পরিচালক বিবেক রঞ্জন অগ্নিহোত্রীর আসন্ন সিনেমা ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ নিয়ে পশ্চিমবঙ্গে নতুন বিতর্কের সূচনা হয়েছে (Kunal)। স্বাধীনতা দিবসে কলকাতায় এই সিনেমার ট্রেলার মুক্তি অনুষ্ঠানের পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু শেষ মুহূর্তে তা বাতিল হয়ে যায়। শনিবার অবশেষে এই অনুষ্ঠানের জন্য কলকাতা আসেন পরিচালক সহ বাকি শিল্পীরা।
সেখানেই পরিকল্পনা করে এই অনুষ্ঠান ভেস্তে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ পরিচালকের। কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে এই অনুষ্ঠান বানচাল করার অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার পর তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ পরিচালক বিবেক অগ্নিহোত্রীর বিরুদ্ধে তীব্র আক্রমণ শানিয়েছেন।
তিনি প্রশ্ন তুলে বলেছেন, “বিবেক অগ্নিহোত্রীর সাহস থাকলে গুজরাট ফাইলস করে দেখাক। গোধরা কাণ্ড, বিলকিস বানো কাণ্ড নিয়ে ছবি বানাক। সাহস থাকলে উত্তরপ্রদেশ ফাইলস করুন।” কুণালের অভিযোগ, বিবেক তাঁর সিনেমার মাধ্যমে রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করছেন। এই ঘটনায় কলকাতার রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্ক ছড়িয়েছে।
দ্য বেঙ্গল ফাইলস সিনেমার ট্রেলার মুক্তি অনুষ্ঠান কলকাতার একটি প্রথাগত থিয়েটার চেইনে হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ১৪ আগস্ট, অনুষ্ঠানের একদিন আগে, থিয়েটার কর্তৃপক্ষ এটি বাতিল করে দেয়। বিবেক অগ্নিহোত্রী, যিনি বর্তমানে আমেরিকায় সিনেমার প্রচারে ব্যস্ত, এক্স প্ল্যাটফর্মে একটি ভিডিও বার্তায় দাবি করেছেন যে, রাজনৈতিক চাপের কারণে এই অনুষ্ঠান বাতিল করা হয়েছে।
তিনি বলেন, “আমরা সমস্ত অনুমতি নিয়েছিলাম, আমাদের দল কলকাতায় প্রস্তুত ছিল, কিন্তু হঠাৎ এই সিদ্ধান্ত। কে আমাদের কণ্ঠস্বর দমন করতে চায়?” তিনি আরও জানান, অনুষ্ঠানের জন্য ব্যবহৃত জিনিসপত্রের ক্ষতি করার অভিযোগও উঠেছে, যা তিনি তৃণমূলের দিকে ইঙ্গিত করে উল্লেখ করেছেন।
তৃণমূল মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বিবেক অগ্নিহোত্রীর বিরুদ্ধে সরব হয়ে বলেছেন, “বিবেক অগ্নিহোত্রী যদি সত্যিই সত্য উন্মোচন করতে চান, তবে তাঁর গুজরাট ফাইলস বানানো উচিত। গোধরা কাণ্ড, বিলকিস বানোর ঘটনা নিয়ে ছবি বানান। সাহস থাকলে উত্তরপ্রদেশ ফাইলস করুন।” তিনি অভিযোগ করেছেন যে, বিবেকের সিনেমাগুলো রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং এগুলোর মাধ্যমে সাম্প্রদায়িক বিভাজন সৃষ্টির চেষ্টা করা হচ্ছে।
কুনালের এই মন্তব্য ‘দ্য বেঙ্গল ফাইলস’ নিয়ে বিতর্ককে আরও উসকে দিয়েছে। তিনি দাবি করেছেন, বিবেকের সিনেমা পশ্চিমবঙ্গের সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারে, বিশেষ করে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে।দ্য বেঙ্গল ফাইলস এবং রাজনৈতিক বিতর্কদ্য বেঙ্গল ফাইলস বিবেক অগ্নিহোত্রীর ‘ফাইলস ট্রিলজি’র তৃতীয় কিস্তি, যার আগের দুটি ছিল দ্য কাশ্মীর ফাইলস এবং দ্য তাশকেন্ট ফাইলস।
