আসন্ন বিধান সভা নির্বাচনের আগে বামেদের (left) শেষ স্ট্রাটেজি কি তবে মুসলিম তোষণ? কিছুদিন আগেও বামেরা অপারেশন সিঁদুরে ক্ষতিগ্রস্থ পাকিস্তানের সাধারণ মানুষের দুঃখ কষ্টে শরীক হয়ে পথে নেমেছিল। এবার ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি (মার্কসবাদী) বা সিপিআই(এম) শনিবার (left) অভিযোগ করেছে যে, বাংলাভাষী মুসলমানদের লক্ষ্য করে হয়রানি করা হচ্ছে।
দলটির পলিটব্যুরো এক বিবৃতিতে দাবি করেছে যে, সন্দেহভাজন বাংলাদেশি নাগরিকদের “অমানবিকভাবে পুশ-ব্যাক ও নির্বাসন” দেওয়া হচ্ছে। তারা সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে, অবৈধভাবে দেশে প্রবেশকারীদের সঙ্গে প্রতিষ্ঠিত আইনি পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
সিপিআই(এম)-এর বিবৃতি (left)
সিপিআই(এম)-এর (left) পলিটব্যুরোর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, “আমরা সন্দেহভাজন বাংলাদেশি নাগরিকদের অমানবিক পুশ-ব্যাক ও নির্বাসনের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি।” তারা আরও বলেছে, “যারা অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করেছে, তাদের সঙ্গে সুনির্দিষ্ট আইনি পদ্ধতি অনুসরণ করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।” বামেরা অভিযোগ করেছে যে, বাংলাভাষী মুসলমানদের বিনা প্রমাণে সন্দেহভাজন হিসেবে চিহ্নিত করা হচ্ছে, যা মানবাধিকার লঙ্ঘনের সমতুল্য।
বিবৃতিতে সিপিআই(এম) (left) সরকারের কাছে স্পষ্ট প্রশ্ন তুলেছে যে, কেন সঠিক যাচাই-বাছাই ছাড়াই নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হচ্ছে। তারা বলেছে, “এই ধরনের পদক্ষেপ শুধুমাত্র সামাজিক বিভেদ সৃষ্টি করে এবং সম্প্রদায়ের মধ্যে ভয় ও অস্থিরতা ছড়ায়।” দলটি জোর দিয়ে বলেছে, নাগরিকত্ব বা অবৈধ অভিবাসনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে স্বচ্ছ ও ন্যায়সঙ্গত প্রক্রিয়া অনুসরণ করা অত্যন্ত জরুরি।
অভিযোগের পটভূমি
সাম্প্রতিক সময়ে পশ্চিমবঙ্গ, আসাম এবং অন্যান্য সীমান্তবর্তী রাজ্যে অবৈধ অভিবাসনের অভিযোগে বাংলাভাষী মুসলমানদের লক্ষ্য করে বিভিন্ন অভিযান চালানো হচ্ছে। সিপিআই(এম) (left) দাবি করেছে, এই অভিযানগুলোতে প্রায়ই সঠিক প্রমাণ বা আইনি প্রক্রিয়া মানা হচ্ছে না। ফলে, অনেক ভারতীয় নাগরিক, যারা বাংলাভাষী মুসলমান, তারাও হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
দলটি বিশেষ করে আসামে নাগরিকত্ব নির্ধারণের প্রক্রিয়া এবং ন্যাশনাল রেজিস্টার অফ সিটিজেনস (এনআরসি)-এর বাস্তবায়ন নিয়ে সমালোচনা করেছে। তারা বলেছে, এনআরসি-র মতো প্রক্রিয়ায় অনেক বৈধ নাগরিকের নাম বাদ পড়ে যাওয়ায় সম্প্রদায়ের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এছাড়া, সীমান্ত এলাকায় পুশ-ব্যাক নীতির অধীনে সন্দেহভাজন ব্যক্তিদের জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর ঘটনাও বাড়ছে, যা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইনের লঙ্ঘন হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে।
আইনি পদ্ধতির উপর জোর
সিপিআই(এম) (left) তাদের বিবৃতিতে বলেছে, অবৈধ অভিবাসন একটি গুরুতর বিষয়, তবে এর সমাধান হতে হবে আইনের শাসন মেনে। তারা বলেছে, “যারা অবৈধভাবে দেশে প্রবেশ করেছে, তাদের শনাক্ত করতে হলে সঠিক প্রমাণ এবং ন্যায়সঙ্গত বিচার প্রক্রিয়া প্রয়োজন।” দলটি সরকারের কাছে দাবি জানিয়েছে যে, পুশ-ব্যাক বা নির্বাসনের মতো পদক্ষেপের আগে ব্যক্তির নাগরিকত্ব যাচাইয়ের জন্য স্বচ্ছ প্রক্রিয়া অনুসরণ করা হোক।
