বধূ নির্যাতনের অভিযোগেই সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার নয়, হাইকোর্টের সাফ বার্তা

বধূ নির্যাতন নিয়ে বহুদিন ধরেই দেশে বিতর্ক চলেছে। দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়েনে অনেকসময় আইনকেই হাতিয়ার করা হয় ‘প্রতিশোধ’ নেওয়ার জন্য—এমন অভিযোগ বারবার উঠেছে। সেই বিতর্কের প্রেক্ষিতে…

supreme-court deports srilankan

বধূ নির্যাতন নিয়ে বহুদিন ধরেই দেশে বিতর্ক চলেছে। দাম্পত্য জীবনের টানাপোড়েনে অনেকসময় আইনকেই হাতিয়ার করা হয় ‘প্রতিশোধ’ নেওয়ার জন্য—এমন অভিযোগ বারবার উঠেছে। সেই বিতর্কের প্রেক্ষিতে এলাহাবাদ হাইকোর্ট একটি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশিকা জারি করেছিল, যাতে ৪৯৮-এ ধারার অপব্যবহার ঠেকানো যায়। এবার সেই নির্দেশিকাকে আইনি স্বীকৃতি দিল দেশের শীর্ষ আদালত—সুপ্রিম কোর্ট।

Advertisements

মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি ডিওয়াই চন্দ্রচূড়ের নেতৃত্বে গঠিত বিচারপতি বিআর গভাই ও বিচারপতি এজি মাসিহর ডিভিশন বেঞ্চ এক বধূ নির্যাতন মামলার শুনানিতে এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশিকাকে সঠিক বলে স্বীকৃতি দেয়। বেঞ্চ স্পষ্ট জানায়, “বধূ নির্যাতন আইনের অপব্যবহার বন্ধে যা যা বলা হয়েছে, তা এখন থেকে দেশজুড়ে কার্যকর হবে। পুলিশ ও প্রশাসন বাধ্যতামূলকভাবে এই নীতিমালা অনুসরণ করবে।”

Advertisements

কী বলা হয়েছিল এলাহাবাদ হাইকোর্টের নির্দেশিকায়?

হাইকোর্ট বলেছিল, ৪৯৮-এ ধারার মামলায় কোনও অভিযোগ উঠলেই সঙ্গে সঙ্গে গ্রেফতার নয়। আগে বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। অভিযোগটি সত্যি না কি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, তা তদন্তের আগে পুলিশ কাউকে গ্রেফতার করতে পারবে না। শুধু অভিযোগকারী স্ত্রীর বয়ানে বিশ্বাস করে শ্বশুরবাড়ির সব সদস্যকে থানায় টেনে এনে হেনস্থা করা যাবে না। বরং জেলা স্তরে একটি ‘ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ার কমিটি’ গড়ে সেই কমিটির রিপোর্টের ভিত্তিতেই পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।

সুপ্রিম কোর্ট কী বলল?

সুপ্রিম কোর্ট তার পর্যবেক্ষণে জানায়, ৪৯৮-এ ধারাটি মহিলাদের সুরক্ষার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু এর অপব্যবহারও সমাজে একটি বড় সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেকসময় দেখা যাচ্ছে, সামান্য গার্হস্থ্য কলহকেও বধূ নির্যাতনের অভিযোগে রূপান্তর করা হচ্ছে। শুধুমাত্র স্বামীর উপর নয়, শ্বশুর, শাশুড়ি, ননদ বা দেওরের বিরুদ্ধেও মামলা করা হচ্ছে, এমনকি তারা দূরে থাকলেও। এতে শুধুমাত্র অভিযুক্তদের সামাজিক সম্মান ক্ষুণ্ণ হচ্ছে না, বরং আসল সমস্যা থেকেও দৃষ্টি সরে যাচ্ছে।

প্রধান বিচারপতির বেঞ্চ জানিয়েছে, “বিধানসভা এই আইন প্রণয়ন করেছিল নারীদের সুরক্ষার জন্য, কিন্তু বর্তমানে বহু ক্ষেত্রেই সেই উদ্দেশ্য ব্যর্থ হচ্ছে। অপব্যবহারের হার যেভাবে বাড়ছে, তা রুখতেই হাইকোর্টের নির্দেশিকা অত্যন্ত সময়োপযোগী।”

আইন থাকুক, কিন্তু সতর্কতার সঙ্গে প্রয়োগ হোক

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই রায়ে একদিকে যেমন ৪৯৮-এ ধারার গুরুত্ব অক্ষুণ্ণ রইল, তেমনই এ-ও স্পষ্ট করা হল যে, কেউ যেন এই আইনকে নিজের ব্যক্তিগত প্রতিশোধের হাতিয়ার করতে না পারেন। আদালতের মতে, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে আরও বেশি সংবেদনশীল ও দায়িত্বশীল হতে হবে। শুধুমাত্র অভিযোগের ভিত্তিতে কাউকে হেনস্থা করা বা গ্রেফতার করা হলে, তা আইনের অপব্যবহার হিসেবেই গণ্য হবে।

সমাজে কী প্রভাব পড়তে পারে?

এই রায় ভবিষ্যতে বধূ নির্যাতন সংক্রান্ত মামলায় একটি দিশা দেখাবে বলেই মনে করছেন আইনজ্ঞরা। এতে যেমন সত্যিকারের নির্যাতিতারা বিচার পাবেন, তেমনই মিথ্যা মামলায় কেউ হয়রানিও হবেন না। পাশাপাশি, বিবাহিত জীবনের সমস্যাগুলিকে আলোচনার মাধ্যমে মেটানোর সুযোগও তৈরি হবে।

সুপ্রিম কোর্টের এই রায় একাধারে বিচারবুদ্ধি, মানবিকতা ও আইনের ভারসাম্য রক্ষা করার এক দুর্দান্ত দৃষ্টান্ত বলেই মনে করছেন সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষ।