ভাইফোঁটায় কালীঘাটে ফের শোভন চট্টোপাধ্যায়, তৃণমূলে জল্পনা

কলকাতা: মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কালীঘাটের বাড়ির ভাইফোঁটা মানেই রাজনীতির সঙ্গে উৎসবের এক মিশ্র ছবি। রাজ্যের মন্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক থেকে শুরু করে প্রশাসনের শীর্ষ কর্মকর্তারা এই দিনে হাজির হন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে। এই বছরের ভাইফোঁটা অনুষ্ঠানে ছিল এক বিশেষ আকর্ষণ তৃণমূল কংগ্রেসের প্রাক্তন নেতা, কলকাতা পুরসভার প্রাক্তন মেয়র ও প্রাক্তন মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায় (Sovan Chatterjee)। তাঁর সঙ্গে ছিলেন বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়।

Advertisements

২০১৯ সালে বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর শোভন চট্টোপাধ্যায় এবং তৃণমূলের সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল। তৃণমূলের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা নেতার দলত্যাগ তৎকালীন সময়ে দলকে নাড়া দিয়েছিল। বিজেপিতে যোগ দিয়েও খুব বেশি দিন সক্রিয় ছিলেন না তিনি। এরপর ধীরে ধীরে তিনি রাজনীতির আলোচনার আড়ালে চলে যান। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সম্পর্কের বরফ গলতে শুরু করে। গত বছর ভাইফোঁটার সময়ও মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাড়িতে তাঁর উপস্থিতি নজর কেড়েছিল।

এবার পরিস্থিতি একেবারে অন্য। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি তাঁকে নিউ টাউন কলকাতা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (NKDA)-র চেয়ারম্যান পদে নিয়োগ করেছেন। অর্থাৎ, প্রশাসনে তাঁর প্রত্যাবর্তন এখন সরকারিভাবে নিশ্চিত। এই প্রেক্ষাপটে ভাইফোঁটার দিন তাঁর কালীঘাটে উপস্থিতি যে রাজনৈতিক দিক থেকেও তাৎপর্যপূর্ণ, তা বলাই বাহুল্য।

বৃহস্পতিবার দুপুরে বৈশাখী বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে শোভন হাজির হন মুখ্যমন্ত্রীর বাড়িতে। মুখ্যমন্ত্রী নিজে ফোঁটা দেন তাঁকে। অনুষ্ঠান চলাকালীন দু’জনের মধ্যে হাস্যোজ্জ্বল আলাপচারিতা নজর কাড়ে উপস্থিতদের। রাজনৈতিক মহলের মতে, এই দৃশ্যই ইঙ্গিত দিচ্ছে— পুরনো সম্পর্কের বরফ গলছে দ্রুত।

Advertisements

তৃণমূল সূত্রের খবর, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে শোভনের সাম্প্রতিক সাক্ষাৎ এবং মুখ্যমন্ত্রীর প্রশাসনিক আস্থা— দুই মিলিয়ে তাঁর তৃণমূলে পুনরাগমন এখন কার্যত সময়ের অপেক্ষা। দলের একাংশের মতে, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে পুরনো দক্ষ নেতাদের ফের এক ছাতার নিচে আনতে চাইছেন। শোভন চট্টোপাধ্যায় সেই কৌশলেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হতে পারেন।

অন্যদিকে, ভাইফোঁটার দিনে কালীঘাটে উপস্থিত ছিলেন আরও অনেক তৃণমূল নেতা-নেত্রী। হাসি-আনন্দের আবহের মধ্যেই চলেছে আড্ডা, ফোঁটা, আর রাজনৈতিক আলাপচারিতা। তবুও সবার নজর ছিল শোভনের দিকে। কালীঘাটের মঞ্চে তাঁর ফেরা যেন এক প্রতীকী বার্তা— “দূরত্ব যতই থাক, মমতা এখনও নিজের মানুষদের ভুলে যাননি।”

রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের প্রশাসনিক প্রত্যাবর্তন তৃণমূলের সাংগঠনিক কাঠামোয় নতুন ভারসাম্য আনতে পারে। একদা কলকাতার প্রশাসনের মুখ হিসেবে যিনি পরিচিত ছিলেন, তাঁর অভিজ্ঞতা এবং সংযোগ তৃণমূলের শহরাঞ্চলে প্রভাব বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নিতে পারে।