কলকাতা, ২৮ নভেম্বর: শীতের হাওয়া বইতে শুরু করেছে ঠিকই, কিন্তু বাজারে ঢুকলেই সেই শীতলতার ছোঁয়া পাওয়া যাচ্ছে না। বরং দাম শুনলেই গরম গরম চিন্তা মাথায় চেপে বসছে সাধারণ মানুষের। নভেম্বরের শেষ সপ্তাহেও সবজির দামে কোনো স্বস্তি নেই উলটে অনেক ক্ষেত্রেই দাম বেড়েছে আরও। ফলে দৈনন্দিন বাজারসামগ্রী কেনাকাটা নিয়ে নাভিশ্বাস উঠছে মধ্যবিত্ত ও নিম্নবিত্ত পরিবারের।
বাজারে গিয়ে দেখা গেল, সবজির ঝুড়িতে মুখ্য জায়গা দখল করে থাকা কয়েকটি সবজির দাম এখনও চড়া। বড় পেঁয়াজের কেজি এখন ₹27 থেকে ₹45 পর্যন্ত। ছোট পেঁয়াজের দাম আরও ভয়াবহ ₹45 থেকে ₹74। টমেটো, যা সাধারণত শীতের শুরুতে কিছুটা দাম কমায়, এবার সেটিও মিলছে ₹31 থেকে ₹51 টাকায়। কাঁচা লঙ্কা তো যেন আগুনের শিখাই—₹44 থেকে ₹73 কেজি।
আলুর দাম তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকলেও (₹37 থেকে ₹61), অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজি দামে কমতি নেই। বিট, করলা, ঢেঁড়স, ক্যাপসিকাম, বেগুন—সবকিছুর দামই বাজারে পৌঁছানোর সঙ্গে সঙ্গে চমকে দিচ্ছে ক্রেতাদের। প্ল্যান্টেন বা কাঁচা কলা কেজিপিছু ₹11 থেকে ₹18, পেয়াঁজকলি ও ধনেপাতার মতো শাকও ₹10 থেকে ₹17 পর্যন্ত বিকোচ্ছে, যা আগের বছরের তুলনায় বেশ বেশি বলে জানান ক্রেতারা।
সবজির দামবৃদ্ধির প্রধান কারণ হিসেবে পাইকারি ব্যবসায়ীরা উল্লেখ করছেন সরবরাহের ঘাটতি। নভেম্বরের অকালবৃষ্টিতে বহু অঞ্চলে ক্ষতি হয়েছে মৌসুমি ফসলের। আবার কয়েকটি অঞ্চলে অতিরিক্ত ঠান্ডায় সবজি নষ্ট হওয়ায় পাইকারি বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ নেই। উপরন্তু, পরিবহণ খরচ বাড়ায় সেই প্রভাবও এসে পড়ছে খুচরো বাজারে।
ওদিশা, বিহার ও ঝাড়খণ্ড থেকে যে সবজিগুলো নিয়মিত আসে, সেগুলোর দামও বাড়ছে জ্বালানির ব্যয় বৃদ্ধির কারণে। ফলে শীতের মৌসুমে যেসব সবজি সাধারণত কম দামে পাওয়া যায়, এই বছর সেগুলোও সস্তা হচ্ছে না।
কলকাতার কয়েকটি বড় বাজারে বেহালা, গড়িয়া, মানিকতলা—বিক্রেতাদের অভিযোগ, ক্রেতা নেই। দাম বেশি দেখে অনেকেই প্রয়োজনীয় জিনিস কম কিনছেন। কেউ কেউ পাত্তা বদল করে দিয়েছেন—আধ কেজির জায়গায় ২৫০ গ্রাম সবজি নিয়ে ফিরছেন বাড়ি। অনেকেই আবার সস্তার শাকসবজির দিকে ঝুঁকছেন, যেমন লাউ, কুমড়ো, পুঁইশাক ইত্যাদি।
মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহিণীদের উদ্বেগ আরও বেশি। একজন বলেন, “শীতের সবজি তো সাধারণত কম দামে পাওয়া যায়—গাজর, ফুলকপি, বাঁধাকপি। কিন্তু এবার সবকিছুর দামই আকাশছোঁয়া। রান্নার মেনুতেও তাই কাটছাঁট করতে হচ্ছে।”
সবজি ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহ থেকে নতুন মৌসুমি সবজি বাজারে আসতে শুরু করলে দাম কিছুটা কমতে পারে। তবে সেই আশায় বুক বাঁধতে চাইছেন না অনেক ক্রেতাই। কারণ গত কয়েক মাসে বারবার বাজারের দাম ওঠানামা করে তাদের বিশ্বাস নড়বড়ে করে দিয়েছে।
এই পরিস্থিতিতে বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, বাজারে সবজি কেনার আগে একাধিক দোকান ঘুরে দাম যাচাই করা, বিকল্প সবজিতে ঝোঁক বাড়ানো এবং সাপ্তাহিক বাজার পরিকল্পনা করে খরচ নিয়ন্ত্রণে আনা শ্রেয়। তবে আপাতত যা পরিস্থিতি—শীতের শুরু হলেও স্বস্তির ‘ঠান্ডা’ নেই বাঙালির রান্নাঘরে। পকেট গরম করেই ফিরতে হচ্ছে প্রতিদিনের বাজার থেকে।