তারা আরও বলেছে, ভারত আন্তর্জাতিক শরণার্থী আইনের স্বাক্ষরকারী না হলেও, মানবাধিকার এবং ন্যায়বিচারের প্রতি দেশের দায়বদ্ধতা রয়েছে। জোরপূর্বক নির্বাসন বা পুশ-ব্যাক নীতি এই দায়বদ্ধতার পরিপন্থী বলে দলটি মনে করে।
রাজনৈতিক প্রতিক্রিয়া
সিপিআই(এম)-এর (left) এই বিবৃতি পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে তীব্র আলোচনার জন্ম দিয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেস এবং বিজেপি উভয়ই এই বিষয়ে ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান নিয়েছে। তৃণমূলের একাংশ মনে করে, সিপিআই(এম) এই বিষয়টিকে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করছে। অন্যদিকে, বিজেপি দাবি করেছে, অবৈধ অভিবাসনের বিরুদ্ধে তাদের কঠোর নীতি দেশের নিরাপত্তার জন্য জরুরি।
সিপিআই(এম) (left) নেতা মোহাম্মদ সেলিম বলেন, “একটি নির্দিষ্ট সম্প্রদায়কে টার্গেট করা হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আমরা চাই, আইনি প্রক্রিয়া মেনে সঠিক তদন্ত হোক।” তিনি আরও বলেন, এই ধরনের পদক্ষেপ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারে এবং সীমান্তবর্তী এলাকায় অস্থিরতা সৃষ্টি করতে পারে।
জনগণের মধ্যে প্রভাব
বাংলাভাষী মুসলমান (left)সম্প্রদায়ের মধ্যে এই অভিযানগুলো নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ, মালদা এবং উত্তর দিনাজপুরের মতো জেলাগুলোতে বাংলাভাষী মুসলমানরা ভয় ও অনিশ্চয়তার মধ্যে রয়েছেন। অনেকেই বলছেন, তাদের বৈধ নাগরিকত্বের নথি থাকলেও তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন।
একজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, “আমরা এখানে জন্মেছি, বড় হয়েছি, কিন্তু বারবার আমাদের নাগরিকত্ব প্রমাণ করতে হচ্ছে। এটা অত্যন্ত অপমানজনক।” সিপিআই(এম) এই ধরনের অভিযোগের প্রতি সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে এবং সঠিক তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
বৃদ্ধি পাবে নৌসেনার শক্তি, ৪৪,০০০ কোটি টাকা ব্যয়ে ১২টি MCMV কিনবে ভারত
আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপট
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলোও ভারতের পুশ-ব্যাক নীতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। তারা বলেছে, এই ধরনের পদক্ষেপ শরণার্থী এবং অভিবাসীদের জীবনকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে। সিপিআই(এম) তাদের বিবৃতিতে এই বিষয়টি উল্লেখ করে বলেছে, ভারতের উচিত আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানদণ্ড মেনে চলা।
সরকারের প্রতিক্রিয়া
সরকার এখনও সিপিআই(এম)-এর এই বিবৃতির বিষয়ে আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া জানায়নি। তবে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র জানিয়েছে, অবৈধ অভিবাসন রোধে সরকার কঠোর পদক্ষেপ নিচ্ছে, তবে এটি আইনের মধ্যে থেকেই করা হচ্ছে। তারা দাবি করেছে, সীমান্ত নিরাপত্তা এবং জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করাই তাদের প্রধান লক্ষ্য।
সিপিআই(এম)-এর (left) এই বিবৃতি ভারতের অভিবাসন নীতি এবং নাগরিকত্ব যাচাইয়ের প্রক্রিয়া নিয়ে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। বাংলাভাষী মুসলমানদের লক্ষ্য করে অভিযানের বিষয়টি রাজনৈতিক এবং সামাজিকভাবে স্পর্শকাতর। সরকার এই বিষয়ে কী পদক্ষেপ নেয় এবং কীভাবে আইনি প্রক্রিয়া মেনে তদন্ত পরিচালনা করে, তা আগামী দিনে গুরুত্বপূর্ণ হবে। সিপিআই(এম) জানিয়েছে, তারা এই বিষয়ে সরকারের পদক্ষেপের উপর নজর রাখবে এবং প্রয়োজনে জনগণের পাশে থাকবে।