কলকাতা: পুজো শেষে যখন বাঙালির রান্নাঘরে উৎসবের রেশ এখনও বজায়, ঠিক তখনই বাজারে গিয়ে মাথায় হাত সাধারণ গৃহস্থের। কারণ, সবজির দাম যেন রীতিমতো রোলার কোস্টারের মতো ওঠানামা করছে। একদিকে পেঁয়াজ, টমেটো, লঙ্কা এই তিন ‘অপরিহার্য’ রান্নাঘরের উপকরণের দাম ছুঁয়েছে আকাশ, অন্যদিকে কিছু সবজির দামে সামান্য হলেও স্বস্তি মিলছে।
বুধবার সকাল থেকে কলকাতা ও আশেপাশের বাজারে পেঁয়াজের দাম ছিল প্রধান আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু। বড় পেঁয়াজের দাম কেজি প্রতি ২৬ থেকে ৪৩ টাকার মধ্যে ঘোরাফেরা করছে। ছোট পেঁয়াজ আরও দামী, প্রতি কেজিতে ৪৯ থেকে ৮১ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। বিক্রেতারা বলছেন, দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলো থেকে সরবরাহ কমে যাওয়ায় বাজারে চাপ তৈরি হয়েছে।
টমেটোও দিচ্ছে গৃহস্থদের ঘাম ছুটিয়ে। বর্তমানে টমেটোর কেজি প্রতি দাম ২৩ থেকে ৩৮ টাকার মধ্যে। গত সপ্তাহে যে টমেটো ১৮ টাকায় বিক্রি হয়েছিল, সেটি এখন প্রায় দ্বিগুণ দামে পৌঁছে গেছে। হুগলি, নদিয়া ও হাওড়া জেলার বাজারে টমেটোর ঘাটতি তৈরি হয়েছে বলে পাইকাররা জানিয়েছেন। অন্যদিকে কাঁচা লঙ্কার দাম এখনও আগুন। কেজি প্রতি ৪২ থেকে ৬৯ টাকা পর্যন্ত উঠেছে। আবহাওয়া অনুকূলে না থাকায় এবং অতিরিক্ত বৃষ্টির কারণে চাষে ক্ষতি হয়েছে বলে জানিয়েছেন চাষিরা।
তবে এই বাড়তি দামের মধ্যে কিছুটা হলেও স্বস্তি মিলছে আলু, লাউ, ও বাঁধাকপির মতো সবজিতে। আলুর দাম বর্তমানে ২৮ থেকে ৪৬ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহের তুলনায় সামান্য কম। লাউ মিলছে ২৯ থেকে ৪৮ টাকায়, আর বাঁধাকপি ৩০ থেকে ৫০ টাকার মধ্যে। চাষিরা আশা করছেন, আগামী সপ্তাহে নতুন ফসল উঠলে দাম আরও কিছুটা কমবে।
বিট, গাজর ও ফুলকপির দামও তুলনামূলক স্থিতিশীল। বিটরুটের দাম কেজি প্রতি ৩০ থেকে ৫০ টাকা, গাজর ৪৪ থেকে ৭৩ টাকা, আর ফুলকপি ৩২ থেকে ৫৩ টাকার মধ্যে। উৎসবের পর সবজির চাহিদা কিছুটা কমায় বাজারে স্থিতি ফিরছে বলে মত বিশেষজ্ঞদের।
তবে যে সবজিগুলি এখন গৃহস্থের চিন্তার কারণ, তার মধ্যে অন্যতম করলা, ক্যাপসিকাম ও বেবিকর্ন। করলার দাম ৩৪ থেকে ৫৬ টাকা, ক্যাপসিকাম ৪০ থেকে ৬৬ টাকা, আর বেবিকর্ন কেজি প্রতি ৪৮ থেকে ৭৯ টাকা। এই তিন সবজির দাম গত এক মাসে প্রায় ২৫ শতাংশ বেড়েছে।
অন্যদিকে ডালপাতা, ধনেপাতা, পাটপাতা বা কচুশাকের দামেও বড় ওঠানামা দেখা যাচ্ছে। ধনেপাতা কেজি প্রতি ১৩ থেকে ২১ টাকায় পাওয়া যাচ্ছে। যদিও শহরের বাজারে মান ভালো এমন পাতাযুক্ত শাকের দাম এখনও উঁচু। কৃষি বিপণন দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, “দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া ও বন্যার কারণে দক্ষিণবঙ্গে সরবরাহে ব্যাঘাত ঘটেছে। উত্তরবঙ্গ থেকেও ট্রান্সপোর্ট কম হচ্ছে। পরের সপ্তাহে পরিস্থিতি কিছুটা স্বাভাবিক হলে দাম স্থিতিশীল হতে পারে।”
গৃহস্থদের এখন কৌশলে বাজার করতে পরামর্শ দিচ্ছেন বাজার বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, স্থানীয় সবজির উপর নির্ভর করলে কিছুটা স্বস্তি মিলবে। তাছাড়া শীতের শুরুতেই নতুন মৌসুমের সবজি যেমন ফুলকপি, গাজর, মটরশুঁটি এগুলি বাজারে আসতে শুরু করলে দামে স্বাভাবিকতা ফিরবে।
একদিকে সবজির দাম বাড়তি, অন্যদিকে আবহাওয়ার অস্থিরতা এই দুইয়ের মাঝে বাঙালির রান্নাঘরে চিন্তা বাড়ছে ঠিকই, তবে আশার কথা, আগামী পনেরো দিনের মধ্যেই নতুন ফসল বাজারে পৌঁছলে আবার সবজির ঝুড়ি কিছুটা হালকা হবে বলেই আশা সাধারণের।