শিশুসাথী প্রকল্পে নতুন বিপ্লব, বাড়ল ৩০০ কোটি তহবিল

কলকাতা: জন্মের সময় প্রতিটি শিশুই তার পরিবারের কাছে এক নতুন আশার আলো। কিন্তু জন্মের পর যদি সেই শিশুর শরীরে মারণ রোগ বা গুরুতর শারীরিক জটিলতা ধরা পড়ে, তখন সেই আলো দ্রুত দুশ্চিন্তার অন্ধকারে ঢেকে যায়।

Advertisements

হার্টে ছিদ্র, জটিল হৃদরোগ, ঠোঁট বা তালু কাঁটা (Cleft Lip and Cleft Palate), পা বাঁকা হয়ে জন্মানো (Clubfoot) এই ধরনের জন্মগত কঠিন সমস্যায় ভোগা শিশুর সংখ্যা পশ্চিমবঙ্গেও কম নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই অস্ত্রোপচার, দীর্ঘমেয়াদি চিকিৎসা ও থেরাপির প্রয়োজন হয়, যা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সাধারণ পরিবারগুলির কাছে এ ধরনের চিকিৎসা করানো কার্যত অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়। কিন্তু এবার আশার আলো দেখাচ্ছে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের অন্যতম মানবিক প্রকল্প ‘শিশুসাথী’(Shishusathi Scheme)।

   

২০১৩ সালে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে চালু হওয়া এই প্রকল্পের মূল লক্ষ্য ছিল শিশুদের বিনামূল্যে চিকিৎসা নিশ্চিত করা। দীর্ঘ এক দশকেরও বেশি সময় ধরে এই প্রকল্প লক্ষ লক্ষ শিশুকে নতুন জীবন উপহার দিয়েছে। এবার সেই উদ্যোগ আরও বিস্তৃত হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সামাজিক মাধ্যমে ঘোষণা করেন যে, জন্মগত জটিল রোগ ও শিশুদের হৃদরোগ সংক্রান্ত চিকিৎসা শিশুসাথী প্রকল্পের আওতায় সম্পূর্ণ বিনামূল্যে করা হবে। এর জন্য অতিরিক্ত ৩০০ কোটি টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। অর্থাৎ এবার থেকে ব্যয়বহুল অপারেশন, চিকিৎসা-পরবর্তী থেরাপি, ফলোআপ, ওষুধ ও যাবতীয় মেডিক্যাল পরিষেবা সবকিছুই বহন করবে রাজ্য সরকার।

নতুন ঘোষণার পর শিশুসাথীর আওতায় যে সব জটিল চিকিৎসা মিলবে—
হার্টে ফুটো (Congenital Heart Defects)
জটিল জন্মগত হৃদরোগের অস্ত্রোপচার
ক্লেফট লিপ (ঠোঁট কাঁটা) সার্জারি
ক্লেফট প্যালেট (তালু কাঁটা) সার্জারি
ক্লাবফুট বা পায়ের হাড় বাঁকা থাকার চিকিৎসা
নবজাতকের বিভিন্ন জন্মগত শারীরিক ত্রুটির সংশোধনী চিকিৎসা
সার্জারি-পরবর্তী যত্ন, থেরাপি, ও নিয়মিত ফলোআপ

Advertisements

রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের হিসেব অনুযায়ী, পশ্চিমবঙ্গে ৬৩,০০০-এরও বেশি শিশু জন্মগত জটিলতায় আক্রান্ত। এতদিন এই চিকিৎসাগুলির কিছু পরিষেবা সরকারি প্রকল্পে থাকলেও, উচ্চ ব্যয়ের জটিল সার্জারি অনেক সময়ই পুরোপুরি সরকারি সহায়তায় করা সম্ভব হতো না। নতুন বরাদ্দের ফলে এবার আর কোনও অভিভাবককে চিকিৎসার খরচ নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।

শিশুসাথী প্রকল্পের আওতায় বিনামূল্যে অপারেশন ও চিকিৎসা হবে বাছাই করা সরকারি হাসপাতালগুলিতে, যেমন— এসএসকেএম হাসপাতাল, কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ, আরজিকর মেডিক্যাল কলেজ, এনআরএস মেডিক্যাল কলেজ, উত্তরবঙ্গ, বর্ধমান, মালদা, বাঁকুড়া, মেদিনীপুর-সহ বিভিন্ন জেলার মেডিক্যাল হাসপাতাল।

এসব হাসপাতালে থাকবেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক, অত্যাধুনিক অপারেশন থিয়েটার ও পোস্ট-অপারেটিভ কেয়ার ইউনিট।

ঘোষণায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, “প্রতিটি শিশুর সুস্থভাবে বাঁচার অধিকার রয়েছে। চিকিৎসার খরচের জন্য কোনও অভিভাবক যেন সন্তানকে সুস্থ জীবন দিতে পিছিয়ে না যান সেই দায়িত্ব সরকারের।”