ফাঁসির বদলে যাবজ্জীবন, মানবিকতার বার্তা কলকাতা হাইকোর্টের জলপাইগুড়ি বেঞ্চ

“বিচারপতিরা কখনও রক্তপিপাসু হতে পারেন না”—এই বার্তা দিয়েই খুনের মামলায় অভিযুক্ত আফতাব আলমের মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করল কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High…

Jobless Teachers Served Police Notices Can Move Calcutta High Court for Cancellation

“বিচারপতিরা কখনও রক্তপিপাসু হতে পারেন না”—এই বার্তা দিয়েই খুনের মামলায় অভিযুক্ত আফতাব আলমের মৃত্যুদণ্ড বাতিল করে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের সাজা ঘোষণা করল কলকাতা হাইকোর্টের (Calcutta High Court) জলপাইগুড়ি সার্কিট বেঞ্চ।

আদালতের পর্যবেক্ষণে উঠে এসেছে, আধুনিক বিচারব্যবস্থার মূলভিত্তি হওয়া উচিত প্রতিশোধ নয়, বরং অপরাধীর সংস্কারের সম্ভাবনা বিচার করা।

   

ঘটনাটি ২০২৩ সালের ২৮ জুলাইয়ের। জলপাইগুড়ির ধূপগুড়িতে মামার বাড়িতে পাঁচ সহযোগীকে নিয়ে ডাকাতি করতে গিয়ে মামাকে খুন করে আফতাব আলম। স্থানীয় দায়রা আদালত তাঁকে মৃত্যুদণ্ডে দণ্ডিত করে। তবে হাইকোর্ট সেই রায় খারিজ করে জানায়, এই অপরাধ ‘রেয়ারেস্ট অফ দ্য রেয়ার’ গোত্রে পড়ে না।

রায় ঘোষনার সময় বিচারপতি ভট্টাচার্য বলেন, “শাস্তির তিনটি মূল স্তম্ভ— প্রতিশোধ, প্রতিবিধান এবং সংস্কার। আজকের দিনে প্রতিশোধের জায়গা নিচ্ছে সংস্কারের চিন্তাভাবনা। কারাগারের নাম ‘প্রিজন’ থেকে পরিবর্তন করে ‘করেকশনাল হোম’ করা হয়েছে একটি দৃষ্টিভঙ্গির বদলের ইঙ্গিতস্বরূপ।”

তিনি আরও বলেন, “যদি কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়, সেই জীবন আর ফেরানো যায় না। ভবিষ্যতে যদি নতুন কোনও প্রমাণ উঠে আসে, তদন্ত পুনরায় খোলা হলেও তা প্রয়োগ করার উপায় থাকে না। ফলে মৃত্যুদণ্ড একবার কার্যকর হলে তা চূড়ান্ত এবং অপরিবর্তনীয়।”

আলমের আইনজীবী দাবি করেন, ঘটনাটি তাৎক্ষণিক, পূর্বপরিকল্পিত নয়। তবে রাজ্যের অতিরিক্ত পাবলিক প্রসিকিউটর আলমের দোষ প্রমাণিত হওয়ার যুক্তি দিয়ে মৃত্যুদণ্ডের পক্ষে সওয়াল করেন।

Advertisements

বিচারপতিরা জানান, আলমের বয়স কুড়ির ঘরে এবং তার বিরুদ্ধে এমন কিছু তথ্য নেই যা প্রমাণ করে যে সে সংশোধনের ঊর্ধ্বে। উপরন্তু, দীর্ঘদিন মামার বাড়ি থেকে বিচ্ছিন্নভাবে দিল্লিতে বসবাস করছিলেন বলেই বিশ্বাসভঙ্গের প্রসঙ্গও গুরুত্ব পায়নি।

রায়ে তুলে ধরা হয় ১৯৮০ সালের সুপ্রিম কোর্টের ‘বচন সিং বনাম পাঞ্জাব সরকার’ মামলার সিদ্ধান্ত, যেখানে বলা হয়েছিল, “বিচারপতিরা রক্তপিপাসু হতে পারেন না।” সেই নীতির উপর ভিত্তি করেই বর্তমান রায়টি সংস্কারমূলক বিচারবোধকে গুরুত্ব দিয়েছে।

আফতাব আলমকে যাবজ্জীবন সাজা ভোগ করতে হবে। তবে কোনও ব্যতিক্রমী পরিস্থিতি না ঘটলে ২০ বছরের আগে মুক্তির সুযোগ থাকবে না।

এই রায় ঘোষণার সময় প্রাসঙ্গিক হয়ে উঠেছে আরেকটি বিতর্কিত খুনের ঘটনা— ২০২৪ সালের ৯ অগস্ট ‘আরজি কর কাণ্ড’। সেদিন মহিলা চিকিৎসক খুনের ঘটনায় দোষী সঞ্জয় রায়ের ফাঁসির দাবি উঠেছিল বিভিন্ন মহলে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সেই দাবিকে সমর্থন করেন। ঠিক তার এক বছর পর, আবারও ৯ অগস্টের প্রাক্কালে হাইকোর্টের এই রায় এবং তার অন্তর্নিহিত বার্তা বিচারব্যবস্থার মানবিক দৃষ্টিভঙ্গিকেই নতুন করে সামনে আনল।