টেট কাণ্ডে হাই কোর্টে রাজ্যের ‘দাগি’ সংখ্যা প্রকাশে বাড়ল চাঞ্চল্য

wb-primary-teacher-recruitment-scam-high-court-update

কলকাতা: বহুল আলোচিত প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগ মামলায় রাজ্য সরকারের তরফে বড় দাবি সামনে এল। মঙ্গলবার কলকাতা হাইকোর্টের বিভাগীয় বেঞ্চে রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল কিশোর দত্ত জানান, সিবিআই–এর চার্জশিট অনুযায়ী ৩২ হাজার প্রাথমিক শিক্ষক নিয়োগে নয়, অনিয়ম হয়েছে মাত্র ৩৬০ জন প্রার্থীর ক্ষেত্রে।

Advertisements

এই ৩৬০ জনের মধ্যে ৯৬ জন টেট–২০১৪ পরীক্ষায় অকৃতকার্য ছিলেন, আর বাকিদের ২৬৪ জনকে এক নম্বর অতিরিক্ত দেওয়া হয়েছিল যা আদালত পরে বেআইনি ঘোষণা করেছিল। সেই ২৬৪ জনের চাকরিও ইতিমধ্যে বাতিল করেছে পশ্চিমবঙ্গ প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদ।

   

অফারের নেশায় একাধিক কার্ড? জেনে নিন এর ঝুঁকি ও ফলাফল

এই মামলায় শুনানি চলছে বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী ও রীতব্রত মিত্রের বেঞ্চে। বুধবারই মামলার শুনানি শেষ হওয়ার সম্ভাবনা। মঙ্গলবারের শুনানিতে কিশোর দত্ত জানান, ‘‘সিবিআই তদন্তে স্পষ্ট হয়েছে— বোর্ডের নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কেবলমাত্র ছাপা এবং প্রশাসনিক কাজের জন্যই বেসরকারি সংস্থা ‘এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি’-কে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। এই সংস্থা প্রার্থীদের যোগ্যতা নির্ধারণ বা মেধা–মূল্যায়নের কোনও কাজ করেনি।’’

তিনি আদালতে বোর্ডের অ্যাড–হক কমিটি-র ২০১৬ সালের ৪ অক্টোবরের সভার কার্যবিবরণীও পেশ করেন। ওই বৈঠকের রেজলিউশনে দেখা যায়, বোর্ড ১.২৫ লক্ষ আবেদনকারীর অনলাইন আবেদন গ্রহণ, ফি সংগ্রহ, জেলা–ভিত্তিক ইন্টারভিউ তালিকা তৈরি ও মার্কশিট ছাপানোর কাজই শুধু ওই সংস্থাকে দিয়েছিল। ‘‘এগুলো ছিল সম্পূর্ণ ক্লারিকাল কাজ,’’ যুক্তি দেন দত্ত।

এরপর তিনি বোর্ডের এক বিজ্ঞপ্তি আদালতে জমা দেন, যেখানে বলা হয়েছে— জেলা পর্যায়ে সাক্ষাৎকারের তালিকা যাচাই ও প্রার্থীদের নথি যাচাইয়ের জন্য গঠিত হয়েছিল উপ–কমিটি, যেখানে ছিলেন সরকারি আধিকারিকেরা— যেমন ডিআই, এআই, এবং এসআই। পাশাপাশি, সাক্ষাৎকারের বোর্ডে ছিলেন কলেজ ও হাইস্কুল শিক্ষকেরা। ‘‘এস বসু রায় অ্যান্ড কোম্পানি কোনও মূল্যায়নের কাজই করেনি,’’ স্পষ্ট বক্তব্য দত্তের।

Advertisements

শুনানিতে বিচারপতি তপব্রত চক্রবর্তী প্রশ্ন করেন, ‘‘বোর্ড সভাপতি কেন এসব তথ্য হলফনামায় উল্লেখ করেননি?’’ উত্তরে অ্যাডভোকেট জেনারেল জানান, আগের একক বেঞ্চের রায়েই বলা হয়েছিল যে এই তথ্যের জন্য আলাদা হলফনামা প্রয়োজন নেই।

এরপর আদালত জানতে চায়, বোর্ড কি কখনও চূড়ান্ত প্যানেল প্রকাশ করেছিল? উত্তরে দত্ত বলেন, বোর্ড প্যানেল তৈরি করেছিল এবং জেলা–ভিত্তিক তালিকা জেলা প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের দফতরে প্রকাশ করা হয়েছিল। তবে মামলাকারীদের আইনজীবীদের অভিযোগ, নিয়ম অনুযায়ী চূড়ান্ত তালিকা প্রকাশ করার দায়িত্ব বোর্ডের, জেলা পর্ষদের নয়। আরও অভিযোগ উঠে নিচু র‌্যাঙ্কের প্রার্থীরা অনেক ক্ষেত্রে উচ্চ র‌্যাঙ্কধারীদের আগে চাকরি পেয়েছেন।

এই প্রসঙ্গে রাজ্যের পক্ষে দত্তের যুক্তি, ‘‘ওই তুলনামূলক চার্টটি বিভ্রান্তিকর। তা বাংলা–মাধ্যম স্কুলের প্রার্থীদের ভিত্তিতে তৈরি হলেও, তুলনা করা হয়েছে সাঁওতালি–মাধ্যম প্রার্থীদের সঙ্গে। এমনকি কেউ কেউ নিজ জেলার বদলে অন্য জেলার প্রার্থীদের সঙ্গে তুলনা করেছেন।

এতে বাস্তব চিত্র বিকৃত হয়েছে।’’ অন্যদিকে, মামলাকারীদের পক্ষে আইনজীবী তরুণ জ্যোতি তিওয়ারি আদালতে দাবি করেন, ‘‘রিজার্ভ ক্যাটেগরির নিয়োগে প্রকৃত জালিয়াতি হয়েছে। অনেক যোগ্য প্রার্থী বঞ্চিত হয়েছেন।’’