কৃষ্ণনগর: নদিয়া জেলার কৃষ্ণনগর (Krishnanagar Shocker) শহরে দুপুরবেলা ঘটে গেল হাড়হিম করা হত্যাকাণ্ড। সোমবার মানিকপাড়া এলাকায় বাড়ির দোতলায় উঠে এক দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীকে গুলি করে খুন করল এক যুবক। নিহত ছাত্রীর নাম ঈশিতা মল্লিক (১৭)। মাথায় গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তার। আকস্মিক এই হত্যাকাণ্ডে স্তম্ভিত স্থানীয় বাসিন্দারা। এলাকায় নেমে এসেছে শোকের ছায়া।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সোমবার দুপুরে পরিবারের অন্য সদস্যরা ঘরে থাকলেও কেউই বুঝে উঠতে পারেননি যে তাদের বাড়িতে প্রবেশ করেছে আততায়ী। হঠাৎ গুলির শব্দে ছুটে আসেন প্রতিবেশীরা। দেখা যায়, রক্তাক্ত অবস্থায় পড়ে রয়েছে দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রী ঈশিতা। তড়িঘড়ি করে স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলেও চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
মৃত ছাত্রীর পরিবারের অভিযোগ, অভিযুক্ত যুবকের সঙ্গে ঈশিতার আগের থেকে পরিচয় ছিল। ঈশিতা এর আগে পরিবারের সঙ্গে কাঁচরাপাড়ায় থাকত। পরে কৃষ্ণনগরে স্থানান্তরিত হয় মল্লিক পরিবার। প্রাথমিক অনুমান, সেই সূত্রে অভিযুক্ত যুবক কাঁচরাপাড়ার বাসিন্দা। সম্পর্কের টানাপোড়েন বা ব্যক্তিগত কোনো দ্বন্দ্বের জেরেই এই খুন হতে পারে বলে মনে করছে পুলিশ। তবে সঠিক উদ্দেশ্য জানতে ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে তদন্ত।
মৃতার দাদু জানিয়েছেন, ‘‘ছেলেটির বাড়ি উত্তর ২৪ পরগণার কাঁচরাপাড়ায়। কীভাবে আমাদের নাতনিকে এত সহজে গুলি করে খুন করতে পারল, তা ভেবে পাচ্ছি না।’’ ঘটনার পর থেকেই এলাকায় আতঙ্ক ছড়িয়েছে।
পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযুক্ত যুবক ঘটনার পর থেকেই পলাতক। আশেপাশের থানাগুলোকে সতর্ক করা হয়েছে। রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্তে নাকা তল্লাশি শুরু হয়েছে। তদন্তে নেমে পুলিশ বাড়ির আশেপাশের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখছে। পাশাপাশি, মৃতার মোবাইল ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। সম্পর্কজনিত জটিলতা বা প্রতিশোধপরায়ণ মানসিকতার কারণে এই খুন কিনা, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
কৃষ্ণনগর শহরের ব্যস্ত এলাকায় এই খুনের ঘটনা নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। স্থানীয়দের বক্তব্য, ‘‘দিনদুপুরে বাড়িতে ঢুকে এমন হত্যাকাণ্ড হলে মানুষের নিরাপত্তা কোথায়?’’ আততায়ীকে দ্রুত গ্রেফতার করে কড়া শাস্তির দাবি তুলেছে প্রতিবেশীরা।
এদিকে, মর্মান্তিক এই ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়তেই কৃষ্ণনগরের মানিকপাড়া এলাকায় ভিড় জমেছে মানুষের। পুলিশি প্রহরায় মোড়া হয়েছে গোটা এলাকা। নিহত ছাত্রীর স্কুলেও নেমে এসেছে শোকের ছায়া। শিক্ষক-শিক্ষিকাদের একাংশ বলেছেন, ‘‘ঈশিতা খুব শান্ত, মেধাবী মেয়ে ছিল। এই ঘটনা মেনে নেওয়া কঠিন।’’
রাজ্যে নারী নিরাপত্তা নিয়ে চলমান বিতর্কের মধ্যেই এই খুনের ঘটনায় প্রশ্ন উঠছে প্রশাসনিক ভূমিকা নিয়ে। গুলি করে খুনের মতো ঘটনা শহরের সাধারণ মানুষকে আতঙ্কিত করেছে। স্থানীয়রা প্রশাসনের কাছে বাড়তি নজরদারি এবং দ্রুত অভিযুক্তকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যেই একাধিক টিম গঠন করা হয়েছে। নদিয়া জেলাজুড়ে তল্লাশি শুরু হয়েছে। উত্তর ২৪ পরগণার কাঁচরাপাড়া এলাকায়ও চলছে খোঁজখবর। তদন্তের স্বার্থে অভিযুক্ত যুবকের নাম এখনও প্রকাশ করা হয়নি। তবে সূত্রের খবর, যুবক ও মৃতার মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক ছিল এবং সম্প্রতি সেই সম্পর্কে টানাপোড়েন দেখা দেয়। সমস্ত সম্ভাবনা খতিয়ে দেখেই এই হত্যাকাণ্ডের আসল কারণ প্রকাশ্যে আসবে বলে মনে করছে পুলিশ।