কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গ স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC)–এর নিয়োগ দুর্নীতি নিয়ে এতদিনে যা কিছু সামনে এসেছে, তাতেই রাজ্যের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আস্থা নড়বড়ে হয়ে গেছে। কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টের একাধিক রায়ের পর মনে হয়েছিল, এবার হয়তো নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফিরবে। আদালত স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছিল একবার যার নাম “দুর্নীতিগ্রস্ত তালিকায়” উঠে এসেছে, তাকে কোনোভাবেই ভবিষ্যতের পরীক্ষায় সুযোগ দেওয়া যাবে না। কিন্তু বাস্তবে ঘটছে তার উল্টো চিত্র।
বিজেপি নেতা এবং আইনজীবী তরুণজ্যোতি তিওয়ারির সাম্প্রতিক অভিযোগে ফের তৈরি হয়েছে তীব্র বিতর্ক। তাঁর দাবি SSC আবারও দুর্নীতির রাস্তা অবলম্বন করছে কিংবা বলা ভালো, পুরোনো অভ্যেসে ফিরেছে। যে প্রার্থী আগে চিহ্নিত হয়েছিল “চাকরি চোর” হিসেবে, সেই একই ব্যক্তি নাকি এবার নতুন তালিকায় জায়গা করে নিয়ে ইন্টারভিউ কল পর্যন্ত পেয়ে গেছে।
অভিযোগের কেন্দ্রে উঠে এসেছে একটি নাম নীতিশ রঞ্জন বর্মন। তরুণজ্যোতির বক্তব্য অনুযায়ী, নীতিশ রঞ্জন বর্মনের নাম আগের যে দাগি তালিকা আদালতের নির্দেশে প্রকাশ করেছিল SSC, তাতে ছিল। আর আশ্চর্যের বিষয়, সদ্য প্রকাশিত নতুন লিস্টেও একই নাম দেখা গেছে। শুধু তাই নয় এইবার তাকে PH (Persons with Disabilities) ক্যাটাগরিতে দেখিয়ে ইন্টারভিউর জন্য ডেকে পাঠানো হয়েছে।
অভিযোগ আরও ঘনীভূত হয়েছে কারণ নীতিশ রঞ্জন বর্মনের পরিবারের পক্ষ থেকে পাওয়া তথ্যের সঙ্গে সরকারি নথির মিল নেই। এতে সন্দেহ আরও গভীর হয়েছে এরা কি দুই আলাদা ব্যক্তি, নাকি একই ব্যক্তি একাধিকবার সুবিধা নিচ্ছেন? তরুণজ্যোতি তিওয়ারির বক্তব্য, “যদি দু’জন আলাদা হন, তাহলে কমিশনের উচিত তা জনসমক্ষে স্পষ্ট করা। আর যদি একই ব্যক্তি হন, তবে SSC-কে অবিলম্বে দায় স্বীকার করতে হবে। আদালতের চোখে ধুলো দেওয়ার চেষ্টা করলে তারা রেহাই পাবে না।”
এখানেই প্রশ্ন উঠছে আদালতের কড়া শর্ত থাকা সত্ত্বেও এই ধরনের ভুল কীভাবে সম্ভব? বিচারপতি বারবার বলেছেন “দাগি প্রার্থীদের একজনও যদি পরীক্ষায় বসে বা নম্বর পায়, তার ফল ভালো হবে না।” তবুও SSC–র তালিকায় এমন পুনরাবৃত্তি কি নিছক ভুল, নাকি ইচ্ছাকৃত অস্বচ্ছতা? রাজ্যের প্রশাসনিক মহলে চলছে ফিসফাস।
অনেকেই বলছেন এটা শুধু “অফিসিয়াল ভুল” নয়; বরং দীর্ঘদিন ধরে চলা দুর্নীতির চক্র এখনও অক্ষত রয়েছে। আদালত যাই বলুক, কমিশনের ভেতরে কিছু অংশ এখনো আগের মতোই কাজ করছে নিয়ম ভেঙে, প্রভাব খাটিয়ে, আর প্রার্থীদের জীবন নিয়ে ছেলেখেলা করে।
তরুণজ্যোতি তাঁর পোস্টে আরও মন্তব্য করেছেন “চোর হাজার বুঝিয়েও বদলায় না। SSC আর রাজ্য সরকারও সেই একই পথে হাঁটছে। যে দুর্নীতি আটকাতে এত লড়াই হলো, তা এখনও বন্ধ হয়নি।” এই ঘটনায় সাধারণ মানুষের প্রশ্ন বারবার আদালত সতর্ক করার পরও SSC–র এমন কাজ কীভাবে চলতে পারে? তালিকা তৈরি করার আগে তালিকা যাচাইয়ের মতো ন্যূনতম কাজটুকুও করা হয় না কেন? একবার দাগ লাগা নাম কীভাবে আবার সুযোগ পায়?
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক চাপানউতোরও তীব্র হচ্ছে। বিরোধীরা বলছে এটা প্রমাণ করে যে পশ্চিমবঙ্গের নিয়োগ ব্যবস্থা আজও “দুর্নীতির আঁতুড়ঘর”। অন্যদিকে, রাজ্য সরকারের তরফে এখনো কোনো আনুষ্ঠানিক প্রতিক্রিয়া পাওয়া যায়নি। তবে বাস্তবতা একটাই একজন দাগি প্রার্থীকে আবার ইন্টারভিউর ডাক পাওয়া রাজ্যের হাজার হাজার চাকরি-প্রত্যাশীর মনে ভরসাহীনতা বাড়িয়ে দিয়েছে। আদালতের হস্তক্ষেপ ছাড়া এই দুর্নীতির চক্র ভাঙা কি আদৌ সম্ভব? প্রশ্ন এখন রাজ্যের মানুষদের।


