কলকাতা: ছাব্বিশের বিধানসভা নির্বাচনকে সামনে রেখে কার্যত সর্বশক্তি নিয়ে বাংলার রাজনৈতিক ময়দানে (Bengal campaign) নামছে বিজেপি। রাজ্যে সংগঠন দুর্বল বলে বিরোধীদের বারবার কটাক্ষ সত্ত্বেও, এ বার যে দিল্লির শীর্ষ নেতৃত্ব বাংলাকে অত্যন্ত গুরুত্ব দিচ্ছে ইতিমধ্যেই স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে। দলীয় সূত্রের খবর, ডিসেম্বর থেকেই টানা বঙ্গ সফর শুরু করতে চলেছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ এবং কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের আরও একাধিক গুরুত্বপূর্ণ মুখ। এই সফরের মূল লক্ষ্য ২০২৬ সালের বিধানসভা ভোটের আগে সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করা এবং তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সরাসরি জনসংযোগ বাড়ানো।
শুক্রবার কলকাতায় বিজেপির সাংগঠনিক বৈঠকের পর প্রাক্তন রাজ্য সভাপতি ও সাংসদ সুকান্ত মজুমদার জানান, “আমরা প্রধানমন্ত্রীর কাছে ১০টি বিভাগে ১০টি বড় কর্মসূচির অনুরোধ করেছিলাম। ইতিমধ্যেই তিনটি বিভাগে কর্মসূচি সম্পন্ন হয়েছে। বাকি অঞ্চলগুলিতেও খুব দ্রুতই কর্মসূচি হবে। ডিসেম্বর থেকেই প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, সর্বভারতীয় সভাপতি সবাই বাংলায় টানা প্রচারে থাকবেন।”
এদিকে, বঙ্গ বিজেপির কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক সুনীল বনসল স্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন যে ডিসেম্বর থেকেই রাজ্যের প্রতিটি বিধানসভা কেন্দ্রে তৃণমূল সরকারের দুর্নীতি, স্বজনপোষণ, অস্বচ্ছতা এবং প্রশাসনিক ব্যর্থতার বিরুদ্ধে পথসভা, মিছিল, জনসংযোগ ও প্রচার কর্মসূচি অব্যাহত রাখতে হবে। প্রতিটি কেন্দ্রে শীর্ষ নেতৃত্বকে অন্তত তিন দিন করে প্রবাস করতে হবে, গ্রাম থেকে শহরের ঘরে ঘরে পৌঁছাতে হবে দলের রাজনৈতিক বার্তা।
বনসলের নির্দেশ মোতাবেক আগামী দুই মাসের মধ্যে প্রতিটি বিধানসভায় আলাদা কোর টিম তৈরি করা হবে। তাতে থাকবেন জেলা নেতৃত্বের সঙ্গে কেন্দ্রীয় পর্যবেক্ষক ও সাংগঠনিক দায়িত্বপ্রাপ্তরা। দলের লক্ষ্য ২০২১ সালের ভুল পুনরাবৃত্তি এড়ানো এবং তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটিগুলিতে ভোটের ব্যবধান কমিয়ে আনা।
শুক্রবারের বৈঠকে ছিলেন সুনীল বনসল, সুকান্ত মজুমদার, শমীক ভট্টাচার্য, সুব্রত ঠাকুর, খগেন মুর্মু, শংকর ঘোষসহ বঙ্গ বিজেপির বেশিরভাগ শীর্ষ নেতা। দীর্ঘ আলোচনায় উঠে এসেছে সংগঠনের দুর্বলতা, বুথ স্তরে ঘাটতি, প্রচারের নতুন রূপরেখা এবং কেন্দ্রীয় নেতাদের সফর পরিকল্পনা। বৈঠকের মূল কেন্দ্রবিন্দু ছিল ডিসেম্বর থেকে মোদী-শাহদের লাগাতার প্রচার ও জনসংযোগের সুনির্দিষ্ট রূপরেখা তৈরি করা।
দলের পরিকল্পনা অনুযায়ী, ডিসেম্বর থেকে মার্চ এই চার মাস তৃণমূল সরকারের বিরুদ্ধে সবচেয়ে আক্রমণাত্মক রাজনৈতিক প্রচার পর্ব হবে। কেন্দ্রীয় প্রকল্পে বাংলার ‘বঞ্চনা’, তদন্তাধীন দুর্নীতি মামলাগুলি, দুর্বৃত্ত দমন, চিটফান্ড, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি সব ইস্যুকেই তুলে ধরা হবে ভোটমুখী প্রচারে। একই সঙ্গে দলের লক্ষ্য সংগঠনের ভিত আরও মজবুত করা।
তৃণমূল অবশ্য বিজেপির এই ‘সুপার অ্যাকটিভ’ প্রচারকে কটাক্ষ করছে। দলের বক্তব্য, “বিজেপির বাংলায় কোনও সংগঠনই নেই। নির্বাচনের মুখে দিল্লির নেতাদের এনে ডেলি-প্যাসেঞ্জারি চালিয়ে বাংলার মানুষকে প্রভাবিত করা যায় না। ২০২১-এ যেমন হয়নি, এবারের ফলও তেমনই হবে।”
তবে রাজনৈতিক মহলের একাংশের মতে, ২০২৬-এর ভোটের আগে বিজেপির এবারের প্রস্তুতি আগের থেকে অনেক বেশি আগ্রাসী এবং সুসংগঠিত। মোদি-শাহর লাগাতার প্রচার ও কৌশল বাংলার রাজনীতিতে আগামী কয়েক মাসে নতুন উত্তাপ তৈরি করবে, সন্দেহ নেই।
