কলকাতা: মহালয়ার আগের দিন, শনিবার কলকাতার একাধিক নামজাদা পুজো মন্ডপ উদ্বোধন করেছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। পিতৃপক্ষে পুজো মন্ডপ উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে উত্তাল রাজ্য-রাজনীতি। ‘হিন্দুধর্মের ভাবাবেগে আঘাত’ বলে সুর চড়িয়েছে বিরোধীরা। এবার বিরোধীদের কটাক্ষ, সমালোচনার পাল্টা জবাব দিলেন তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)।
সমাজমাধ্যমের একটি ভিডিও বার্তায় তিনি দাবি করেন, “মুখ্যমন্ত্রী পুজো নয়, মন্ডপ এবং উৎসবের উদ্বোধন করেছেন। পুজো উদ্বোধন করা কারও পক্ষেই সম্ভব নয়। একমাত্র ষষ্ঠীর দিন বোধনের মাধ্যমেই দুর্গাপুজোর উদ্বোধন হয়।” কিন্তু পুজোর সাতদিন আগে কেন মন্ডপ উদ্বোধন শুরু করলেন মুখ্যমন্ত্রী? এই প্রশ্নেরও নিজেই জবাব দিলেন কুণাল ঘোষ। তিনি বলেন, মুখ্যমন্ত্রীর কাছে এবছর প্রায় ৩০০০ পুজো উদ্বোধনের আমন্ত্রণ এসেছে। এর মধ্যে কয়েকটিতে তিনি নিজে উপস্থিত হয়ে উদ্বোধন করবেন, বাকিটা হবে ভার্চুয়ালি।
তাই কুণালের বক্তব্য, “যার কাছে এই রেকর্ড ভাঙা পুজো উদ্বোধনের আমন্ত্রণ রয়েছে, তাঁকে তো সময়টা বাড়িয়ে নিতেই হবে। এর সঙ্গে হিন্দু ধর্ম বা শাস্ত্রের কোনও সম্পর্ক নেই”। এছাড়াও এমনও অনেক জায়গা রয়েছে যেখানে ইতিমধ্যেই পুজো শুরু হয়ে গেছে বলে দাবি করেন কুণাল। পুরুলিয়ার গড়পঞ্চকোটে পঞ্জিকা মেনেই শারদীয়া শুরু হিয়ে গেছে বলে দাবি করেন তিনি।
এরপর সরাসরি বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর উদ্দেশ্যে কার্যত তোপ দেগে তৃণমূল কংগ্রেস মুখপাত্র বলেন, “বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্ররের ঐতিহাসিক কণ্ঠের মাধ্যমে আমরা যে শারদোৎসবকে স্বাগত জানাই, রেডিওতে যখন সেই ঐতিহাসিক মহিষাসুরমর্দিনী সম্প্রচারিত হয়, তখনও কিন্তু পিতৃপক্ষই চলে। মানুষ গঙ্গার ঘাটে তর্পণ করেন! আমাদেরকে হিন্দু ধর্ম শেখাচ্ছেন শুভেন্দু অধিকারী! আমরা আপনাকে হিন্দু ধর্ম শিখিয়ে দেব!”
প্রসঙ্গত, শনিবার বিকেল থেকে কলকাতার তিনটি বড় পুজো মন্ডপের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। যার মধ্যে ছিল, শ্রীভূমি স্পোর্টিং ক্লাব, টালা প্রত্যয় এবং হাতিবাগান সার্বজনীন। রবিবার মহালয়ার দিনও দক্ষিণ কলকাতার বিখ্যাত বেশ কিছু পুজো মন্ডপ উদ্বোধনের কর্মসূচী রয়েছে তাঁর। তালিকায় রয়েছে দক্ষিণ কলকাতার ৯৫ পল্লি, যোধপুর পার্ক, বাবুবাগান, সেলিমপুর পল্লি। এছাড়াও ভার্চুয়ালি নাকতলা উদয়ন সংঘের পুজো উদ্বোধন করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
শুভেন্দু সহ বিজেপির কটাক্ষ
শনিবার এক্সে বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী (Suvendu Adhikari) মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে একহাত নিয়ে মন্তব্য করেন, “নিজের সংকীর্ণ ভোটব্যাংক রাজনীতির জন্য হিন্দুদের আচার, রীতি নীতি, অনুভূতির উপর আঘাত করেছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী।” কটাক্ষ করেছেন, হুগলীর প্রাক্তন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়ও। এক্সে তিনিও ক্ষোভ উগড়ে দিয়েছেন।
হিন্দু শাস্ত্রের কথা উল্লেখ করে লকেট বলেন, “পিতৃপক্ষের সময় আমরা পূর্বপুরুষদের আত্মার শান্তির জন্য জল দান করি, শ্রাদ্ধ ও তর্পণ করা হয়। এই ১৫ টি দিন আমদের পূর্বপুরুষদের স্মরণ ও তাঁদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানোর জন্যই নিবেদিত। এই সময় আনন্দ, উৎসব করা বা নতুন কিছুর সূচনা করা কঠোর ভাবে বর্জনীয়।” শুভেন্দুর সুরেই লকেট বলেন, “ইচ্ছাকৃত ভাবে নিজের মাহাত্ম্য বাড়ানোর জন্য হিন্দু আচারবিধিকে অগ্রাহ্য করে নিজের প্রোপাগান্ডা চালাচ্ছেন হিন্দু বিরোধী মমতা।”

আমাদের Google News এ ফলো করুন
২৪ ঘণ্টার বাংলা নিউজ, ব্রেকিং আপডেট আর এক্সক্লুসিভ স্টোরি সবার আগে পেতে ফলো করুন।
