কলকাতা: শীতের শুরুতেই রাজ্যের সুরার বাজারে বড় ধাক্কা। ইংরেজি নববর্ষ আসার আগেই পশ্চিমবঙ্গে মদের দাম বাড়ানোর (liquor price increase) সিদ্ধান্ত নিল রাজ্য সরকার। ১ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে কার্যকর হচ্ছে নতুন অতিরিক্ত আবগারি শুল্ক, যার ফলে বিয়ার বাদে দেশি ও বিদেশি সব ধরনের মদের দামই বাড়বে। আবগারিদফতর ইতিমধ্যেই এই সংক্রান্ত সরকারি নির্দেশিকা প্রকাশ করেছে। ফলে ডিসেম্বর থেকেই মদের বাজারে নতুন দামের যুগ শুরু হতে চলেছে।
নতুন নিয়ম অনুযায়ী, IMFL (Indian Made Foreign Liquor), দেশি মদ, প্রিমিয়াম হুইস্কি, ভদকা, রাম, ব্র্যান্ডি, জিন সব ক্ষেত্রেই দাম বাড়বে। শুধুমাত্র বিয়ারকে এই বৃদ্ধি থেকে আপাতত ছাড় দেওয়া হয়েছে। প্রশাসনের তরফে জানানো হয়েছে, রাজস্ব বাড়ানো ও অর্থনৈতিক কাঠামোকে শক্তিশালী করতেই এই সিদ্ধান্ত। তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশ মনে করছে, বছর ঘুরলেই বিধানসভা নির্বাচন, তাই রাজস্ব বাড়িয়ে কোষাগার মজবুত করার পরিকল্পনার অংশ হিসেবেই মদের ওপর শুল্ক বাড়ানো হচ্ছে।
অর্থদফতর সূত্রে খবর, শুল্ক বৃদ্ধির ফলে রাজ্যের আয়ে বড়সড় পরিবর্তন আসবে। সেই আয় জনকল্যাণমূলক প্রকল্প, সামাজিক সুরক্ষা, উন্নয়নমূলক কাজ এবং সরকারি প্রকল্পের প্রসারে ব্যয় করা হতে পারে। তবে দাম বাড়লে বাজারে চাহিদা কমবে কি না, কিংবা অবৈধ মদ বিক্রির প্রবণতা বাড়বে কি না— এসব প্রশ্নও ইতিমধ্যেই উঠে আসতে শুরু করেছে।
আবগারিদফতর মদ প্রস্তুতকারী সংস্থা, ডিস্ট্রিবিউটর এবং পাইকারি বিক্রেতাদের স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, ৩০ নভেম্বর ২০২৫–এর মধ্যে পুরনো স্টক বিক্রি সম্পূর্ণ করতে হবে। ১ ডিসেম্বর থেকে আর পুরনো দামে মদ বিক্রি করা যাবে না। যদি কোনও ব্যবসায়ীর কাছে পুরনো স্টক থেকে যায়, তাহলে সেই বোতলগুলিতে নতুন মূল্যের লেবেল লাগিয়ে বিক্রি করতে হবে।
সরকারের যুক্তি, এতে মূল্য সংক্রান্ত বিভ্রান্তি কমবে, এবং ক্রেতারা সুনির্দিষ্ট দামের ভিত্তিতেই মদ কিনতে পারবেন। তবে এই নির্দেশ বাস্তবে কতটা কঠোরভাবে মানা হবে, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠছে।
দামের আগাম খবর প্রকাশ্যে আসার কারণে ইতিমধ্যেই অনেকে বেশি পরিমাণে মদ কিনে স্টক করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। অনুমান করা হচ্ছে, নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে রাজ্যের মদের দোকান ও অনলাইন ডেলিভারি প্ল্যাটফর্মগুলিতে ক্রেতাদের ভিড় বাড়বে। উৎসবের মরশুম, শীতকাল ও নিউ ইয়ার পার্টির পরিকল্পনা সব মিলিয়ে চাহিদা আরও উর্ধ্বমুখী হওয়ার সম্ভাবনা প্রবল।
অন্যদিকে, ভোক্তাদের একাংশ আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন যে, কিছু ব্যবসায়ী দাম বাড়ার সুযোগ নিয়ে ১ ডিসেম্বরের আগেই বেশি দামে মদ বিক্রি করতে পারেন। আবার কেউ কেউ নতুন দাম লাগু হওয়ার অপেক্ষায় পুরনো স্টক জমিয়ে কৃত্রিম সংকট তৈরি করতে পারেন। এতে বাজারে অনিশ্চয়তা, অসন্তোষ এবং ক্রেতা-বিক্রেতা সংঘাতের মতো পরিস্থিতি তৈরি হতে পারে বলেও মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মদের দাম বাড়লে মধ্যবিত্ত ও নিম্ন-মধ্যবিত্ত ক্রেতাদের খরচ বাড়বে, যা চাহিদায় কিছুটা প্রভাব ফেলতে পারে। তবে বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, উৎসব ও শীতের মরশুম চলায় দাম বৃদ্ধির প্রভাব সম্ভবত আগের বছরের তুলনায় কিছুটা কম পড়তে পারে। অর্থাৎ দাম বাড়লেও নিউ ইয়ার ও সিজনাল চাহিদা সাময়িকভাবে বাজারকে চাঙ্গা রাখবে।
সরকারি সূত্রে খবর, ১ ডিসেম্বরের পর বাজারে পর্যাপ্ত নজরদারি চালানো হবে। অতিরিক্ত দাম নেওয়া, কালোবাজারি, পুরনো স্টকে জাল লেবেল লাগানো বা অনিয়ম ধরা পড়লে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হবে। লাইসেন্স বাতিল থেকে শুরু করে অর্থনৈতিক জরিমানা এমনকি আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও ভাবছে আবগারিদফতর।
শুল্ক বৃদ্ধি রাজ্যের রাজস্ব বাড়াবে, কিন্তু এর সামাজিক-অর্থনৈতিক প্রভাব কেমন হবে, তা আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই স্পষ্ট হয়ে যাবে। ডিসেম্বরের শুরুতেই দামের নতুন ছবি স্পষ্ট হবে, আর তখনই বোঝা যাবে এই সিদ্ধান্ত সুরাপ্রেমী, ব্যবসায়ী ও সরকারের জন্য কতটা লাভজনক বা চ্যালেঞ্জের।


