স্কুল সার্ভিস কমিশন (SSC) অবশেষে প্রকাশ করল ৩৫১২ জন অযোগ্য প্রার্থীর তালিকা। দীর্ঘ আইনি লড়াই, বিচারবিভাগীয় পর্যবেক্ষণ এবং প্রশাসনিক টানাপোড়েনের পর এই গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিল কমিশন। সোমবার রাতে (৩ নভেম্বর ২০২৫) সন্ধ্যা ৭টা ৫৫ মিনিটে প্রকাশিত হয় এই তালিকা, যা রাজ্যজুড়ে শিক্ষা মহলে তীব্র আলোড়ন তুলেছে।
এই সিদ্ধান্ত অনেকের কাছেই এক ঐতিহাসিক মোড়। কারণ, ২০১৬ সালে স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠার পর থেকেই আন্দোলনে নামেন ‘যোগ্য’ প্রার্থীরা। তাঁরা বারবার দাবি জানিয়ে আসছিলেন, যেন নিয়োগে অযোগ্য ঘোষিত প্রার্থীদের নাম প্রকাশ করা হয়। আদালতের নির্দেশের পরও যখন সেই তালিকা প্রকাশ করা হচ্ছিল না, তখন সুপ্রিম কোর্ট কমিশনকে একাধিকবার তীব্র ভর্ৎসনা করে। অবশেষে আদালতের নির্দেশ মেনেই আজ প্রকাশিত হল বহুল প্রতীক্ষিত অযোগ্য প্রার্থীদের নামের তালিকা।
কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই তালিকায় যাঁদের নাম রয়েছে, তাঁরা নিয়োগ প্রক্রিয়ায় নিয়মবহির্ভূতভাবে চাকরি পেয়েছিলেন বলে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। তদন্তে উঠে এসেছে, বহু প্রার্থী পরীক্ষায় অংশ না নিয়েও কিংবা নির্ধারিত যোগ্যতা ছাড়াই চাকরি পেয়েছিলেন। ফলে আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী তাঁদের চাকরি বাতিল করা হয়েছে এবং নাম প্রকাশ করা হয়েছে সরকারি পোর্টালে।
কমিশনের চেয়ারম্যান জানান, “আমরা আদালতের নির্দেশ মেনেই এই তালিকা প্রকাশ করেছি। আমাদের লক্ষ্য নিয়োগ প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা ফিরিয়ে আনা এবং যোগ্য প্রার্থীদের ন্যায্য সুযোগ করে দেওয়া।” তিনি আরও বলেন, “যাঁরা প্রকৃত অর্থে যোগ্য, তাঁদের যেন আর কোনওভাবে বঞ্চিত না হতে হয়, সেটাই এখন আমাদের মূল লক্ষ্য।”
অন্যদিকে, যোগ্য প্রার্থীদের সংগঠন এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, “এটাই আমাদের ন্যায়বিচারের প্রথম ধাপ। আমরা দীর্ঘ নয় বছর ধরে এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে লড়াই করেছি। আদালত এবং কমিশনের এই পদক্ষেপে আমরা আশাবাদী যে এবার প্রকৃত যোগ্যরা চাকরিতে ফিরতে পারবেন।”
তবে এই পদক্ষেপে রাজ্যের শিক্ষা দপ্তরে নতুন করে প্রশাসনিক চাপ তৈরি হয়েছে। কারণ, এত সংখ্যক শিক্ষক ও কর্মী একযোগে অযোগ্য ঘোষিত হওয়ায় বহু স্কুলে শিক্ষক ঘাটতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। শিক্ষা দপ্তর জানিয়েছে, “কমিশনের নতুন পরীক্ষা ও নিয়োগ প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন করা হবে, যাতে স্কুলের পাঠদান স্বাভাবিক থাকে।”
এদিকে, আজ রাত ৮টা ৪ মিনিট থেকে গ্রুপ সি ও গ্রুপ ডি পদে নতুন করে আবেদন গ্রহণ শুরু করেছে এসএসসি। যাঁরা আগে পরীক্ষা দিয়েছিলেন কিন্তু যোগ্য প্রমাণিত হয়েছেন, তাঁরা পুনরায় পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। কমিশনের ওয়েবসাইটে সেই সংক্রান্ত বিজ্ঞপ্তিও প্রকাশিত হয়েছে।


