশ জানতে পারে, আলি হোসেন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বাড়ির ছাদ থেকে লাফিয়ে পালিয়ে যায়।
অবশেষে গোপন সূত্রে খবর পেয়ে পুলিশ দক্ষিণ ২৪ পরগণার উস্তি থেকে অভিযুক্তকে গ্রেফতার করে। পুলিশের এই সাফল্যে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে কাঁথি শহরের সাধারণ মানুষ।
পুলিশের বক্তব্য:
কাঁথি থানার টাউন অফিসার প্রণব বেরা বলেন, “তদন্তে নেমে এখন পর্যন্ত চারজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। পুরো চক্রটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে ধৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। এই চক্রে আরও কেউ যুক্ত রয়েছে কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
পুলিশ আরও জানিয়েছে, ধৃতদের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা ইতিমধ্যে দায়ের হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন থানায় তাদের নামে আরও অভিযোগ জমা পড়েছে কিনা তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
সাধারণ মানুষের প্রতিক্রিয়া:
এলাকার বাসিন্দাদের মতে, “বেশ কিছুদিন ধরে কাঁথি শহরে মহিলাদের টার্গেট করে এই ধরনের ছিনতাই চলছিল। এখন মূল পান্ডা গ্রেফতার হওয়ায় অনেকটাই স্বস্তি।”
পরবর্তী পদক্ষেপ:
পুলিশ সূত্রে খবর, আলি হোসেন ও তার দলের সদস্যদের মোবাইল কল রেকর্ড, পূর্ববর্তী অপরাধের তথ্য ও অন্যান্য যোগসূত্র খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া তাদের বিরুদ্ধে আদালতে রিমান্ডের আবেদন জানানো হবে বলে জানা গিয়েছে।