সপ্তাহের শেষে শীতের সবজিতে বাঙালির কপালে ভাঁজ

winter-vegetable-price-today-india-weekend-update-2025

কলকাতা: সপ্তাহের শেষে বাজারে ভিড় কমেনি, কিন্তু ক্রেতাদের কপালে ভাঁজ আরও গভীর হয়েছে। শীতের সাধারণ সবজির দাম কিছুটা কমার আশা ছিল, কিন্তু বাস্তবে দাম অনেকটাই আঁটসাঁট রয়ে গেছে। শনিবার সকাল থেকে উত্তর থেকে দক্ষিণ কলকাতা— সর্বত্র একই ছবি: ঠেলাগাড়ি ও পাইকারি বাজারে ভিড়, আর তার মধ্যেই ট্রলি বা শপিং ব্যাগ হাতে প্রতিটি পরিবারের মনে একটাই প্রশ্ন— আজ কোনটা কেনা যাবে, কোনটা ছেড়ে দিতে হবে?

Advertisements

পেঁয়াজ ও আলুর ঝুড়ি থেকেই আজকের হতাশা শুরু। বড় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ₹27–31–43 প্রতি কেজি, ছোট পেঁয়াজের দাম ₹45–52–74 প্রতি কেজি, যা সপ্তাহের মাঝামাঝি থেকে খুব একটা কমেনি। আলুর দাম ₹35–40–58 প্রতি কেজি, ফলে সাধারণ রান্নার খরচ কমানোর আশায় থাকা গৃহিণীদের মুখ আবারও ব্যর্থতার ছাপ ফুটে উঠছে।

   

অপারেশন ট্র্যাকডাউনে কুখ্যাত গ্রেফতার ৩৮

টমেটোর বাজারেও আগুন। ₹30–35–50 প্রতি কেজি দামে টমেটো এখনও বহু পরিবারের কাছে বিলাসী উপাদানই রয়ে গেছে। কাঁচালঙ্কা ₹45–52–74 প্রতি কেজি, যা আগের সপ্তাহের তুলনায় সামান্য কম হলেও এখনও অস্বস্তিকর।

শুধু নিত্যপ্রয়োজনীয় সবজিই নয়, ঋতুভিত্তিক শীতের সবজিগুলিও দামি তালিকাতেই। ফুলকপি ₹28–32–46, বাঁধাকপি ₹29–33–48, গাজর ₹43–49–71, শিম ₹41–47–68, ব্রকলি কিছু বাজারে পাওয়া গেলেও দাম কিছুটা বেশি বলেই ক্রেতাদের অভিযোগ। শীতের বিশেষ আকর্ষণ মটরশুঁটি আজ বাজারে ₹49–56–81 প্রতি কেজি— ফলে অনেকে কম পরিমাণে কিনতে বাধ্য হয়েছেন।

Advertisements

পালংশাক, মেথি শাক, ধনেপাতা, ডিল লিফ প্রতিটিই উচ্চ দামের তালিকায়। মেথি ₹12–14–20, ধনেপাতা ₹15–17–25, আর শাকভোজনিদের প্রিয় অমরান্থ লিফ ₹13–15–21 প্রতি আঁটি। শীতের গন্ধ বাড়ানোর মতো শাক থাকলেও দাম যেন মানুষের হাসিতে ছুরি বসিয়ে দিচ্ছে। সাধারণ ক্রেতারা বলছেন “বাজারে আসতেই ভয় লাগে। পাঁচশো টাকা নিয়ে এলেও দু’ধরনের সবজি কিনলে খরচ শেষ হয়ে যায়। তারপরেও তো চাল–ডাল–মাংস আছে।”

বাজার বিশ্লেষক এবং পাইকাররা বলছেন, পরিবহন খরচ বৃদ্ধি, সমতল অঞ্চলে উৎপাদন কমে যাওয়া এবং কিছু এলাকায় ঠান্ডার তীব্রতা শুরু হওয়ায় সরবরাহে তারতম্য দেখা দিয়েছে। তাই দাম কমতে সময় লাগবে। মাছ-মাংসের বাজারেও দাম স্থির হলেও যখন সবজিই এত বেশি, তখন ক্রেতারা বাধ্য হয়ে নিত্য তালিকা ছোট করছেন। অনেকেই আজ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন ফুলকপি নয়, লাউ; ব্রকলি নয়, বেগুন; ধনেপাতা বাদ, বাড়িতে মশলা কমিয়ে তৈরি হবে রান্না।

হাড়ভাঙা খাটুনির পরে যখন সাধারণ মানুষ বাজারে যান, তখন এমন দামের উর্ধ্বগতি নিঃসন্দেহে পরিবারের দৈনন্দিন বাজেটে চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে। উৎসবের মৌসুম পেরিয়ে গেলেও সবজির দাম নিচে নামার কোনও ইঙ্গিত বাজারে নেই। কলকাতার এক প্রৌঢ় ক্রেতার আক্ষেপ, “শীতের সবজি খাওয়ার সময় এসেছে, কিন্তু দাম দেখে মনে হচ্ছে যেন সোনা কিনতে এসেছি। এভাবে চললে গরিব-মধ্যবিত্তদের পাতে শাকসবজি বিলাসিতা হয়ে দাঁড়াবে।”