শেষ হয়েছে তৃণমূলের শহীদ দিবস (Shahid Dibas)। তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষের হিসেবে অনুযায়ী শহীদ দিবসে জন সমুদ্রে উপস্থিত ছিলেন ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষ। সেই ভিড় এখনো পাতলা হয়নি। এর মধ্যেই দিল্লিতে বাদল অধিবেশনের শেষে মুখোমুখি প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং বিখ্যাত আইনজীবি এবং তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দোপাধ্যায়।
অভিজিৎ বলেছেন মমতা প্রত্যেক বছরই এই নাটক করেন। এতো লোক দেখে ঘাবড়াবার কিছু নেই। বাস হাইজ্যাক করে ডিম ভাতের লোভ দেখিয়ে এতো লোক জোগাড় করা হয়েছে। তিনি আরও দাবি করেন বেশিরভাগ মানুষ এসেছেন খাওয়ার লোভে কলকাতা বেড়াতে।
পরিবর্তে কল্যাণ প্রাক্তন বিচারপতিকে ‘সিপিএমের মাল’ বলে কটাক্ষ করে বলেছেন অভিজিৎ রাজনীতির কিছু বোঝেন না। কল্যাণ আরো বলেন অভিজিৎ কি জানেন রাজনীতি সম্পর্কে। আমরা ছিলাম যুব কংগ্রেস মমতার অনুগামী। আমরা মার খেয়েছি। আগে উনি কার্ল মার্কসের ছবি দুলিয়ে ঘুরতেন আর উনি এখন বিজেপিতে গিয়ে সাধু হয়েছেন।
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের বিস্ফোরক মন্তব্য
প্রাক্তন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় শহীদ দিবসের জনসমাবেশ নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে তীব্র কটাক্ষ করেছেন। তিনি বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতি বছরই এই নাটক করেন। এতো লোক দেখে ঘাবড়ানোর কিছু নেই। বাস হাইজ্যাক করে, ডিম-ভাতের লোভ দেখিয়ে এতো মানুষ জোগাড় করা হয়েছে।” তিনি আরও দাবি করেন, “এই সমাবেশে আসা বেশিরভাগ মানুষ কলকাতা বেড়াতে এসেছেন খাওয়ার লোভে।
এটা কোনো রাজনৈতিক সমর্থন নয়।” এই মন্তব্যে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় তৃণমূলের শহীদ দিবসের তাৎপর্য এবং জনসমর্থন নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি তৃণমূলের এই সমাবেশকে একটি ‘প্রহসন’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে বলেন, “এটা মানুষের স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন নয়, বরং সরকারি সুযোগ-সুবিধার প্রলোভন।”
কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা আক্রমণ
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের এই মন্তব্যের তীব্র জবাব দিয়েছেন তৃণমূল সাংসদ কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি প্রাক্তন বিচারপতিকে ‘সিপিএমের মাল’ বলে কটাক্ষ করে বলেন, “অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় রাজনীতি সম্পর্কে কী জানেন? আমরা যুব কংগ্রেসের সঙ্গে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে থেকে লড়াই করেছি।
আমরা মার খেয়েছি, রক্ত ঝরিয়েছি।” কল্যাণ আরও বলেন, “অভিজিৎ আগে কার্ল মার্কসের ছবি দুলিয়ে ঘুরতেন, আর এখন বিজেপিতে গিয়ে সাধু হয়েছেন। তিনি কি মনে করেন, এই ধরনের কথা বলে তৃণমূলের জনসমর্থনকে ছোট করতে পারবেন?” তিনি আরও বলেন অভিজিৎকে কে চিনত বিচারপতি হয়ে বিজেপিতে আসার পরে মানুষ চিনেছে। তিনি দাবি করেন, শহীদ দিবসে ধর্মতলার জনসমুদ্র তৃণমূলের প্রতি জনগণের অটুট সমর্থনের প্রমাণ।
একুশের মঞ্চ থেকে ছাব্বিশে মোদীর ‘পরিবর্তন’ ডাকে একুশের মঞ্চে পাল্টা জবাব মমতার
শহীদ দিবসের তাৎপর্য
২১ জুলাই পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে একটি ঐতিহাসিক দিন। ১৯৯৩ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে যুব কংগ্রেসের একটি শান্তিপূর্ণ মিছিলে পুলিশের গুলিতে ১৩ জন শহীদ হন। এই ঘটনা তৃণমূল কংগ্রেসের জন্মের পথ প্রশস্ত করে। প্রতি বছর এই দিনে ধর্মতলায় লক্ষাধিক মানুষ সমবেত হন শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে এবং তৃণমূলের নেতৃত্বের প্রতি তাদের সমর্থন প্রকাশ করতে।
কুনাল ঘোষের দাবি অনুযায়ী, এ বছরের সমাবেশে ২০ লক্ষেরও বেশি মানুষের উপস্থিতি তৃণমূলের জনপ্রিয়তা এবং জনগণের সঙ্গে দলের গভীর সংযোগের প্রমাণ। তিনি বলেন, “এই জনসমুদ্র বিজেপির মতো বিরোধী দলগুলোর জন্য একটি জবাব। বাংলার মানুষ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাশে রয়েছে।”
অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের মন্তব্য তৃণমূলের জনসমর্থন নিয়ে প্রশ্ন তুললেও, কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাল্টা আক্রমণে তৃণমূলের ঐতিহাসিক লড়াই এবং শহীদ দিবসের তাৎপর্যকে সামনে আনা হয়েছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই তরজা তৃণমূল এবং বিজেপির সংঘাতকে আরও তীব্র করবে।
শহীদ দিবসের জনসমুদ্রের পর দিল্লিতে অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় এবং কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের মধ্যে এই বাকযুদ্ধ পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন উত্তেজনা সৃষ্টি করেছে। তৃণমূলের শহীদ দিবসের সমাবেশকে কেন্দ্র করে একদিকে দলের জনসমর্থনের প্রদর্শন হয়েছে, অন্যদিকে বিজেপির পক্ষ থেকে এটিকে ছোট করার প্রচেষ্টা রাজনৈতিক সংঘাতকে আরও জোরদার করেছে।
আগামী দিনে এই তরজা কীভাবে রাজনৈতিক সমীকরণকে প্রভাবিত করে, তা দেখার বিষয়। তবে শহীদ দিবসের এই জনসমুদ্র তৃণমূলের প্রতি বাংলার মানুষের সমর্থনের একটি শক্তিশালী প্রমাণ হিসেবে রয়ে গেছে।