HomeWest BengalKolkata Cityঅমানবিক ডিউটি ও নিরাপত্তাহীনতায় পথে লোকো পাইলটরা

অমানবিক ডিউটি ও নিরাপত্তাহীনতায় পথে লোকো পাইলটরা

- Advertisement -

ভারতীয় রেলের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ও দায়িত্বপূর্ণ কর্মী লোকো পাইলট এবার প্রশ্ন তুললেন নিজেদের কাজের পরিবেশ, অমানবিক ডিউটি আওয়ার, জনবল ঘাটতি এবং নিরাপত্তাহীনতা নিয়ে। এই সমস্ত সমস্যার সমাধানে রেল প্রশাসন কোনো কার্যকর পদক্ষেপ না নেওয়ায় অল ইন্ডিয়া লুকো রানিং স্টাফ অ্যাসোসিয়েশন (AILRSA) ঘোষণা করেছে ৪৮ ঘণ্টার অনশন (Loco Pilot Protest) কর্মসূচি। ২ ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে এই অনশন শুরু হবে, যা সারাদেশেই আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু হয়ে উঠেছে।

লোকো পাইলটরা স্পষ্ট জানিয়েছেন—এই অনশনের উদ্দেশ্য রেলযাত্রীদের কষ্ট দেওয়া নয়; বরং দেশের রেল ব্যবস্থাকে আরও নিরাপদ করা এবং যেসব কাঠামোগত সমস্যার কারণে দুর্ঘটনা বাড়ছে, সেগুলোর প্রতি রেল বোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করা।

   

🚆 “রেলের নিরাপত্তা আমাদের কাঁধে, কিন্তু বিপদের দায়ও শুধু আমাদের?” — ক্ষোভ লোকো পাইলটদের

রেলওয়ে কর্মীদের অভিযোগ, দিনের পর দিন মানুষের জীবন বাজি রেখে কাজ করলেও যখনই কোনো দুর্ঘটনা ঘটে, তদন্তে প্রথমেই লোকো পাইলটদের দিকে আঙুল তোলা হয়।

এক সেকেন্ডের ভুল, এক মুহূর্তের ক্লান্তি—তার দাম দিতে হয় চাকরি হারিয়ে বা ডিমোশন হয়ে।

AILRSA-র মতে, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দুর্ঘটনার কারণ কর্মীদের ব্যক্তিগত ভুল নয়; বরং—

  • রেল প্রশাসনের ত্রুটিপূর্ণ নীতি

  • সিগন্যালিং ব্যবস্থার সমস্যা

  • অতিরিক্ত ডিউটি

  • কর্মীসংখ্যার বিশাল ঘাটতি

    —এই সবটাই দুর্ঘটনা বাড়ার প্রধান কারণ।

⏱️ ১২ ঘণ্টার বেশি ডিউটি—মানবিকতার সীমা অতিক্রম

রেলওয়ে বোর্ড ২০১৩ সালে নির্দেশ দেয়—লোকো পাইলটদের ডিউটি সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টা হওয়া উচিত।

কিন্তু বাস্তবে পরিস্থিতি ভিন্ন।

লোকো পাইলটদের দাবি—

  • ৮ ঘণ্টা ‘সাইন অন–সাইন অফ’ হিসেবে ধরা হলেও বাস্তবে

    ১০–১২ ঘণ্টা পর্যন্ত ডিউটি করানো হয়।

  • অনেক ক্ষেত্রে টানা ১৪–১৬ ঘণ্টা পর্যন্ত কাজ করানো হচ্ছে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি।

  • রাতের পর রাত জেগে কাজ, শারীরিক ও মানসিক ক্লান্তি—ফলে মনোযোগের ঘাটতি তৈরি হয়।

  • যাত্রাপথে লাইনে দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকতে হয়, যার ফলে কনসেন্ট্রেশন ভাঙে এবং ভুলের আশঙ্কা বাড়ে।

👥 ২০,০০০ পদ খালি—সারা দেশে লোকো পাইলট সংকট চরমে

বড় উদ্বেগের বিষয় হলো, ভারতীয় রেলে লোকো পাইলটের ৩১,২০০টি পদের মধ্যে ২০,০০০-রও বেশি পদ খালি

এর অর্থ—

যতজন কর্মীর প্রয়োজন, বাস্তবে তার এক-তৃতীয়াংশ মাত্র কাজ করছেন।

ফলে যারা রয়েছেন, তাঁদের ওপর চাপ অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে।

AILRSA-র বক্তব্য—

“লোকো পাইলটরা দেশের অর্থনৈতিক শিরা-উপশিরা বাঁচিয়ে রাখেন। কিন্তু তাঁদের সংখ্যা না বাড়িয়ে শুধু চাপ বাড়ানো হচ্ছে।”

💔 মানসিক স্বাস্থ্য ভেঙে পড়ছে—পারিবারিক জীবনও সংকটে

টানা রাত্রিকালীন ডিউটি, অনির্দিষ্ট কর্মঘণ্টা, অসংখ্য ট্রেনের সিডিউল অস্থিরতা—এগুলো লোকো পাইলটদের ব্যক্তিগত জীবনকেও বিপর্যস্ত করে তুলছে।

অনেক লোকো পাইলটের—

  • নিদ্রাহীনতার সমস্যা

  • মানসিক অবসাদ

  • উচ্চ রক্তচাপ

  • হূদরোগের ঝুঁকি

  • পরিবার থেকে দূরে থাকা

    —এসব সমস্যায় ভুগছেন বলে বিভিন্ন রিপোর্টে উঠে এসেছে।

🛑 “দোষ শুধু লোকো পাইলটের নয়”—বহু দুর্ঘটনার বিশ্লেষণে উঠে এসেছে ভিন্ন কারণ

গত কয়েক বছরের বেশ কিছু বড় দুর্ঘটনা বিশ্লেষণে দেখা গেছে—

  • সিগন্যালিং সিস্টেমে ত্রুটি

  • ফগ সেফটি সিস্টেম অকেজো

  • ট্র্যাক ফিটনেসের সমস্যা

  • যোগাযোগ ব্যবস্থা ব্যাহত

  • ডিউটি আওয়ারের নিয়ম লঙ্ঘন

এসবই দুর্ঘটনার বড় কারণ ছিল, কিন্তু লোকো পাইলটদেরই শাস্তি দিতে হয়েছে।

AILRSA বলছে—

“যে সিস্টেমের ভুল, তার দায় কর্মীর কাঁধে চাপানো হচ্ছে। এতে দুর্ঘটনা কমবে না, বরং বাড়বে।”

📜 কী কী দাবিতে অনশন?

AILRSA রেলের কাছে যে দাবিগুলো জানিয়েছে, তার মধ্যে প্রধান—

1️⃣ ডিউটি ঘণ্টা পুনর্নির্ধারণ—সর্বোচ্চ ৯ ঘণ্টা নিশ্চিত করা

2️⃣ পর্যাপ্ত বিশ্রাম (Rest Rules) কার্যকর করা

3️⃣ খালি পদে অবিলম্বে নিয়োগ

4️⃣ অতিরিক্ত চাপ কমাতে সিডিউল পুনর্বিন্যাস

5️⃣ সিগন্যালিং ও সেফটি সিস্টেম আধুনিকীকরণ

6️⃣ দুর্ঘটনা তদন্তে লোকো পাইলটকে একমাত্র দোষী না ধরা

7️⃣ লোকো পাইলটদের অন্যান্য সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পরিষেবার মতো মর্যাদা প্রদান

লোকো পাইলটদের প্রশ্ন—

“দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কাজ আমরা করি, কিন্তু সুবিধা সবচেয়ে কম কেন?”

🔊 AILRSA-র বার্তা: “আমরা যাত্রীদের বিপক্ষে নই, নিরাপদ রেলের পক্ষে”

সংগঠন জানিয়েছে—যে দাবি নিয়ে তারা অনশন শুরু করছে, তা শুধু লোকো পাইলটদের জন্য নয়; বরং দেশের রেল নিরাপত্তার প্রশ্নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

যদি কর্মীরা বিশ্রাম না পান, যদি অতিরিক্ত ডিউটি করানো হয়—তবে দুর্ঘটনা বাড়বেই।

AILRSA-র বক্তব্য—

“নিরাপদ রেল চালাতে হলে প্রথমে লোকো পাইলটদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।”

🚨রেল প্রশাসন কী সিদ্ধান্ত নেয়, সেদিকে এখন দেশের নজর

এই ৪৮ ঘণ্টার অনশন যদি আলোচনায় না আসে, AILRSA পরবর্তী সময়ে আরও বড় আন্দোলনের ইঙ্গিত দিয়েছে।

রেলযাত্রী, শ্রমিক সংগঠন এবং নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞরা বলছেন—লোকো পাইলটদের দাবি যুক্তিসঙ্গত এবং দীর্ঘদিন ধরে উপেক্ষিত।

এখন প্রশ্ন—

রেলওয়ে বোর্ড কি লোকো পাইলটদের কথা শুনবে?

নাকি দেশের রেল নিরাপত্তা নিয়ে একই সংকট চলতে থাকবে?

- Advertisement -
এই সংক্রান্ত আরও খবর
- Advertisment -

Most Popular