কলকাতা: বহু বিতর্ক, অভিযোগ এবং দীর্ঘ আইনি লড়াইয়ের পর অবশেষে প্রকাশ্যে এল স্কুল সার্ভিস কমিশনের (SSC Tainted List 3512 Published) ‘দাগি’ নিয়োগপ্রাপ্তদের পূর্ণাঙ্গ তালিকা। এই তালিকা গ্রুপ–সি এবং গ্রুপ–ডি পদের ৩৫১২ জন কর্মীর নাম, রোল নম্বর, অভিভাবকের নাম, জন্মতারিখ এবং পোস্টসহ সম্পূর্ণ তথ্য প্রকাশ করেছে। আদালতের কড়া নির্দেশের পরই এই পদক্ষেপ নিতে বাধ্য হয়েছে এসএসসি।
এতদিন পর্যন্ত শুধু রোল নম্বর এবং নাম দেওয়া ছিল দাগিদের তালিকায়। কিন্তু সেই তালিকা দেখে কোনও ভাবেই নিশ্চিত হওয়া যাচ্ছিল না আসলে কোন জনই বা বেআইনিভাবে চাকরি পেয়েছেন। একই নামে বহু মানুষ থাকতে পারে এই যুক্তিটি আদালতই স্পষ্ট করে দিয়েছিল। তাই স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ব্যক্তিগত পরিচিতি সংক্রান্ত তথ্য যুক্ত করে খোলা ডোমেনে আনার নির্দেশ দেয় কলকাতা হাইকোর্ট।
ভারতীয় অন্তরীক্ষ স্টেশনের নকশা চূড়ান্ত, এর সম্পূর্ণ পরিকল্পনা এবং খরচ জানুন
সেই নির্দেশের ‘গুঁতোয়’ অবশেষে স্কুল সার্ভিস কমিশন আজ বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করতে বাধ্য হয়েছে। আজকের তালিকায় প্রতিটি নামের পাশে স্পষ্ট করে উল্লেখ রয়েছে সেই ব্যক্তিটি ঠিক কোন পদে কাজ করতেন। তিনি কি গ্রুপ–সি-র ক্লার্ক ছিলেন? না গ্রুপ–ডি-র পিয়ন বা সহায়ক কর্মী? এই তথ্যের সঙ্গে রয়েছে পূর্ণাঙ্গ জন্মতারিখ এবং অভিভাবকের নাম। অর্থাৎ পরিচয় নির্দিষ্ট করতে প্রয়োজনীয় সব তথ্যই এবার তুলে দেওয়া হয়েছে জনসমক্ষে।
এই তালিকা প্রকাশ পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই রাজনৈতিক মহলে এবং স্কুল শিক্ষা মহলে আলোড়ন তৈরি হয়েছে। কারণ, ৩৫১২ জন শিক্ষক–কর্মী বছরের পর বছর ধরে চাকরি করছিলেন। বহু স্কুলের দৈনন্দিন কার্যক্রমে তাঁরা যুক্ত ছিলেন। আর আজ আদালতের নির্দেশে তাঁরা ‘বেআইনি নিয়োগপ্রাপ্ত’ হিসেবে চিহ্নিত হলেন। বহু পরিবারের মাথায় অনিশ্চয়তার কালো মেঘ নেমে এসেছে। স্কুল প্রশাসনেরও দুশ্চিন্তা—হঠাৎ করে এমন সংখ্যক কর্মী বাদে স্কুল চালানো সম্ভব হবে কি?
এসএসসি যদিও নিজেদের অবস্থান পরোক্ষভাবে বোঝাতে চেষ্টা করছে তারা আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেছে মাত্র। কিন্তু সাধারণ মানুষের মনে প্রশ্ন উঠছে যদি আদালত নির্দেশ না দিত, তবে কি এই তালিকা প্রকাশ পেত? এতদিন কেন এই পরিচয়–সংক্রান্ত তথ্য লুকিয়ে রাখা হয়েছিল? আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কেবল নাম–রোল দিয়ে তালিকা প্রকাশ করা ছিল ‘আধা–অস্পষ্ট’ স্বচ্ছতা।
‘বাস্তবে এটি কোনও সাহায্য করছিল না। কারণ একই নামের বহু মানুষ থাকতে পারে, একই রোল–ফর্ম্যাটেও ভুল বোঝাবুঝি তৈরির সুযোগ থাকে। এ অবস্থায় জন্মতারিখ, পিতামাতার নাম ও পোস্ট যোগ করাই ছিল স্বচ্ছতার প্রকৃত পথ।
তদন্ত–সংক্রান্ত মহলের মতে, এই তালিকা স্বচ্ছ হয়ে যাওয়ায় এখন দাগিদের সত্যিকারের পরিচয় নিয়ে আর কোনও বিভ্রান্তি থাকবে না। তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হবে। পাশাপাশি, যারা ভুলবশত নিজেদের নাম তালিকায় আছে ভেবে উদ্বেগে ছিলেন, তারাও বিষয়টি পরিষ্কার করতে পারবেন।
অন্যদিকে শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির গোটা ইস্যুতে এই ঘটনা নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের পূর্ববর্তী নির্দেশের ধারাবাহিকতায় নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় একের পর এক নথি, তথ্য, তালিকা প্রকাশ্যে আসছে। জনসাধারণের চাপ এবং আদালতের কঠোর অবস্থান দুটিই মিলে এসএসসিকে বাধ্য করছে পুরনো ‘অস্বচ্ছ’ নথিগুলি খুলে বলতে।
এদিকে দাগিদের পরিবারে উদ্বেগের পাশাপাশি রয়েছে ক্ষোভও। তাঁরা দাবি করছেন, এসএসসি তাঁদের ভুল পথে ঠেলে দিয়েছে। কিন্তু আদালত স্পষ্ট করেছে যে যার নিজের নথি যাচাই করেনি, সেই দায় ব্যক্তিরও। সব মিলিয়ে, আজকের তালিকা প্রকাশ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির তদন্ত–যাত্রায় আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এখন নজর মূলত আদালতের পরবর্তী নির্দেশ এবং প্রশাসনের পরবর্তী পদক্ষেপেই আটকে।


