অয়ন দে, কালিম্পং: পাহাড় মানেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমি, কিন্তু বর্ষা এলেই সেই পাহাড় রূপ নেয় বিপদের উৎসে। ফের সেই দৃশ্যের পুনরাবৃত্তি কালিম্পং জেলার লিখুভির (Likhu Bhir) এলাকায়। বুধবার রাত থেকে লাগাতার ভারী বৃষ্টির জেরে ধস (Landslide) নামতে শুরু করেছে পাহাড়ি রাস্তায়। বড় বড় বোল্ডার গড়িয়ে এসে ভেঙে দিয়েছে মেল্লি (Melli)–কিরনে (Kirney) রোডের একাধিক গুরুত্বপূর্ণ অংশ। যার ফলে ভয়াবহ সমস্যার মুখে পড়েছে সাধারণ মানুষ ও পর্যটকরা।
উল্লেখযোগ্যভাবে, এই রাস্তাটিই ভারতের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ জাতীয় সড়ক—ন্যাশনাল হাইওয়ে ১০ (NH-10)। এটি সিকিম এবং উত্তরবঙ্গের মধ্যে মূল যোগাযোগের সেতুবন্ধন। ফলে এই রাস্তার ক্ষতি শুধু স্থানীয়দের নয়, সিকিমের অর্থনীতি, পর্যটন এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য পরিবহণের উপর বিরাট প্রভাব ফেলছে।
জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, মেল্লি–কিরনে রুটে আপাতত ভারী যান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ছোট গাড়িগুলিকে সতর্কতার সঙ্গে যাতায়াত করার অনুমতি দেওয়া হচ্ছে। তবে আবহাওয়া আরও খারাপ হলে পুরো রাস্তাটিই বন্ধ হয়ে যেতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
পাহাড়ি জেলা কালিম্পংয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় ১০৪.৬ মিমি বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে, যা এই মৌসুমের মধ্যে অন্যতম সর্বোচ্চ। এমনিতেই বর্ষা শুরুর দিকেই এই পরিমাণ বৃষ্টি পাহাড়ি অঞ্চলে বড় বিপদের ইঙ্গিত বহন করে। আবহাওয়া দপ্তরের পূর্বাভাস অনুযায়ী, আজ ও আগামীকাল কালিম্পং, লাভা, গোরুবাথান, ও রেশপসহ আশপাশের অঞ্চলে ভারী থেকে অতি ভারী বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে।
এই রাস্তাটি শুধুমাত্র পর্যটনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ নয়, বরং এই পথ ধরেই রেশন, জ্বালানি, ওষুধ, সবজি ইত্যাদি একাধিক নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পরিবাহিত হয় সিকিমে। ফলে রাস্তাটি ক্ষতিগ্রস্ত হলে প্রভাব পড়ে হাজার হাজার মানুষের জীবনে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ বলছেন, “প্রতি বছর বর্ষা এলেই ধস নামছে। আমরা রাস্তায় চলতে ভয় পাচ্ছি। স্কুলে যাওয়া, বাজার করা, চিকিৎসা—সবই অনিশ্চিত হয়ে যায়।”
বারবার ধস নামা ও রাস্তার ক্ষতির পেছনে প্রশাসনিক গাফিলতির অভিযোগ তুলছেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, পাহাড়ি রাস্তাগুলির যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণ ও ড্রেনেজ ব্যবস্থা না থাকার কারণেই প্রতি বর্ষায় একই পরিস্থিতি তৈরি হচ্ছে। NH-10-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা প্রতি বছর ধসের কবলে পড়লে তা কেন্দ্রীয় সরকারের নজরদারির অভাবকেও নির্দেশ করে।
কালিম্পং জেলা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়েছে, বিপর্যয় মোকাবিলা দফতরের একাধিক টিম ঘটনাস্থলের কাছে প্রস্তুত রয়েছে। রাস্তা পরিষ্কারের জন্য প্রাথমিকভাবে বুলডোজার ও কর্মী মোতায়েন করা হয়েছে। পাশাপাশি, পর্যটকদের উচ্চ সতর্কবার্তা জারি করা হয়েছে এবং স্থানীয়দেরও বাইরে বেরোতে নিরুৎসাহিত করা হয়েছে।
লিখুভির ও মেল্লি–কিরনে রোডের এই ধস ফের চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল—পাহাড়ে অবকাঠামো উন্নয়নের নামে যা কিছু হচ্ছে, তা খুবই অস্থায়ী ও অপরিকল্পিত। প্রতি বছর বর্ষায় এনএইচ-১০-এর বন্ধ হয়ে যাওয়া যেন নিয়মে পরিণত হয়েছে। এখন প্রশ্ন একটাই—এই সমস্যার কি কোনও দীর্ঘস্থায়ী সমাধান আদৌ আছে?