বনগাঁ: বিতর্কের ঝড় উঠেছে বনগাঁ থেকে কৃষ্ণনগর পর্যন্ত। মতুয়া সম্প্রদায়কে নিয়ে তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রর (Mahua Moitra) মন্তব্যের জেরে উত্তপ্ত হয়ে উঠেছে রাজনৈতিক মহল। সম্প্রতি একটি জনসভা থেকে মহুয়া মৈত্র বলেন, “সারা বছর তৃণমূলী, আর ভোটের সময় সনাতনী। এগুলো কী অঙ্ক ভাই? আমরা হাজার টাকা লক্ষ্মীর ভাণ্ডার পেলে, তফশিলি মহিলারা ১২০০ টাকা পান। অথচ এই বুথগুলিতে ১০০টা ভোট গুনলে ৮৫টা বিজেপি, ১৫টা অন্য পার্টি পায়। কাজের সময় মমতা, রাস্তার সময় মমতা। কিন্তু কাঠের মালা পরে সবাই চলে আসেন ভাতা নিতে তখন কী হয়? বাস্তব কথা বলছি আমি, শুনতে খারাপ লাগে।”
এই মন্তব্য ঘিরেই শুরু হয়েছে প্রবল বিতর্ক। ভিডিওটি ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় বিদ্যুতের গতিতে। এরপরেই বনগাঁয় মতুয়া মহাসংঘের লিগাল সেল মহুয়া মৈত্রর বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করে। একই সঙ্গে সাংসদের বিরুদ্ধে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে লিখিত অভিযোগপত্রও পাঠানো হয়েছে।
মতুয়া মহাসংঘের লিগাল সেলের চেয়ারম্যান মুকুল বিশ্বাস জানিয়েছেন, মহুয়া মৈত্র কেবল মতুয়া সম্প্রদায়কে নয়, গোটা হিন্দু সমাজকেই অপমান করেছেন। তিনি আরও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, প্রয়োজনে আদালতের দ্বারস্থ হবেন তাঁরা। অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘের সম্পাদক সুকেশচন্দ্র চৌধুরী সরাসরি আক্রমণ করে বলেন, “মহুয়া মৈত্র হিন্দু ধর্মের কুলাঙ্গার। উনি পদে পদে হিন্দুদের অপমান করেন। আগে আমরা দেখেছি মা কালীকে তিনি মদ এবং মাংসের দেবতা বলেছিলেন। এখন মতুয়াদের অপমান করছেন। ওঁরা জানে হিন্দুদের যত অপমান করা হবে, মুসলিম ভোটব্যাঙ্ক তত এক জায়গায় আসবে।”
এদিকে এই ঘটনার প্রতিবাদে বনগাঁয় রাস্তায় নামে মতুয়া সংগঠনের সমর্থকেরা। মিছিল-মিটিংয়ের মধ্য দিয়ে মহুয়া মৈত্রর মন্তব্যের বিরুদ্ধে ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়। পরিস্থিতি হাতের বাইরে যাওয়ার আগেই মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ দাবি করছেন তাঁরা।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, মতুয়া সম্প্রদায় বরাবরই বাংলার ভোট রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে আসছে। উত্তর ২৪ পরগনা এবং নদিয়ার বিভিন্ন এলাকায় এদের ভোট সংখ্যা যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করতে সক্ষম। বিজেপি বনাম তৃণমূলের লড়াইয়ে মতুয়াদের অবস্থান নির্ধারণ করে বহু আসনের ভবিষ্যৎ। তাই মহুয়া মৈত্রর এই মন্তব্য নিঃসন্দেহে তৃণমূলের অস্বস্তি বাড়াবে বলে মনে করছেন অনেকে।
তৃণমূল সূত্রে অবশ্য দাবি করা হয়েছে, মহুয়া মৈত্র কেবল বাস্তব পরিস্থিতির কথা বলেছেন, এখানে কারও ধর্ম বা সম্প্রদায়কে অপমান করার উদ্দেশ্য ছিল না। তবে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব এখন পর্যন্ত কোনও আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি।
মতুয়ারা আপাতত অপেক্ষা করছেন মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপের দিকে। তাঁদের বক্তব্য, যদি এ বিষয়ে কোনও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়া হয়, তবে বৃহত্তর আন্দোলনের পথে হাঁটবেন তাঁরা।
এই ঘটনার জেরে আগামী দিনে বাংলার রাজনৈতিক সমীকরণে নতুন টানাপোড়েন দেখা দিতে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা। মহুয়া মৈত্রর বিতর্কিত মন্তব্য শুধু তৃণমূলের ভোট রাজনীতিকে প্রভাবিত করবে না, বরং রাজ্যের হিন্দু সমাজের একাংশের মধ্যে ক্ষোভ বাড়াতে পারে। সেই ক্ষোভ বিজেপি কতটা কাজে লাগাতে পারে, এখন সেদিকেই তাকিয়ে রাজনৈতিক মহল।