কলকাতা: আবারও মন্তব্য ঘিরে রাজনৈতিক বিতর্কে বিজেপির বর্ষীয়ান নেতা এবং প্রাক্তন রাজ্যপাল তথাগত রায়। স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস নিয়ে তাঁর সাম্প্রতিক পোস্টই নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে। বিংশ শতাব্দীতে মুসলমান সমাজের মধ্যে স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সংখ্যা নিয়ে তাঁর মন্তব্যকে ঘিরে ইতোমধ্যেই শোরগোল রাজনীতির অন্দরে-বাইরে।
তথাগত রায় তাঁর এক্স হ্যান্ডেলে লিখেছেন, বিংশ শতাব্দীতে যাঁদের নাম উল্লেখ করা যায় তাঁদের মধ্যে মাত্র তিনজন মুসলিমকে স্বাধীনতা সংগ্রামী নাম দেওয়া হয়েছে। তারা হলেন, আশফাকুল্লা খান, খান আব্দুল গাফ্ফার খান এবং মৌলানা আবুল কালাম আজাদ। তিনি দাবি করেছেন, “খুব বেশি হলে আরও দু’জন হতে পারে, কিন্তু দশজন কিছুতেই নয়।”
সিপাহী বিদ্রোহকে ‘মুঘল সাম্রাজ্যের পুনঃপ্রতিষ্ঠা’ মন্তব্যে বিস্ফোরক তথাগত
তাঁর মতে, স্বাধীনতা সংগ্রামে জড়িত থাকার যে দাবি বর্তমানে বিভিন্ন ক্ষেত্র থেকে করা হচ্ছে, তার অনেকটাই অতিরঞ্জিত। এমনকি তিনি প্রশ্ন তুলেছেন আন্দামানের সেলুলার জেলে মুসলিম স্বাধীনতা সংগ্রামীদের উপস্থিতি নিয়েও। তাঁর বক্তব্য, “আন্দামানে কেউ যায়নি, ফাঁসিতেও কেউ ঝোলেনি। কেউ স্বাধীন ভারতে রাষ্ট্রপতি হয়েছেন, কেউ বড় উকিল, কেউ হয়তো বই লিখেছেন এদের সকলকে স্বাধীনতা সংগ্রামী বলে চালানোর চেষ্টা চলছে।”
এই মন্তব্য মুহূর্তের মধ্যেই তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে রাজনৈতিক মহলে। ইতিহাস নিয়ে এমন সার্বিক মন্তব্য কতটা গ্রহণযোগ্য, সেটি নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় তৈরি হয়েছে তুমুল আলোচনা। ইতিহাসবিদ এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের একাংশের মতে, স্বাধীনতা সংগ্রামের পরিধি বিস্তৃত এবং বহুস্তরীয়।
শুধু সশস্ত্র লড়াই বা কারাবরণই নয়, বরং বিভিন্ন সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অসহযোগ আন্দোলনকেও স্বাধীনতা সংগ্রামের অংশ হিসেবে ধরা হয়। তাই কোনো নির্দিষ্ট সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণকে সংখ্যার হিসেবে বিচার করাকে অনেকেই ‘অসম্পূর্ণ ব্যাখ্যা’ হিসেবে দেখছেন।
অন্যদিকে, বিজেপির কিছু নেতা তথাগত রায়ের বক্তব্যকে “ঐতিহাসিক সত্যের ভিত্তিতে করা মন্তব্য” বলে সমর্থন করেছেন। তাঁদের দাবি, স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাসে অতীতের নথিপত্র নির্ভর যাচাই হওয়া প্রয়োজন। একইসঙ্গে এই ধরনের বিতর্ক সামনে এলে প্রকৃত তথ্য জানার আগ্রহ বাড়ে বলেও তাঁরা মনে করেন।
তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, এ ধরনের মন্তব্য সমাজে বিভাজন বাড়ায় এবং স্বাধীনতা সংগ্রামের সম্মিলিত চরিত্রকে আঘাত করে। তাঁদের অভিযোগ, দেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল বহু ধর্ম ও ভাষার মানুষের সম্মিলিত প্রয়াস কোনো সম্প্রদায়ের অবদান কমিয়ে দেখা একধরনের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত প্রচেষ্টা।
শিক্ষামহলের বেশ কিছু অধ্যাপকের মতে, স্বাধীনতা আন্দোলনকে বিচার করতে গেলে শুধু কারাবাস বা ফাঁসির মঞ্চই একমাত্র মানদণ্ড নয়। বঙ্গীয় মুসলিম সমাজ থেকে রাজনৈতিক নেতৃত্ব, সাংবাদিকতা, বিপ্লবী সংগঠন, অসহযোগ আন্দোলন, খিলাফত আন্দোলনসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। তাই এইভাবে কোনো বিষয়ের সহজীকরণ উচিত নয়।
