মোরাম বিবাদে খুন, ১১ বছর পর ৬ জনের যাবজ্জীবন

মিলন পণ্ডা, কাঁথি: রাস্তায় মোরাম ফেলাকে কেন্দ্র করে বিবাদের জেরে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগে ১১ বছর পর অবশেষে ন্যায়বিচার মিলল। এই নৃশংস খুনের…

মোরাম বিবাদে খুন, ১১ বছর পর ৬ জনের যাবজ্জীবন

মিলন পণ্ডা, কাঁথি: রাস্তায় মোরাম ফেলাকে কেন্দ্র করে বিবাদের জেরে এক ব্যক্তিকে পিটিয়ে খুন করার অভিযোগে ১১ বছর পর অবশেষে ন্যায়বিচার মিলল। এই নৃশংস খুনের ঘটনায় ছয় অভিযুক্তকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের (Life Imprisonment) নির্দেশ দিল পূর্ব মেদিনীপুরের কাঁথি মহকুমা আদালত।

২০১৪ সালের ৩০ অক্টোবর, পটাশপুর থানার অন্তর্গত গোয়ালদা পাটনা গ্রামে এক ভরদুপুরে মোরাম ফেলা নিয়ে প্রতিবেশীদের সঙ্গে শুরু হয় বচসা। সেই বচসা পরিণত হয় মারাত্মক সংঘর্ষে। প্রতিবেশী শচীন্দ্রনাথ মাইতি ও তাঁর পরিবারের উপর কাঠের বাটাম এবং লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালায় ছয়জন প্রতিবেশী। গুরুতর আহত হন শচীন্দ্রনাথ মাইতি, তাঁর স্ত্রী ও দুই পুত্র। তাঁদের আশঙ্কাজনক অবস্থায় এগরা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।

   

ঘটনার পরদিন অর্থাৎ ৩১ অক্টোবর এগরা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় শচীন্দ্রনাথ মাইতির। ঘটনার পরেই নিহতের পরিবার পটাশপুর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ তৎপর হয়ে ছয় অভিযুক্ত—নিতাই মাইতি, তপন মাইতি, স্বপন মাইতি, রাজকুমার মাইতি, দীপালি মাইতি ও পূর্ণিমা মাইতিকে গ্রেফতার করে। পরে তারা জামিনে মুক্তি পায়। মামলা চলতে থাকে দীর্ঘ ১১ বছর ধরে।

অবশেষে সোমবার (২৮ জুলাই, ২০২৫) কাঁথি মহকুমা ফাস্ট ট্র্যাক দ্বিতীয় আদালতের বিচারক নুরুজামল আলি ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৪৭, ১৪৮, ৩০৭, ৩০২, ৫০৬ ও ৩৪ ধারায় অভিযুক্তদের দোষী সাব্যস্ত করেন। মঙ্গলবার সাজা ঘোষণা করে আদালত।

আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী সাজা:
ধারা ১৪৭: ৬ মাস সশ্রম কারাদণ্ড

ধারা ১৪৮: ১ বছর সশ্রম কারাদণ্ড

ধারা ৩০৭: ৭ বছর সশ্রম কারাদণ্ড ও ২ হাজার টাকা জরিমানা (অনাদায়ে আরও ২ মাস জেল)

Advertisements

ধারা ৩০২ ও ৩৪: যাবজ্জীবন সশ্রম কারাদণ্ড, ৫ হাজার টাকা জরিমানা (অনাদায়ে আরও ৫ মাস জেল)

ধারা ৫০৬: ৩ বছর সশ্রম কারাদণ্ড

সরকারি পক্ষের আইনজীবী বেণীমাধব বেরা জানান, “এই মামলায় মোট ২১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করেন আদালত। দীর্ঘ ১১ বছর পর শেষমেশ সুবিচার পেলেন নিহতের পরিবার।” মামলায় সহকারী সরকারি কৌঁসুলি (এডিশনাল পিপি) মঞ্জুর রহমান বেণীমাধব বেরা’কে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।

শচীন্দ্রনাথ মাইতির পরিবারের এক সদস্য বলেন, “আমরা এতদিন ধরে এই বিচারের অপেক্ষায় ছিলাম। আজ মনে হচ্ছে আত্মার শান্তি হবে। যাঁরা এমন পাশবিক আচরণ করেছিল, তাঁদের যথোপযুক্ত শাস্তি হয়েছে।”

এই ঘটনার রায় পূর্ব মেদিনীপুরে এক গুরুত্বপূর্ণ নজির স্থাপন করল যেখানে ন্যায়বিচার পাওয়ার জন্য দীর্ঘ লড়াই করে শেষমেশ ন্যায় মিলেছে।