কলকাতা: দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার লড়াইয়ে বারবার প্রশাসনিক দেয়ালে আঘাত লাগছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের (Transgender Community)। সম্প্রতি এসআইআর ফর্ম নিয়ে নতুন বিতর্ক তৈরি হয়েছে। কমিশনের নির্দেশিকা অনুযায়ী যে ১১টি নথি এসআইআর ফর্ম পূরণের জন্য গ্রহণযোগ্য বলে ধরা হয়েছে, তার মধ্যে ট্রান্সজেন্ডার কার্ড-এর নাম নেই। ফলে লিঙ্গ পরিবর্তনকারী, রূপান্তরকামী এবং তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের এক বড় অংশ এবার বাস্তব সমস্যায় পড়েছেন।
অনেকেই জানিয়েছেন, পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আসার পর তাঁদের পুরনো নথি হারিয়ে গেছে বা ইচ্ছাকৃতভাবে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কেউ কেউ জানিয়েছেন, পরিবারের হাতে তাঁদের আধার বা ভোটার কার্ড ছিল সেগুলিও পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ফলে নতুন করে আবেদন করলেও আপডেট হওয়া কাগজপত্র এখনও হাতে মেলেনি। এই অবস্থায়, ট্রান্সজেন্ডার কার্ড ছাড়া অন্য কোনও সরকারি নথি তাঁদের কাছে নেই।
প্রশ্ন উঠছে এসআইআর ফর্ম তাঁদের ঠিকানায় কীভাবে পৌঁছাবে? কারণ অনেকেরই স্থায়ী ঠিকানা নেই, অনেকে আশ্রয়কেন্দ্র বা বন্ধুর বাড়িতে থাকেন। যাঁরা পরিবার থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, তাঁদের কাছে কোনও সরকারি চিঠিও পৌঁছায় না। ফলে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফর্ম পূরণ সম্ভব হচ্ছে না।
কলকাতা ভিত্তিক এলজিবিটিকিউ সংগঠনের এক সদস্য বলেন, “সরকার আমাদের ট্রান্সজেন্ডার কার্ড দিয়েছে নাগরিক পরিচয়ের স্বীকৃতি হিসেবে, অথচ আজ সেটাই ফর্মে গ্রহণ করছে না। এটা সরাসরি বৈষম্য।” সংগঠনটির মতে, এসআইআর প্রক্রিয়ায় সচেতনতার অভাব ও নির্দেশিকার অস্পষ্টতা থেকেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে।
অনেকে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন, এই পরিস্থিতি তাঁদের নাগরিকত্ব নিয়েও প্রশ্ন তুলতে পারে। এক রূপান্তরিত নারী বলেন, “আগে পরিবার আমাদের ঘরছাড়া করেছিল, এবার দেশই হয়তো তাড়িয়ে দেবে।”
মানবাধিকার কর্মীদের মতে, সরকারের উচিত ট্রান্সজেন্ডার কার্ডকে আনুষ্ঠানিকভাবে বৈধ নথি হিসেবে গ্রহণ করা। কারণ এটি সমাজে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের অস্তিত্বের সরকারি স্বীকৃতি বহন করে। তাঁরা দাবি জানিয়েছেন, কমিশনের উচিত দ্রুত নতুন নির্দেশিকা প্রকাশ করা, যাতে ট্রান্সজেন্ডার ও রূপান্তরিত ব্যক্তিরা নাগরিক হিসেবেই গণনা প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারেন।
একাধিক সংগঠন জানিয়েছে, প্রশাসন যদি তাঁদের দাবির প্রতিক্রিয়া না জানায়, তাহলে তাঁরা আদালতের দ্বারস্থ হবেন। তাঁদের বক্তব্য, “আমরা নাগরিক হিসেবে অধিকার চাই সহানুভূতি নয়।”
মানবাধিকার কর্মী ও সামাজিক কর্মীদের দাবি, এই ঘটনা কেবল প্রশাসনিক ভুল নয়, এটি সমাজের গভীরে থাকা বৈষম্যের প্রতিফলন। তৃতীয় লিঙ্গের মানুষদের নাগরিক পরিচয় অস্বীকার করা মানে তাঁদের অস্তিত্বকে অস্বীকার করা।


