কলকাতা, ১২ নভেম্বর: পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ ইস্যুতে ফের বড় মোড়। প্রাতিষ্ঠানিক দুর্নীতির দায়ে ২০১৬ সালের নিয়োগ বাতিল হয়ে যাওয়ার পর থেকে স্কুল সার্ভিস কমিশনের (এসএসসি) ‘নন-টেন্টেড’ চাকরিহারা প্রার্থীদের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে। বহু লড়াই, মামলা, এবং পুনঃপরীক্ষার পর যখন নতুন আশার আলো দেখা যাচ্ছিল, তখনই ফের নতুন মামলা ঘিরে তৈরি হয়েছে প্রবল অনিশ্চয়তা।
১৩,৮০০ ‘নন-টেন্টেড’ শিক্ষক-শিক্ষিকা, যাঁরা সততা ও যোগ্যতার মাধ্যমে নিজেদের যোগ্য প্রমাণ করেছিলেন, এখন ফের আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছেন। তাঁদের বক্তব্য, “আমরা যখনই চাকরির মুখে দাঁড়াই, তখনই কেউ না কেউ নতুন মামলা করে নিয়োগ প্রক্রিয়া থামিয়ে দেয়।”
বাজেট ২০২৬-এ বড় করছাড়ের ইঙ্গিত? পিএইচডিসিআই দিল নতুন প্রস্তাব
বিতর্কের কেন্দ্রে রয়েছে “অভিজ্ঞতার জন্য অতিরিক্ত ১০ নম্বর” বরাদ্দের বিষয়টি। এসএসসি জানিয়েছিল, শিক্ষকতার পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকলে প্রার্থীদের ১০ নম্বর পর্যন্ত বাড়তি প্রাপ্তি হতে পারে। এই বিধিটি জুলাই মাসে একবার চ্যালেঞ্জ করা হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে, যা পরবর্তীতে সিঙ্গল বেঞ্চ, ডিভিশন বেঞ্চ এবং সুপ্রিম কোর্ট সব জায়গাতেই খারিজ হয়ে যায়।
তবুও চলতি মাসে ফের একই বিষয়ে নতুন মামলা দায়ের হয়েছে হাইকোর্টে। আজ বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চে এই মামলার শুনানি হয়। বিচারপতি জানান, যেহেতু একই বিষয় সুপ্রিম কোর্টে বিচারাধীন এবং ২৬ নভেম্বর সেখানে শুনানি নির্ধারিত রয়েছে, তাই আপাতত কলকাতা হাইকোর্ট কোনো নির্দেশ দিচ্ছে না। তবে শুনানিতে একাধিক প্রশ্ন ওঠে।
আদালত জানতে চায়, “নবম-দশম শ্রেণির জন্য যারা আবেদন করেছে, তারা যদি একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির নিয়োগে আবেদন করে, তাহলে কি তারা অভিজ্ঞতার ১০ নম্বর পেতে পারে?” এই প্রশ্নে কমিশনের অবস্থান নিয়েও তৈরি হয় ধোঁয়াশা।
চাকরিহারা শিক্ষক-প্রার্থীরা মনে করছেন, “যেভাবেই হোক ২০২৫ সালের নিয়োগ প্রক্রিয়া থামাতে চাইছে একদল মানুষ।” ‘যোগ্য শিক্ষক শিক্ষিকা অধিকার মঞ্চ’-এর মুখপাত্র চিন্ময় মণ্ডল বলেন, “হাইকোর্টের সিঙ্গল ও ডিভিশন বেঞ্চ, এমনকি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত এই একই বিষয়ে মামলা খারিজ করেছে। তারপরেও একই বিষয় নিয়ে নতুন মামলা দায়ের করা হচ্ছে—এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত।”
তিনি আরও বলেন, “সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতিরা স্পষ্ট বলেছেন, নন-টেন্টেড শিক্ষকরা ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত চাকরিতে বহাল থাকবেন, কারণ তাঁরা যোগ্যতার সঙ্গে ৫-৬ বছর কাজ করেছেন। তাঁদের অভিজ্ঞতার নম্বর দেওয়া হলে তাতে আপত্তি কেন?” অন্যদিকে, এসএসসি কেন আদালতকে আগের রায় সম্পর্কে অবহিত করেনি, তা নিয়েও উঠেছে প্রশ্ন। শিক্ষা মহলের একাংশের দাবি, এই অবহেলা নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আরও জটিল করে তুলেছে।
‘যোগ্য’ প্রার্থীদের আইনজীবী রাকেশ আলম বলেন, “একদল আইনজীবী শুধুমাত্র রাজনৈতিক কারণে নিয়োগ প্রক্রিয়াকে আটকে দিতে চাইছেন। যত দেরি হবে, তাঁদের তত লাভ।” প্রশ্ন উঠছে, একবার সুপ্রিম কোর্টে নিষ্পত্তি হয়ে যাওয়ার পর একই বিষয়ে নতুন মামলা করা কতটা আইনসঙ্গত? আইনজ্ঞদের মতে, একই ইস্যুতে নতুন মামলা দায়েরের অনুমতি আদালত সাধারণত দেয় না, যদি না নতুন কোনো তথ্য উঠে আসে।
এদিকে, শিক্ষক সমাজে বাড়ছে উদ্বেগ। এক প্রাক্তন প্রার্থী বলেন, “আমরা পরীক্ষা দিয়েছি, ইন্টারভিউ দিয়েছি, লিখিত ফল প্রকাশ হয়েছে। এখন শুধু নিয়োগের অপেক্ষা। কিন্তু বারবার মামলা আর স্থগিতাদেশ আমাদের মানসিকভাবে ভেঙে দিচ্ছে।” অন্যদিকে, হাইকোর্টে পরবর্তী শুনানির আগে এসএসসি আইনজীবীদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে সমস্ত মামলার নথি এবং আগের রায়ের কপি জমা দিতে।


