কলকাতা: রাতের শহর এখন আলোয় ঝলমল। কিন্তু সেই আলোর ঝলকানিই ধীরে ধীরে পরিণত হচ্ছে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে। রাজ্যের বিভিন্ন রাস্তায় লাগানো তীব্র উজ্জ্বল এলইডি লাইট (LED streetlight) ও গাড়িতে ব্যবহৃত অতিরিক্ত হেডলাইট চালকদের জন্য বিপদের কারণ হয়ে উঠছে — এমনই উদ্বেগ জানাল জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস। সংগঠনের সম্পাদক তপন বন্দ্যোপাধ্যায় এই বিষয়ে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন রাজ্যের পরিবহণমন্ত্রী স্নেহাশিস চক্রবর্তী এবং পরিবহণসচিব সৌমিত্র মোহন-এর কাছে।
চিঠিতে সংগঠনটির দাবি, বর্তমানে সরকারের উদ্যোগে শহর ও জেলায় যেভাবে এলইডি লাইট বসানো হয়েছে, তার তীব্র উজ্জ্বলতা অনেক ক্ষেত্রেই গাড়িচালকদের দৃষ্টিশক্তিতে ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে। বিশেষ করে রাতের বেলায় এই লাইটের ঝলকানি চোখে পড়লে সাময়িক অন্ধত্ব তৈরি হয়, ফলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
তপন বন্দ্যোপাধ্যায় চিঠিতে লেখেন, “রাতের বেলায় গাড়ি চালানোর সময় যখন চালকের চোখে ওই তীব্র আলো পড়ে, তখন চোখে জ্বালা করে, লাল হয়ে যায়, এমনকি চোখ দিয়ে জলও পড়ে। এর ফলে মনোযোগ নষ্ট হয়, আর সেটাই অনেক সময় দুর্ঘটনার কারণ হয়।”
সংগঠনের তরফে আরও জানানো হয়েছে, শুধু রাস্তার আলো নয়, বর্তমানে অনেক ব্যক্তিগত ও বাণিজ্যিক গাড়িতেও লাগানো হচ্ছে অতিরিক্ত উজ্জ্বল হেডলাইট, যা আইনবিরুদ্ধ। বিপরীত দিক থেকে আসা গাড়ির তীব্র আলো চালকের চোখে পড়ে দিক নির্ণয় কঠিন করে দেয়। অনেক সময় এই অবস্থাতেই ঘটে যায় ভয়াবহ দুর্ঘটনা।
সংগঠনের অভিযোগ, ফুড ডেলিভারি সংস্থার কর্মীরা, যারা রাতের সময় বাইক চালিয়ে দ্রুত গতিতে চলাচল করেন, তাঁরাও এই আলোর প্রভাবে দুর্ঘটনার শিকার হচ্ছেন। অতিরিক্ত উজ্জ্বল এলইডি লাইট তাদের গাড়ির দিক হারিয়ে ফেলতে বাধ্য করছে।
এই পরিস্থিতিতে জয়েন্ট কাউন্সিল অফ বাস সিন্ডিকেটস সরকারের কাছে অনুরোধ করেছে একটি নির্দিষ্ট নির্দেশিকা তৈরি করতে, যেখানে স্পষ্টভাবে বলা থাকবে — রাস্তার আলো কতটা তীব্র হবে, কোন কোণে ও উচ্চতায় আলো বসানো নিরাপদ, গাড়ির হেডলাইটের সর্বোচ্চ উজ্জ্বলতা কত হওয়া উচিত।
সংগঠনের বক্তব্য, সরকার যদি দ্রুত এই বিষয়ে ব্যবস্থা নেয় এবং সঠিক মানদণ্ড স্থির করে দেয়, তাহলে অনেক দুর্ঘটনাই এড়ানো সম্ভব। পাশাপাশি, পুলিশ প্রশাসনেরও উচিত গাড়ির হেডলাইটে ব্যবহৃত অতিরিক্ত লাইট বা অননুমোদিত এলইডি পরীক্ষা করা।
পরিবহণ দফতরের এক কর্তা সূত্রে জানা গিয়েছে, বিষয়টি ইতিমধ্যেই গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে। আলোচনার মাধ্যমে খুব শিগগিরই নতুন নির্দেশিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হবে। বিশেষজ্ঞদের মতে, “আলো যেমন নিরাপত্তা বাড়ায়, তেমনই অতিরিক্ত আলো বিপদ ডেকে আনে। তাই পরিকল্পিত আলোকসজ্জাই নিরাপদ রাস্তাঘাটের মূল চাবিকাঠি।”


