মমতার ঘোষণায় অনুদান ছাড়াও বিপুল আর্থিক সুবিধা পুজোয়

mamata-banerjee-pens-theme-song-for-kolkatas-centennial-durga-puja-celebration

কলকাতা: শুধুমাত্র অনুদানের ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকা নয়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের (Mamata Banerjee) সাম্প্রতিক ঘোষণা কার্যত দুর্গাপুজো ঘিরে রাজ্যের সামগ্রিক অর্থনীতিকেই প্রাণ সঞ্চার করেছে। রাজ্যের ৪৪ হাজারেরও বেশি সর্বজনীন দুর্গাপুজো কমিটি সরাসরি ও পরোক্ষভাবে পেয়ে যাচ্ছে বিপুল আর্থিক সুবিধা। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণার ফলে একদিকে যেমন বিদ্যুৎ বিলের উপর ৮০ শতাংশ ছাড় মিলছে, তেমনি পুরসভা ও দমকল দফতরের যাবতীয় ফি-ও সম্পূর্ণ মকুব হয়েছে।

Advertisements

ফলে বহু পুজো কমিটিরই হিসাব বলছে—প্রতিটি কমিটি কমপক্ষে ১০ হাজার থেকে শুরু করে ২-৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত লাভবান হচ্ছে। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি পুজোগুলি এই ঘোষণার পরে অনেক বেশি আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে তাদের বাজেট তৈরির কাজে নেমেছে। যেমন পুরুলিয়ার ঝালদা বোলতলা পুজো কমিটির সম্পাদক রবীন দেওঘরিয়া জানিয়েছেন, ‘‘আমাদের পুজোর বাজেট দেড় লাখ। মুখ্যমন্ত্রী কার্যত সবটাই সামলে দিলেন।’’

   

শুধু অনুদান নয়, আরও নানা সুবিধার ফলে থিম শিল্পী, মৃৎশিল্পী, ঢাকী, লাইটিং শিল্পী, ডেকরেটর সহ অসংখ্য পেশাজীবী উপকৃত হচ্ছেন। কলকাতা থেকে শুরু করে উত্তরবঙ্গ, পশ্চিমাঞ্চল কিংবা রাঢ় বঙ্গ— সর্বত্রই এই সরকারি সাহায্যের ইতিবাচক প্রতিফলন পড়েছে। হুগলির চন্দননগরের আলোশিল্পী, কোচবিহারের ডেকরেটর শ্রমিক থেকে শুরু করে কলকাতার টালা বারোয়ারির থিম শিল্পী প্রশান্ত পাল পর্যন্ত সকলেই বলছেন, ‘‘এত বড় সাহায্য এই শিল্পজগতে এর আগে কোনও সরকার দেয়নি।’’

২০১১ সালে মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকেই দুর্গাপুজোকে ঘিরে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একাধিক উদ্যোগ রাজ্যের অর্থনীতিকে প্রভাবিত করেছে। প্রথমে ২৫ হাজার টাকা অনুদান দিয়ে শুরু হলেও করোনা পর্বে তা ৫০ হাজারে পৌঁছায়। এবছর সেই অনুদান বাড়িয়ে একলাফে ১ লক্ষ ১০ হাজার টাকায় উন্নীত করা হয়েছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে বিদ্যুৎ ছাড়, ফি-মকুব এবং হোর্ডিং করের সম্পূর্ণ রেহাই।

কলকাতা পুরসভার মেয়র ফিরহাদ হাকিম জানিয়েছেন, ‘‘হোর্ডিং কর না নিয়ে পুজো কমিটিগুলিকে পরোক্ষভাবে যে অর্থ ছাড় দেওয়া হয়েছে, তা যদি হিসাব করি তবে তা ১০-১২ কোটি টাকার মতো।’’

Advertisements

অর্থনীতিবিদদের মতে, রাজ্যের জিডিপির প্রায় ৭-৮ শতাংশ এখন শুধুমাত্র দুর্গাপুজো কেন্দ্রিক শিল্প ও বাণিজ্যের উপর নির্ভর করে। এই উৎসব ঘিরে ৪০ থেকে ৫০ হাজার কোটি টাকার লেনদেন হয়। ফলে রাজ্যের কয়েক কোটি মানুষের জীবিকা এই উৎসবের সঙ্গে যুক্ত। মুখ্যমন্ত্রীর এই ঘোষণায় তা আরও বিস্তৃত ও মজবুত হবে বলেই মত বিশেষজ্ঞদের।

ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের যুগ্ম সম্পাদক শাশ্বত বসু জানিয়েছেন, ‘‘ছোট পুজোগুলি যেমন সরাসরি অনুদানে চাঙ্গা হয়ে উঠছে, তেমনি বড় পুজো কমিটিগুলিও বিদ্যুৎ ছাড়ে দু’লাখ টাকার মতো আর্থিক সুবিধা পাচ্ছে।’’

এই মুহূর্তে বাংলায় দুর্গাপুজো শুধুমাত্র ধর্মীয় উৎসব নয়— এটি সংস্কৃতি, শিল্প, বাণিজ্য এবং রাজনীতিরও গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হয়ে উঠেছে। সেই পুজোর দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য সরকার এক নতুন দিশা দেখাল বলেই মনে করছে শিল্পজগৎ থেকে শুরু করে সমাজের সব স্তরের মানুষ।