মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে দিল্লিতে সাইবার পুলিশে (Kunal Ghosh) অভিযোগ দায়ের করেছেন বিজেপি নেতা ও বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী। এই ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তৃণমূল কংগ্রেসের নেতা কুনাল ঘোষ । তিনি অভিযোগ করেছেন, বিজেপি এবং তাদের সমর্থকরা ভুয়ো ভিডিও ছড়িয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করছে।
কুনাল ঘোষ বলেন, “বিজেপি এবং তাদের সমর্থকরা ভুয়ো ভিডিওর মূল খেলোয়াড়। তৃণমূলের কর্মী বা নেতারা নয়। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে কিছু তথ্য ছিল, এবং তিনি সেটি পোস্ট করেছেন।
পরে আমরা জানতে পেরেছি, দিল্লি পুলিশ, প্রশাসন এবং বিজেপি সত্যকে দমন করার চেষ্টা করছে। তারা পরিস্থিতিকে ম্যানিপুলেট করতে চাইছে। এখন তাদের পুলিশ কী বলছে বা তাদের নেতার অভিযোগ গুরুত্বহীন। সত্য হলো, বাংলা ভাষাভাষী ভারতীয়দের প্রতি হয়রানি চলছে, এবং এখন তাদের বলার কিছু নেই।”
এক্স হ্যান্ডেলের একটি পোস্টে মমতা দাবি করেছিলেন, দিল্লি পুলিশ মালদার চাঁচলের একটি বাঙালি পরিবারের মহিলা ও তার সন্তানের উপর নির্মমভাবে হামলা করেছে। তিনি একটি ভিডিও শেয়ার করে লিখেছিলেন, “অত্যাচারী! ভয়াবহ! দেখুন কীভাবে দিল্লি পুলিশ মালদার চাঁচলের একটি অভিবাসী পরিবারের শিশু এবং তার মাকে নির্মমভাবে মেরেছে।
বিজেপির শাসনে বাঙালিদের বিরুদ্ধে ভাষাগত সন্ত্রাসের এই নৃশংসতা থেকে এমনকি শিশুও রেহাই পায়নি! তারা আমাদের দেশকে এখন কোথায় নিয়ে যাচ্ছে?” তবে, দিল্লি পুলিশ এই অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলেছে, ভিডিওটি “ভুয়ো এবং ভিত্তিহীন”। দিল্লি পুলিশের ডিসিপি (পূর্ব দিল্লি) অভিষেক ধানিয়া জানিয়েছেন, বিষয়টির তদন্ত করা হয়েছে এবং অভিযোগগুলো মিথ্যা প্রমাণিত হয়েছে।
কুনাল ঘোষ এই ঘটনাকে বিজেপির রাজনৈতিক কৌশল হিসেবে বর্ণনা করে বলেন, “বিজেপি সত্যকে আড়াল করতে এবং তাদের ব্যর্থতা ঢাকতে ভুয়ো তথ্য ছড়াচ্ছে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যে তথ্য দিয়েছেন, তা বাংলা ভাষাভাষী মানুষের প্রতি হয়রানির প্রমাণ। বিজেপি এবং তাদের নেতা শুভেন্দু অধিকারী এখন এই বিষয়ে কোনও জবাব দিতে পারছেন না।”
তিনি আরও বলেন, “দিল্লি পুলিশ এবং বিজেপি একসঙ্গে কাজ করে পরিস্থিতিকে নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। কিন্তু সত্য প্রকাশ পাবেই। আমরা এই হয়রানির বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাব।”শুভেন্দু অধিকারীর এই অভিযোগ দিল্লিতে দায়ের করা হয়েছে, যেখানে তিনি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের এক্স পোস্টকে ভিত্তি করে মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ তুলেছেন। তবে, কুনাল ঘোষ দাবি করেন, এই অভিযোগ বিজেপির রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অংশ।
তিনি বলেন, “বিজেপি সবসময় তৃণমূলের বিরুদ্ধে মিথ্যা প্রচার চালায়। আমাদের মুখ্যমন্ত্রী বাংলার মানুষের অধিকারের জন্য লড়াই করছেন। তিনি বাঙালিদের উপর হামলার বিষয়টি তুলে ধরেছেন, এবং এখন বিজেপি তাঁকে নিশানা করছে।”এই ঘটনা পশ্চিমবঙ্গের রাজনৈতিক মহলে তীব্র বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যান্য নেতারাও কুনাল ঘোষের সমর্থনে সরব হয়েছেন। তৃণমূলের সাংসদ সৌগত রায় বলেন, “বিজেপি সবসময় মিথ্যা অভিযোগের মাধ্যমে তৃণমূলকে হয়রানি করার চেষ্টা করে। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পোস্টে যে তথ্য ছিল, তা বাঙালি সম্প্রদায়ের উপর হামলার প্রমাণ। বিজেপি এখন তা ঢাকতে চাইছে।”
তিনি আরও বলেন, “শুভেন্দু অধিকারী বাংলার মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে কাজ করছেন। তিনি বিজেপির হয়ে রাজনৈতিক খেলা খেলছেন।”অন্যদিকে, বিজেপি নেতা অমিত মালব্য মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অভিযোগকে “মিথ্যা এবং ভিত্তিহীন” বলে সমালোচনা করেছেন।
তিনি এক্স-এ লিখেছেন, “তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইরাল ভিডিও এবং পোস্টে উল্লিখিত অপহরণ, চাঁদাবাজি এবং পুলিশের দুর্ব্যবহারের ঘটনা ভুয়ো। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মিথ্যা খবর ছড়িয়ে লজ্জার বিষয়।”
এশিয়া কাপে ভারত পাকিস্তান ম্যাচ নিয়ে অমিত শাহকে কটাক্ষ গগৈয়ের
এই ঘটনা সামাজিক মাধ্যমে ব্যাপক আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এক্স প্ল্যাটফর্মে তৃণমূল সমর্থকরা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পক্ষে এবং বিজেপির বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এই বিতর্ক পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল ও বিজেপির মধ্যে চলমান রাজনৈতিক দ্বন্দ্বকে আরও তীব্র করবে। ২০২৬-এর বিধানসভা নির্বাচনের আগে এই ঘটনা উভয় দলের জন্য নতুন রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ তৈরি করতে পারে।