‘মঞ্চ সিপিএমের, ভোটার বিজেপির’, সমাজ মাধ্যমে বিস্ফোরক কুনাল

বরাবরের মতোই বাম ব্রিগেড নিয়ে আবার বিস্ফোরক কুনাল ঘোষ (kunal ghosh)। রবিবার কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সিপিআই(এম)-এর নেতৃত্বে বামফ্রন্টের শ্রমিক-কৃষক সমাবেশকে কেন্দ্র করে তৃণমূল মুখপাত্র…

kunal ghosh criticizes left brigade

বরাবরের মতোই বাম ব্রিগেড নিয়ে আবার বিস্ফোরক কুনাল ঘোষ (kunal ghosh)। রবিবার কলকাতার ব্রিগেড প্যারেড গ্রাউন্ডে সিপিআই(এম)-এর নেতৃত্বে বামফ্রন্টের শ্রমিক-কৃষক সমাবেশকে কেন্দ্র করে তৃণমূল মুখপাত্র কুনাল ঘোষ বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন। তিনি দাবি করেছেন, এই সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের ৯৯%ই বিজেপির ভোটার এবং এই সমাবেশকে তিনি “মুখোশধারী রামবামের ব্রিগেড” বলে কটাক্ষ করেছেন। কুনালের এই মন্তব্য বাম নেতাদের মধ্যে তীব্র ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে এবং রাজনৈতিক মহলে ব্যাপক বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।

Advertisements

কুনালের দাবি: ‘মঞ্চ সিপিএমের, ভোটার বিজেপির’ (kunal ghosh)

এক্স-এ একটি পোস্টে কুনাল ঘোষ (kunal ghosh) লিখেছেন, “আবার বলছি, যাঁরা আজ সিপিএমের ব্রিগেডে যাবেন, বড় বড় কথা বলবেন, তাঁরা ৯৯%ই বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন, দিচ্ছেন। সভায় সামান্য কিছু লোক দেখানোটা বড় কথা নয়, এঁরাই ফিরে গিয়ে বিজেপিকে ভোট দেন। আগেও একাধিকবার এটা ভোটের অঙ্কে প্রমাণিত। ফলে, আজকের ছবির ক্যাপশন: মঞ্চ সিপিএমের, ভোটার বিজেপির। এটা মুখোশধারী রামবামের ব্রিগেড।”

   

মুখপাত্রের (kunal ghosh) এই মন্তব্যে তিনি পরোক্ষভাবে বামফ্রন্টের সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের রাজনৈতিক আনুগত্য নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন। তিনি দাবি করেছেন, এই সমাবেশে উপস্থিত জনতা বামেদের সমর্থন করলেও, ভোটের সময় তারা বিজেপিকে সমর্থন করে। তিনি এটিকে “রামবাম” (রাজ্যে বিজেপি ও বামেদের মধ্যে গোপন সমঝোতার অভিযোগ) হিসেবে উল্লেখ করে বামেদের উদ্দেশে তীব্র কটাক্ষ করেছেন।

সুপার কাপে ২৫ সদস্যের দল ঘোষণা করে বিশেষ চমক দিল ‘কলিঙ্গা ওয়ারিয়র্স’

ব্রিগেড সমাবেশ: বামেদের লড়াই

সিপিআই(এম) এবং বামফ্রন্ট এই ব্রিগেড সমাবেশকে শ্রমিক, কৃষক, খেতমজুর এবং প্রান্তিক সম্প্রদায়ের অধিকার আদায়ের লড়াই হিসেবে উপস্থাপন করেছে। সমাবেশের প্রধান দাবিগুলির মধ্যে রয়েছে ন্যায্য মজুরি, কৃষকদের জন্য ন্যূনতম সহায়ক মূল্য আইন, ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প পুনরায় চালু করা, আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসকের ধর্ষণ ও খুনের ঘটনায় ন্যায়বিচার এবং শিক্ষকদের চাকরি বাতিলের প্রতিবাদ।

