কলকাতা: রাজ্যের ভোটার তালিকা হালনাগাদ প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার আগে থেকেই ভোট কমিশন জোর দিয়েছে বুথ লেভেল অফিসার (BLO training) দের দক্ষতা বৃদ্ধিতে। শনিবার থেকেই রাজ্যজুড়ে শুরু হয়েছে বিএলওদের প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, যা চলবে ৩ নভেম্বর পর্যন্ত। পরদিন অর্থাৎ ৪ নভেম্বর থেকেই শুরু হবে বাড়ি বাড়ি গণনাপর্ব।
নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা গিয়েছে, এই প্রশিক্ষণের মূল উদ্দেশ্য হলো বিএলওদের ‘BLO অ্যাপ’-এর ব্যবহার, লগইন প্রক্রিয়া, প্রযুক্তিগত প্রয়োগ, গণনা ফর্ম পূরণের নিয়ম এবং তথ্য যাচাইয়ের ধাপগুলি ভালোভাবে শেখানো। প্রশিক্ষণে অংশ নেওয়া প্রতিটি আধিকারিককে দেওয়া হচ্ছে একটি বিশেষ কিট যাতে থাকছে পরিচয়পত্র, টুপি এবং প্রয়োজনীয় নির্দেশিকা।
রাজ্যের মোট ৮০ হাজারেরও বেশি বিএলও এবার প্রশিক্ষণ নেবেন। ভবিষ্যতে বুথ পুনর্বিন্যাসের সম্ভাবনা মাথায় রেখে নির্বাচন কমিশন অতিরিক্ত ১৪ হাজার বিএলওর তালিকাও তৈরি করেছে। একই সঙ্গে বিএলওদের নিরাপত্তা বিষয়েও জোর দেওয়া হয়েছে। এ নিয়ে রাজ্য পুলিশের নোডাল আধিকারিক আনন্দ কুমারের সঙ্গে কমিশনের নিয়মিত যোগাযোগ চলছে।
সূত্র অনুযায়ী, গণনা ফর্ম ছাপার কাজও প্রায় ৮৫ শতাংশ সম্পূর্ণ। অবশিষ্ট ফর্ম ছাপা হবে ২ নভেম্বরের মধ্যে। শনিবার রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ আগরওয়ালের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় এক বৃহৎ প্রস্তুতি বৈঠক। উপস্থিত ছিলেন ২৯৪ জন ইআরও (Electoral Registration Officer), তিন হাজারের বেশি এইআরও (Assistant ERO) এবং রাজ্যের ২৪ জন জেলা আধিকারিক। দিল্লি থেকে ভার্চুয়ালি যোগ দেন নির্বাচন কমিশনের প্রযুক্তি বিভাগের মহাপরিচালক সীমা খান্না।
এই বৈঠকে বিএলও অ্যাপ ব্যবহারের খুঁটিনাটি ও গণনা ফর্ম পূরণের প্রক্রিয়া নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। মনোজ আগরওয়াল জানান, “ভোটার তালিকা সংশোধনের ক্ষেত্রে এবার সম্পূর্ণ ডিজিটাল প্রক্রিয়ায় নজরদারি হবে, যাতে ভুলত্রুটি কমে।”
অন্যদিকে, বুথ লেভেল এজেন্ট (BLA)-দের প্রশিক্ষণও শুরু হচ্ছে রবিবার থেকে, যা ৩ নভেম্বরের মধ্যেই শেষ করার নির্দেশ দিয়েছে কমিশন। তবে, বিএলএ নিয়োগের গতি আশানুরূপ না হওয়ায় উদ্বেগে রয়েছে নির্বাচন কমিশন।
তথ্য বলছে, পশ্চিমবঙ্গে মোট ভোটার সংখ্যা প্রায় ৭ কোটি ৬৬ লক্ষ ২৪ হাজার, যেখানে বিএলও আছেন ৮০,৬৮১ জন, কিন্তু বিএলএ মাত্র ১৮,১১৪ জন। সংখ্যার এই বৈষম্য কমিশনের মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তুলনায় দেখা যায়, উত্তরপ্রদেশে ১৫ কোটি ৪৪ লক্ষ ভোটার, বিএলও ১,৬২,৪৮৬ জন, আর বিএলএ ১,৯২,৯৮৬ জন। আবার রাজস্থানে ৫ কোটি ৪৮ লক্ষ ভোটার থাকলেও বিএলও ৫২,৪৯০ জন এবং বিএলএ ৯৭,৮৭৩ জন।
অর্থাৎ, পশ্চিমবঙ্গে বিএলএ নিয়োগের হার উল্লেখযোগ্যভাবে কম, যা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে কমিশনের অন্দরে। এক আধিকারিক বলেন, “বিএলএ নিয়োগ কম থাকলে ভোটার যাচাই প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়। দ্রুত নিয়োগ না হলে ভবিষ্যতের নির্বাচনী প্রস্তুতি প্রভাবিত হতে পারে।”