এই সিনেমাটি ১৯৪৬ সালের ডিরেক্ট অ্যাকশন ডে, কলকাতা হত্যাকাণ্ড এবং নোয়াখালি দাঙ্গার মতো ঐতিহাসিক ঘটনাগুলোর উপর আলোকপাত করবে। তৃণমূল অভিযোগ করেছে যে, সিনেমাটির ট্রেলারে মা কালীর মূর্তি পোড়ানোর একটি দৃশ্য রয়েছে, যা বাংলার সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি অপমানজনক।
এই দৃশ্য নিয়ে তৃণমূলের সদস্যরা মুর্শিদাবাদ সহ রাজ্যের বিভিন্ন স্থানে একাধিক এফআইআর দায়ের করেছে। তবে, কলকাতা হাইকোর্ট এই এফআইআরগুলির উপর ২৬ আগস্ট পর্যন্ত অন্তর্বর্তীকালীন স্থগিতাদেশ জারি করেছে।বিবেক অগ্নিহোত্রীর প্রতিক্রিয়াবিবেক অগ্নিহোত্রী এক্স প্ল্যাটফর্মে দাবি করেছেন যে, তৃণমূল সরকার তাঁর কণ্ঠস্বর দমন করার চেষ্টা করছে।
তিনি বলেন, “আমি নীরব হব না। দ্য বেঙ্গল ফাইলস সত্যের উপর ভিত্তি করে তৈরি, এবং কেউ সত্যকে আটকাতে পারবে না।” তিনি কুনাল ঘোষের মন্তব্যের জবাবে বলেছেন, “আমার সিনেমা ইতিহাসের অন্ধকার অধ্যায় তুলে ধরে। আমি রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি করছি না, বরং সত্য উন্মোচন করছি।”
তিনি আরও জানিয়েছেন, তিনি কলকাতায় ট্রেলার মুক্তির জন্য বিকল্প ব্যবস্থা করবেন। কুনাল ঘোষের গুজরাট ফাইলস নিয়ে মন্তব্য ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গার দিকে ইঙ্গিত করে। সাংবাদিক রানা আইয়ুবের বই গুজরাট ফাইলস: অ্যানাটমি অফ আ কভার আপ ২০০২ সালের গুজরাট দাঙ্গা, গোধরা কাণ্ড এবং বিলকিস বানোর ঘটনা নিয়ে তদন্তমূলক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছিল।
বইটিতে দাবি করা হয়েছে, গুজরাটের তৎকালীন প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তারা এই ঘটনাগুলোর সঙ্গে জড়িত ছিলেন। কুনাল ঘোষের মন্তব্যে এই বইয়ের প্রতি ইঙ্গিত থাকলেও, তিনি বিবেকের উপর চাপ সৃষ্টি করতে চেয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিক মেরুকরণকে আরও তীব্র করেছে। তৃণমূল অভিযোগ করেছে যে, দ্য বেঙ্গল ফাইলস সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করতে পারে। অন্যদিকে, বিবেকের সমর্থকরা দাবি করছেন, তৃণমূল সত্য প্রকাশে বাধা দিচ্ছে। এক্স প্ল্যাটফর্মে এই বিষয়ে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। একটি পোস্টে বলা হয়েছে, “তৃণমূল সত্যের মুখোমুখি হতে ভয় পাচ্ছে। বিবেক অগ্নিহোত্রী একটি সাংস্কৃতিক ঝড় সৃষ্টি করছেন।”
দুশ্চিন্তায় হোম লোনের গ্রাহকরা, বাড়ল SBI-এর সুদের হার
দ্য বেঙ্গল ফাইলস নিয়ে বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক পরিস্থিতির উপর নতুন আলোকপাত করেছে। কুনাল ঘোষের গুজরাট ফাইলস নিয়ে মন্তব্য এবং বিবেকের প্রতিক্রিয়া এই বিতর্ককে আরও জটিল করেছে। কলকাতা হাইকোর্টের স্থগিতাদেশ এবং আসন্ন শুনানি এই ঘটনার ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করবে। এই ঘটনা শিল্প, স্বাধীনতা এবং রাজনীতির মধ্যে সংঘাতের একটি নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে।