কলকাতা: ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচনের কাউন্টডাউন শুরু হয়ে গিয়েছে। তার আগেই ভোট প্রস্তুতি নিয়ে নড়েচড়ে বসেছে রাজ্য প্রশাসন। নির্বাচন কমিশনের রোডম্যাপের পাশাপাশি রাজ্যের প্রশাসনিক পরিকাঠামোকে আরও গতিশীল ও প্রযুক্তিনির্ভর করতে শনিবার নবান্নে (Nabanna election meeting) জেলাশাসকসহ একাধিক উচ্চপর্যায়ের আধিকারিকদের নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে বসছেন মুখ্যসচিব। সূত্রের খবর, বৈঠকে মূলত জোর দেওয়া হবে ইভিএম প্রস্তুতি, প্রযুক্তিগত সামর্থ্য, লজিস্টিক ম্যানেজমেন্ট এবং নির্বাচনকালীন নিরাপত্তা ব্যবস্থার ওপর।
রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, নির্বাচন কমিশনের সচিব মধুসূদন গুপ্ত এবং ইলেকট্রনিক্স কর্পোরেশন অফ ইন্ডিয়া লিমিটেড (ই–সি–আই–এল)-এর সিনিয়র ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার পি. সি. মণ্ডল শুক্রবার রাতেই কলকাতায় পৌঁছচ্ছেন। শনিবার সকাল থেকেই শুরু হবে দিনভর কর্মশালা। উপস্থিত থাকবেন রাজ্যের ২৪ জন জেলা নির্বাচনী আধিকারিক, যেখানে প্রতিটি জেলার প্রস্তুতির বাস্তব চিত্র তুলে ধরা হবে মুখ্যসচিবের সামনে।
প্রশাসনিক সূত্রের খবর, ইভিএম ও ভিভিপ্যাট মেশিনের পরীক্ষণ, মজুত, রক্ষণাবেক্ষণ এবং বুথভিত্তিক বিতরণ সবকিছুই গুরুত্বের সঙ্গে খতিয়ে দেখা হবে। গত কয়েকটি নির্বাচনে দেশের নানা প্রান্তে ইভিএম ত্রুটি বা প্রযুক্তিগত সমস্যার ঘটনায় কমিশন সতর্ক। তাই রাজ্যকেও আগেভাগে সমস্ত মেশিনের সঠিক যাচাই-বাছাই এবং প্রস্তুতি নিশ্চিত করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া ভোটের দিন নির্বিঘ্নে ভোটগ্রহণ পরিচালনার জন্য লজিস্টিক ব্যবস্থাপনাও এই বৈঠকের একটি বড় বিষয়। প্রতিটি বুথে পর্যাপ্ত সরঞ্জাম, ব্যাকআপ ইভিএম, পরিবহন, কর্মীদের থাকার ব্যবস্থা, চিকিৎসা সুরক্ষা সবকিছুই আগেভাগে পরিকল্পনা করতে হবে। বিশেষ করে জঙ্গলমহল, নদী-ভাঙনপ্রবণ এলাকা এবং দুর্গম গ্রামগুলিতে যে লজিস্টিক চ্যালেঞ্জ থাকে, তা মোকাবিলার কৌশল তৈরি করতে জেলাশাসকদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়ে আলাদা করে আলোচনা হবে। ২০২১ সালের নির্বাচন-পরবর্তী পরিস্থিতি মাথায় রেখে ২০২৬ এর ভোটে আরও শক্তিশালী নিরাপত্তা বলয় গড়ে তুলতে চায় প্রশাসন। কোন কোন বুথকে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ বলে চিহ্নিত করা হবে, কোথায় কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রয়োজন, কত স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থার প্রয়োজন এসব বিষয়েও পর্যালোচনা হবে। ভোটের দিন রিয়েল-টাইম নজরদারিতে সিসিটিভি ও ড্রোন ব্যবহারের বিষয়েও আলোচনা হতে পারে।
ডিজিটাল পরিকাঠামোও এই বৈঠকের একটি গুরুত্বপূর্ণ দিক। নির্বাচন কমিশনের নতুন অ্যাপ, বুথ লেভেল ট্র্যাকিং সিস্টেম, আইটি সাপোর্ট সবকিছুই সক্রিয় রাখতে নির্দেশ দেওয়া হতে পারে। প্রতিটি জেলা অফিসে আইটি সেল শক্তিশালী করা এবং টেকনিক্যাল টিমকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার দিকেও জোর দেওয়া হবে।
অভিজ্ঞ আধিকারিকদের মতে, ২০২৬ সালের বিধানসভা নির্বাচন আগের তুলনায় আরও প্রযুক্তিনির্ভর, আরও নির্ভুল এবং আরও নিরাপদ করতে চাইছে কমিশন। তাই আগেভাগে নবান্নের এই ধরনের উচ্চপর্যায়ের বৈঠক রাজ্যের সামগ্রিক প্রস্তুতিকে গতি দেবে।

