বাঁকুড়া: ফের বজ্রপাত (Lightning Strikes) কেড়ে নিল প্রাণ। বাঁকুড়া জেলার ইন্দাস ও পাত্রসায়ের থানার অন্তর্গত দুটি পৃথক এলাকা থেকে বাজ পড়ে মৃত্যু হল দুই কৃষকের। মৃতদের নাম রাজু বাগদি (৫৫) ও জয়ন্ত মণ্ডল (৬৩)। তাঁরা মঙ্গলবার মাঠে আমন ধানের চারা রোপণের কাজ করছিলেন। সেই সময় আচমকাই প্রবল শব্দে বাজ পড়ে, এবং ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁদের। এই ঘটনায় শোকের ছায়া নেমেছে গ্রামে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, রাজু ও জয়ন্ত দু’জনেই দিনমজুরের কাজ করেন। বর্ষার মরশুমে চাষাবাদ শুরু হওয়ায় তাঁরা মাঠে কাজ করছিলেন। দুপুরের দিকে হঠাৎ আকাশ কালো করে আসে এবং শুরু হয় বজ্র-সহ বৃষ্টি। সেই সময়েই বাজ পড়ে তাঁদের গায়ে। চাষের কাজ চলাকালীন বজ্রাঘাত হওয়ায় তাঁরা মাঠেই লুটিয়ে পড়েন। ঘটনাস্থলেই তাঁদের মৃত্যু হয় বলে জানা যায়।
ঘটনার খবর পেয়ে তড়িঘড়ি ঘটনাস্থলে পৌঁছায় পুলিশ। সঙ্গে সঙ্গে তাঁদের উদ্ধার করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। কিন্তু চিকিৎসকরা তাঁদের মৃত বলে ঘোষণা করেন। এরপর পুলিশ মৃতদেহ দুটি ময়নাতদন্তের জন্য বিষ্ণুপুর জেলা হাসপাতালে পাঠিয়েছে।
এই ঘটনায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে স্থানীয় বাসিন্দাদের মধ্যে। পরিবার সূত্রে জানা গেছে, রাজু বাগদির পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তাঁর মৃত্যুতে পরিবারে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। একইভাবে জয়ন্ত মণ্ডলের মৃত্যুতে শোকাহত তাঁর পরিবার ও গ্রামবাসীরা।
চলতি বর্ষার মরশুমে রাজ্যে বজ্রাঘাতে মৃত্যুর ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বাড়ছে। গত ২৪ জুলাই রাজ্যের বিভিন্ন জেলায় বজ্রাঘাতে প্রাণ হারিয়েছিলেন ১৮ জন, যার মধ্যে ৯ জনই ছিলেন বাঁকুড়ার বাসিন্দা। তার রেশ কাটতে না কাটতেই ফের এই মৃত্যু নতুন করে চিন্তা বাড়াচ্ছে প্রশাসনের।
বিশেষজ্ঞদের মতে, বজ্রপাতের সময় কিছু সতর্কতা অবলম্বন করলে এই বিপদ এড়ানো সম্ভব। যেমন:
বজ্রপাতের সময় কখনোই খোলা মাঠে থাকা উচিত নয়। যদি একান্ত থাকতে হয়, তাহলে নিচু হয়ে বসে পড়তে হবে, তবে কখনও মাটিতে শুয়ে পড়া উচিত নয়।
কংক্রিট ছাদযুক্ত স্থানে দ্রুত আশ্রয় নিতে হবে।
গাড়ির ভিতরে থাকলে জানালা বন্ধ রাখতে হবে।
কোনো বড় গাছের নীচে দাঁড়ানো বিপজ্জনক।
খেয়াল রাখতে হবে, বর্ষাকালে বৈদ্যুতিক খুঁটি বা ছেঁড়া তার থেকে যথাসম্ভব দূরে থাকতে হবে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই গ্রামের মানুষকে সতর্ক করা হচ্ছে এবং স্থানীয় পঞ্চায়েত ও বিডিও অফিস থেকে সতর্কতামূলক প্রচার শুরু হয়েছে। আবহাওয়া দফতরের তরফেও বজ্রবিদ্যুৎ সহ বৃষ্টির সম্ভাবনার বিষয়ে আগাম সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে।
প্রশাসনের তরফ থেকে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলিকে সরকারি সাহায্যের আশ্বাস দেওয়া হয়েছে। যদিও স্থানীয় বাসিন্দারা দাবি করছেন, শুধু আর্থিক সাহায্য নয়, বজ্রপাত থেকে রক্ষা পেতে স্থায়ী পদক্ষেপ প্রয়োজন।