কলকাতা: দিল্লির বিস্ফোরণের ঘটনায় দেশজুড়ে যখন আতঙ্কের ছায়া, ঠিক তখনই তৎপরতা শুরু করেছে কলকাতা পুলিশও। দিল্লি বিস্ফোরণের পর নাশকতার সম্ভাবনা উড়িয়ে দিচ্ছে না কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা। এর মধ্যেই কলকাতার নিরাপত্তা ব্যবস্থা পর্যালোচনা ও আপৎকালীন সতর্কতা জারি করতে লালবাজারে পুলিশের (Kolkata Police) শীর্ষ আধিকারিকদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন নগরপাল। বৈঠক শেষে শহরের প্রতিটি থানাকে বাড়তি সতর্কতার নির্দেশ পাঠানো হয়েছে।
দিল্লির লালকেল্লা সংলগ্ন এলাকায় ঘটে যাওয়া ভয়াবহ বিস্ফোরণে চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে গোটা দেশে। বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে বহু দূর পর্যন্ত তা অনুভূত হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছেন। ঘটনার পরপরই দিল্লি পুলিশ তদন্তে নামে এবং সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তিন দিনের জন্য লালকেল্লা বন্ধ রাখার ঘোষণা করা হয়। পাশাপাশি ফরিদাবাদে বিস্ফোরক উদ্ধার হওয়ায় দুই ঘটনার মধ্যে সংযোগ রয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখছেন গোয়েন্দারা।
এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে নাশকতার আশঙ্কা প্রবল হওয়ায় কলকাতাতেও বাড়তি সতর্কতা নেওয়া হয়েছে। লালবাজার সূত্রে খবর, বৈঠকে পুলিশ কমিশনার স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন— শহরে কাউকেই অযথা ঘোরাঘুরি করতে দেখা গেলে বা সন্দেহজনক মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে নজরদারির আওতায় আনতে হবে।
সেই সঙ্গে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে নাকা চেকিং আরও জোরদার করতে হবে, তবে এক জায়গায় স্থির না থেকে পয়েন্ট পরিবর্তন করে চেকিং চালাতে হবে, শহরের হোটেল, লজ, গেস্ট হাউসে বহিরাগতদের তথ্য পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে সংগ্রহ করতে হবে, কে, কোথা থেকে এসেছে, কেন এসেছে এবং কতদিন থাকবে তা নথিভুক্ত করতে হবে, মেট্রো স্টেশন, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এবং বিমানবন্দরের নিরাপত্তা কয়েকগুণ বাড়ানো হয়েছে, শহরের গুরুত্বপূর্ণ মোড়, বাজার, জনবহুল এলাকা ও বাণিজ্য কেন্দ্রগুলিতে টহল বাড়ানো হয়েছে, কোনও সন্দেহজনক বার্তা বা কার্যকলাপ দেখা মাত্রই দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।
কলকাতা পুলিশ সূত্রে খবর, আরপিএফ ও মেট্রো কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয় করে নিরাপত্তা পরিকল্পনা আরও আঁটোসাঁটো করা হয়েছে। মেট্রো স্টেশনগুলিতে যাত্রী প্রবেশের সময় ব্যাগ ও সামগ্রী পরীক্ষার মাত্রা বাড়ানো হয়েছে। সিসিটিভি ফুটেজ লাইভ মনিটরিংয়ে রাখা হচ্ছে।
শুধু শহরের ভিতর নয়, কলকাতায় ঢোকার সমস্ত প্রবেশপথেও নাকা তল্লাশি শুরু হয়েছে। সেকেন্ড হুগলি ব্রিজ, টালা ব্রিজ, কলকাতা–হাওড়া সংযোগ সড়ক, যশোর রোড, বি.টি. রোড, ইএম বাইপাস, সায়েন্স সিটি সংলগ্ন এলাকা সব জায়গাতেই দেখা যাচ্ছে পুলিশের তল্লাশি। মোটরবাইক, চারচাকা থেকে শুরু করে গণপরিবহণেও চলছে তল্লাশি অভিযান।
উৎসব মরশুম শেষ হলেও শীতের আগমনের সাথে সাথে শহরে ভিড় বাড়ছে। পর্যটকের সংখ্যা বাড়তে শুরু করেছে কলকাতায়। এই অতিরিক্ত ভিড়ের সুযোগ যাতে কোনও নাশকতামূলক কার্যকলাপের কাজে লাগানো না যায়, তাই নিরাপত্তা ব্যবস্থা দ্বিগুণ করা হয়েছে বলে জানিয়েছে লালবাজার।
পুলিশের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিক বলেন, “শহরের নিরাপত্তা বজায় রাখতে সব ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই, তবে নাগরিকদের সতর্ক থাকতে হবে।”
পুলিশের পক্ষ থেকে সাধারণ মানুষের প্রতিও অনুরোধ জানানো হয়েছে কোথাও সন্দেহজনক বস্তু বা ব্যক্তি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে জানান। কোনও অচেনা ব্যক্তি অপ্রয়োজনে এলাকায় ঘোরাফেরা করলে সতর্ক করুন। গুজবে কান দেবেন না, আতঙ্ক ছড়াবেন না।
পরিস্থিতি এখন সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও, সামগ্রিক নিরাপত্তার স্বার্থে আগামী কয়েক দিন শহরে নজরদারি আরও বাড়ানো হবে বলে জানিয়েছে কলকাতা পুলিশ।


