কলকাতা: দুর্গাপুজো ও কালীপুজো শেষ। এখন শহরজুড়ে ছটপুজোর প্রস্তুতি তুঙ্গে। প্রতি বছর এই সময় গঙ্গার ঘাটে হাজার হাজার ভক্ত সূর্যদেব ও দেবী ষষ্ঠীর আরাধনায় যোগ দেন। মূলত বিহার, উত্তরপ্রদেশ, ঝাড়খণ্ডের বাসিন্দারা এই পুজো পালন করলেও, কলকাতাতেও গত এক দশকে ছটপুজো ঘিরে উৎসবের আবহ তৈরি হয়। বাবুঘাট, বাগবাজার, প্রিন্সেপ ঘাট, রাজা কাঁদু ঘাট সহ শহরের একাধিক ঘাটে পুণ্যার্থীদের ভিড় চোখে পড়ে।
এই ভিড় সামলাতে ও যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পূর্ব রেল (Indian Railways) সিদ্ধান্ত নিয়েছে চক্ররেলের পরিষেবায় সাময়িক পরিবর্তন আনার। শনিবার রেলের শিয়ালদহ ডিভিশনের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানানো হয়েছে, আগামী সোমবার (২৭ অক্টোবর) এবং মঙ্গলবার (২৮ অক্টোবর) দুই দিন চক্ররেলের বেশ কয়েকটি ট্রেনের রুট সংক্ষিপ্ত, ঘুরপথে চালানো ও কিছু ট্রেন বাতিল করা হবে।
রেলের দেওয়া বিজ্ঞপ্তি অনুসারে, সোমবার একাধিক লোকাল শুধুমাত্র কলকাতা স্টেশন পর্যন্ত চলবে, আবার কিছু ট্রেন কলকাতা স্টেশন থেকেই শুরু হবে। একটি ট্রেন বারাসত পর্যন্ত সংক্ষিপ্ত রুটে চলবে। এছাড়াও, কিছু ট্রেন ঘুরপথে চালানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সর্বমোট ৯টি লোকাল ট্রেন সোমবার বাতিল থাকবে বলে জানা গেছে।
একইভাবে মঙ্গলবারও চক্ররেলের পরিষেবায় নিয়ন্ত্রণ থাকবে। বেশ কিছু ট্রেনের রুট সংক্ষিপ্ত করা হবে এবং কয়েকটি ট্রেন বিকল্প পথে চালানো হবে। ওই দিনও একাধিক ট্রেন বাতিল থাকবে বলে জানানো হয়েছে। রেলের পক্ষ থেকে যাত্রীদের আগাম ট্রেনের সময়সূচি দেখে যাত্রা পরিকল্পনা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
রেলের এক আধিকারিক বলেন, “ছটপুজোর সময় গঙ্গার ঘাট সংলগ্ন এলাকায় প্রচুর জনসমাগম হয়। নিরাপত্তা বজায় রাখতেই চক্ররেলের কিছু পরিষেবা সীমিত রাখা হচ্ছে। যাত্রীদের অনুরোধ করা হচ্ছে যাতে অযথা ভিড় না করেন এবং ঘোষিত সময়সূচি মেনে চলেন।”
চক্ররেল বা সার্কুলার লাইন শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণ পর্যন্ত এক গুরুত্বপূর্ণ রেল পরিষেবা। দমদম থেকে পাতিপুকুর, বাগবাজার, শোভাবাজার, বড়বাজার, কলকাতা স্টেশন, ইডেন উদ্যান, বিবাদী বাগ, প্রিন্সেপ ঘাট হয়ে মাঝেরহাট পর্যন্ত এই লাইন বিস্তৃত। বালিগঞ্জের সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর এই পরিষেবা আরও বেশি যাত্রীবান্ধব হয়ে উঠেছে। প্রতিদিন হাজার হাজার অফিসযাত্রী এই রুট ব্যবহার করেন। তাই ছটপুজোর দুই দিন এই পরিষেবা নিয়ন্ত্রণে থাকায় সাধারণ যাত্রীরা কিছুটা সমস্যার মুখে পড়বেন বলেই আশঙ্কা।
অন্যদিকে, কলকাতা পুলিশ ও কেএমডিএর পক্ষ থেকে ইতিমধ্যেই গঙ্গার ঘাটগুলিতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে। রেল প্রোটেকশন ফোর্স (RPF), সিভিক ভলান্টিয়ার এবং ডুবুরি দল মোতায়েন থাকবে বলে জানা গেছে। বিশেষ নজর থাকবে বাবুঘাট, প্রিন্সেপ ঘাট ও বাগবাজার ঘাটের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে।
প্রসঙ্গত, ছটপুজো মূলত সূর্যোপাসনার উৎসব। সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের সময় গঙ্গায় স্নান করে সূর্যদেবকে অর্ঘ্য নিবেদন করেন ভক্তরা। এই উপলক্ষে শহরজুড়ে ভোররাত থেকেই হাজার হাজার মানুষ গঙ্গার দিকে ছুটে যান। তাই সেই দিনগুলোয় রেল ও পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে বিশেষ সতর্কতা নেওয়া স্বাভাবিক।