সিপিআই(এম) নেতা মহম্মদ সেলিম বলেন, “এই সমাবেশ মেহনতি মানুষের অধিকারের লড়াই। উত্তরবঙ্গের চা শ্রমিক, জঙ্গলমহলের আদিবাসী, সুন্দরবনের মৎস্যজীবী—সবাই এখানে একত্রিত হয়েছেন। 

বাম নেতাদের ক্ষোভ

সিপিআই নেতা দীনেশ মজুমদার বলেন, “কুনাল ঘোষের (kunal ghosh) ‘রামবাম’ মন্তব্য সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন। বামফ্রন্ট বিজেপির বিরুদ্ধে লড়াই করছে, এবং আমাদের সমর্থকরা আমাদের আদর্শে বিশ্বাসী। এই ধরনের কটাক্ষ আমাদের আন্দোলনকে দুর্বল করতে পারবে না।”

Advertisements

রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট

পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে বামফ্রন্ট ২০১১ সাল থেকে ক্ষমতার বাইরে রয়েছে এবং গত এক দশকে তারা লোকসভা ও বিধানসভা নির্বাচনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে পারেনি। তবে, সাম্প্রতিক সময়ে তারা শ্রমিক ও কৃষকদের ইস্যুতে রাজপথে সক্রিয় হয়েছে। ব্রিগেড সমাবেশকে তারা তাদের রাজনৈতিক প্রাসঙ্গিকতা ফিরিয়ে আনার একটি সুযোগ হিসেবে দেখছে।

তৃণমূলের প্রতিক্রিয়া

তৃণমূল কংগ্রেস এই ঘটনায় সরাসরি মন্তব্য করেনি। তবে, তৃণমূল নেতা ফিরহাদ হাকিম বলেন, “বামেদের সমাবেশে কতজন আসে, তা দেখার বিষয়। জনগণ তৃণমূলের উন্নয়নের পক্ষে।

সামাজিক মাধ্যমে বিতর্ক

এক্স-এ কুনাল ঘোষের (kunal ghosh) মন্তব্য নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। একজন ব্যবহারকারী লিখেছেন, মজবুত ভোটে ব্যাঙ্কের উপরে দাঁড়িয়ে কেন এতো চিন্তা ভোটার নিয়ে। আবার কেউ কেউ কটাক্ষ করেছেন তৃণমূলের উচিত এই ব্রিগেড সমাবেশে যোগ দিয়ে খেটে খাওয়া মানুষের কথা শোনা। আবার কেউ তির্যক মন্তব্য করে বলেছেন তৃণমূল ব্রিগেডে ডেকে ডিমভাত খাইয়ে ভোটব্যাঙ্ক মজবুত করেছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষণ

রাজনৈতিক বিশ্লেষক সুজিত দে বলেন, “কুনাল ঘোষের (kunal ghosh) মন্তব্য বামেদের সমাবেশকে গুরুত্ব দেওয়ার একটি কৌশল হতে পারে। তিনি জনগণের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে বামেদের সমর্থন ভিত্তিকে দুর্বল করতে চাইছেন। তবে, এই কটাক্ষ বাম সমর্থকদের আরও উজ্জীবিত করতে পারে।”

কুনাল ঘোষের ‘মুখোশধারী রামবামের ব্রিগেড’ মন্তব্য সিপিএমের ব্রিগেড সমাবেশকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনাকে তুঙ্গে তুলেছে। বামফ্রন্ট এই সমাবেশের মাধ্যমে শ্রমজীবী মানুষের অধিকারের লড়াইকে জোরদার করতে চাইছে, যখন বিজেপি এটিকে অপ্রাসঙ্গিক করার চেষ্টা করছে। সমাবেশের সাফল্য এবং এর রাজনৈতিক প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের রাজনীতিতে নতুন সমীকরণ তৈরি করতে পারে।