মেধা নেই, ‘ম্যানিপুলেশন’-ই ভরসা এসএসসিতে?

ssc-recruitment-controversy-west-bengal-merit-scam

কলকাতা: পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক নিয়োগ ব্যবস্থাকে ঘিরে আবারও চাঞ্চল্য। অভিযোগ উঠছে, মেধা আর যোগ্যতা নয় এবার নিয়োগ পরিণত হয়েছে এক প্রহসনে। এসএসসি XI–XII নিয়োগ প্রক্রিয়ায় এমন বহু প্রার্থী রয়েছেন, যারা লিখিত OMR-এ ৬০-এর মধ্যে ৬০, এবং অ্যাকাডেমিকে ১০-এর মধ্যে ১০ নম্বর পেয়েও ইন্টারভিউয়ের জন্য ডাক পাননি। প্রার্থীদের কথায়, “এটি আর পরীক্ষা নয়, এটি মেধার দিনের আলোয় ডাকাতি।”

Advertisements

নানাবিধ অভিযোগে ইতিমধ্যেই চাপে থাকা রাজ্যের শিক্ষা দফতর ও তৃণমূল সরকার নতুন করে সমালোচনার মুখে পড়েছে। প্রার্থীদের দাবি, “যোগ্যতম” প্রার্থীদের বঞ্চিত রেখে “পছন্দের” তালিকা তৈরি হচ্ছে, যেখানে মেধার বদলে ক্ষমতার কাছে নম্বর তুচ্ছ হয়ে পড়েছে। এই বিতর্কের সবচেয়ে বড় বিস্ফোরণ এসেছে ১০ নম্বর ‘এক্সপিরিয়েন্স মার্কস’ নিয়ে। প্রার্থীদের অভিযোগ, এই নম্বর ইন্টারভিউ বোর্ড দেওয়ার কথা থাকলেও তা আগেই “হাতে হাতে বিলানো” হচ্ছে।

   

WhatsApp চ্যাটিংয়ে বড় বদল, মেসেজ টাইপ করলেই মিলবে স্টিকার সাজেশন

আরও বিস্ফোরক অভিযোগ এই নম্বর সবাইকে দেওয়া হচ্ছে না। বরং সুবিধা পাচ্ছেন শুধুমাত্র সেইসব প্রার্থী, যাদের পুরনো নিয়োগ প্যানেল হাই কোর্ট ও সুপ্রিম কোর্ট দুই আদালতই বাতিল করে দিয়েছিল। অভিযোগকারীদের মতে, এটি যেন এক নতুন ব্যবস্থা, নতুন পদ্ধতি যেখানে “বাতিল প্যানেলের প্রাক্তন শিক্ষক”-দের ফের সুযোগ দেওয়ার জন্য বিশেষ রাস্তা তৈরি করা হয়েছে। কিন্তু সেই পুনর্বাসনের রাজনীতিতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে প্রকৃত মেধাবীরা।

Advertisements

বহু প্রার্থী বলছেন, যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও সুযোগ না পাওয়ার দুঃখের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে হতাশা ও ক্ষোভ। কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছেন, “যদি সিস্টেম আগেই ঠিক হয়ে থাকে, তাহলে এই পরীক্ষা নেওয়ারই বা কী দরকার?” তাদের বক্তব্য, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় বারবার আদালতের হস্তক্ষেপ, প্যানেল বাতিল হওয়া, দুর্নীতির অভিযোগ এসবই প্রমাণ করছে, রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা ধীরে ধীরে অনাস্থার গহ্বরে ডুবে যাচ্ছে।

বিরোধী শিবির ইতিমধ্যেই সরকারের বিরুদ্ধে কড়া সুর তুলেছে। তাদের দাবি, রাজ্যের চাকরি ব্যবস্থায় দুর্নীতির পাহাড় তৈরি হয়েছে, আর এই ‘এক্সপিরিয়েন্স মার্কস’ তার সর্বশেষ উদাহরণ।কেউ কেউ বলছে “যতদিন এই সরকার থাকবে, ততদিন মেধার শাস্তি হবে আর দুর্নীতির পুরস্কার। রাজ্য প্রতিভাবানদের দমন করছে।”

শিক্ষা বিশ্লেষকদের মতে, এভাবে চলতে থাকলে রাজ্যে মেধাভিত্তিক কর্মসংস্থানের ভবিষ্যৎ গভীর সংকটে পড়বে। তরুণ সমাজে হতাশা বাড়লে তার প্রভাব পড়বে বৃহত্তর সামাজিক কাঠামোতেও। বর্তমানে প্রার্থীদের মধ্যে দুইটাই প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে মেধা কি আদৌ মূল্য পাবে? নাকি নিয়োগ চলবে আগের মতোই ক্ষমতা ও প্রভাবের অদৃশ্য সুতোয়? এই প্রশ্নের উত্তরই হয়তো নির্ধারণ করবে, বাংলার আগামী প্রজন্ম রাজ্যের প্রতি কতটা আস্থা রাখবে।