কলকাতা, ৩ ডিসেম্বর: স্কুল সার্ভিস কমিশনের (Calcutta High Court SSC ) নিয়োগ দুর্নীতি মামলার তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই বাড়ছে স্বচ্ছতার দাবি। এই আবহেই নতুন নির্দেশ দিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। ২০১৬ সালের গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি নিয়োগের ক্ষেত্রে যাঁরা ‘আনটেন্টেড’ বা যাঁদের বিরুদ্ধে কোনও অভিযোগ নেই, সেই যোগ্য প্রার্থীদের বিস্তারিত তালিকা আগামী ৮ ডিসেম্বরের মধ্যেই প্রকাশ করতে হবে—এমনটাই জানালেন বিচারপতি সিনহা।
এটি কোনও সাধারণ নির্দেশ নয়। গত কয়েক বছরে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষাক্ষেত্রে যে দুর্নীতি, ঘুষ লেনদেন, বেআইনি নিয়োগের অভিযোগ নিয়ে ব্যাপক ক্ষোভ জন্মেছে, সেই প্রেক্ষিতে এই নির্দেশকে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলা হচ্ছে। এর আগে বিচারপতি সিনহা নির্দেশ দিয়েছিলেন, ২০১৬ সালের শিক্ষক নিয়োগ প্যানেলের মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরে কাদের বেআইনিভাবে নিয়োগ করা হয়েছে, তাদের পূর্ণ তালিকা দিতে হবে। এবার তিনি বললেন যোগ্য প্রার্থীদের স্বচ্ছ তালিকাও প্রকাশ করতে হবে, যাতে কোনওভাবেই সন্দেহের অবকাশ না থাকে।
SIR জটিল নয়, স্বচ্ছ রাখুন: বাংলার সাংসদদের কড়া বার্তা মোদীর, লক্ষ্য ২০২৬
এই নির্দেশের পেছনে আরেকটি মানবিক দিকও রয়েছে। ২০১৬ সালের পরীক্ষায় বসা বহু ছাত্র-ছাত্রী আজ বয়সের দিক থেকে নিয়মের বাইরে চলে গেছেন। সেই কঠোর বাস্তবতা তুলে ধরে সুপ্রিম কোর্ট আগেই জানিয়েছিল, তাঁদের বয়সে ছাড় দিতে হবে, যাতে তাঁরা আবার আবেদন করতে পারেন।
বিচারপতি সিনহার মতে, এসব প্রার্থীই প্রকৃতভাবে নিয়োগের দাবি রাখেন। তাই তাঁদের নাম-ঠিকানা-যোগ্যতা-রোল নাম্বার-ইউনিক তথ্যসহ বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করা জরুরি। এই তালিকা প্রকাশের ফলে তারা ২০২৫ সালের নতুন পরীক্ষায় আবেদন করার সুযোগ নিশ্চিতভাবে পাবেন।
এদিকে SSC ইতিমধ্যেই গ্রুপ-সি ও গ্রুপ-ডি পদের নতুন পরীক্ষার জন্য আবেদনপত্র গ্রহণ শুরু করেছে। ৩ ডিসেম্বর ছিল শেষ দিন। কিন্তু আবেদনকারীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করে তা বাড়িয়ে ৮ ডিসেম্বর পর্যন্ত করা হয়েছে। স্কুল শিক্ষাদফতরের তথ্য বলছে—গ্রুপ-সি-তে শূন্যপদ রয়েছে ২৯৮৯টি, গ্রুপ-ডি-তে ৫৪৮৮টি। এত বড় সংখ্যক শূন্যপদে যোগ্য প্রার্থী নিয়োগের জন্য স্বচ্ছতা অতি জরুরি। আর সেখানেই বিচারপতি সিনহার নির্দেশকে এক বড় পদক্ষেপ বলে মনে করা হচ্ছে।
ইতিমধ্যেই আদালত নির্দেশ দিয়েছে যাঁরা ‘অযোগ্য’ বা নিয়োগ দুর্নীতির সঙ্গে যুক্ত বলে অভিযুক্ত, অর্থাৎ যাঁদের নিয়োগ বাতিল হয়েছে বা যাঁরা ঘুষ-দুর্নীতির অংশ তাঁদের তালিকাও প্রকাশ করতে হবে। সেই তালিকা প্রকাশিত হয়েছে। এবার ‘যোগ্য’দের তালিকা দেওয়ার নির্দেশ এল। অর্থাৎ পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটিই এখন জনগণের সামনে একেবারে স্বচ্ছভাবে তুলে ধরার পথে এগোচ্ছে আদালত।
শিক্ষাজগতে এই নির্দেশের গুরুত্ব আরও বেশি। গত কয়েক বছরে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় বহু আলোড়ন, গ্রেফতার, বিক্ষোভ, অনশন দেখা গেছে। যোগ্য চাকরিপ্রার্থীরা রাস্তা থেকে আদালত সব জায়গায় লড়াই করেছেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও অযোগ্য ও প্রভাবশালীরা ঘুষ দিয়ে চাকরি পেয়ে যাচ্ছেন। আদালতের এই পদক্ষেপ তাঁদের লড়াইকে আরও শক্ত ভিত্তি দিচ্ছে।
শিক্ষা আন্দোলনকারীদের মতে, এই নির্দেশ শুধুমাত্র একটি তালিকা প্রকাশের নয় এটি যোগ্যতার স্বীকৃতি, সম্মান এবং বিশ্বাস ফিরিয়ে আনার প্রচেষ্টা। ভবিষ্যতের পরীক্ষায় যোগ্যরাই সুযোগ পাবেন, এই বার্তাই দিতে চাইছে আদালত। এখন নজর ৮ ডিসেম্বরের দিকে।
SSC কি নির্ধারিত সময়ের মধ্যে এই বিস্তারিত তালিকা প্রকাশ করতে পারে? আর তালিকা প্রকাশের পর কত দ্রুত যোগ্য প্রার্থীরা নতুন পরীক্ষায় আবেদন করতে পারবেন? সেই প্রশ্নগুলোর উত্তরই নির্ধারণ করবে আগামী দিনের নিয়োগ প্রক্রিয়ার গতি।

