কলকাতা, ২৩ অক্টোবর: শহরের ঐতিহ্য ও পরিবেশবান্ধব গণপরিবহণ ট্রাম ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। এবার সেই ঐতিহ্য রক্ষায় পথে নামতে চলেছেন সাধারণ মানুষ। Calcutta Tram Users Association ২৬ অক্টোবর বিকেল ৫টায় টালিগঞ্জ ট্রাম ডিপোতে “Saving Trams” নামে একটি প্রতিবাদ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে।
প্রতিবাদের মুখ্য দাবি হলো, বহু বছর বন্ধ থাকা ২৪/২৯ নম্বর রুট (টালিগঞ্জ–বালিগঞ্জ) দ্রুত চালু করা।
ট্রামের ঐতিহ্য ও বর্তমান সংকট
কলকাতা হলো ভারতের একমাত্র শহর যেখানে এখনও ট্রাম চলাচল করে। ১৮৭৩ সালে সূচনা হওয়া এই পরিবহণ ব্যবস্থা এক সময় গোটা শহর জুড়েই বিস্তৃত ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে রুট সংখ্যা কমতে কমতে হাতে গোনা কয়েকটি লাইনে সীমাবদ্ধ হয়েছে।
বর্তমানে কেবলমাত্র বেলগাছিয়া, শ্যামবাজার, গড়িয়া হাট, খিদিরপুরসহ কিছু এলাকায় ট্রাম দেখা যায়। অনেক রুট বন্ধ হয়ে পড়ে আছে, আবার কোথাও কোথাও ডিপোয় অচল অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে বহু ট্রাম।
আন্দোলনের প্রেক্ষাপট
আয়োজক সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে,
“ট্রাম কেবল পরিবহণ নয়, এটি কলকাতার পরিচয়। এটি বিশ্বের অন্যতম পরিবেশবান্ধব যান। গ্লোবাল ওয়ার্মিং-এর সময়ে ট্রামকে বাঁচানোই আমাদের দায়িত্ব। কিন্তু সরকার ধীরে ধীরে ট্রামের রুট বন্ধ করে দিচ্ছে। তাই আমাদের দাবি—২৪/২৯ নম্বর রুট টালিগঞ্জ থেকে বালিগঞ্জ অবিলম্বে চালু করতে হবে।”
পরিবেশবান্ধব যাতায়াতের দাবি
ট্রাম পরিবহণ গাড়ি বা বাসের তুলনায় বহুগুণ কম দূষণ ঘটায়। এটি বিদ্যুৎচালিত হওয়ায় কার্বন নিঃসরণ নেই বললেই চলে। শহরের যানজট কমাতেও ট্রাম গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। ইউরোপ ও এশিয়ার অনেক শহর যেখানে নতুন ট্রাম চালু করছে, সেখানে কলকাতার মতো শহরে উল্টো ট্রাম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে—যা নিয়ে ক্ষোভ বাড়ছে।
নাগরিকদের সাড়া
শহরের সাধারণ মানুষ, পরিবেশবিদ ও ইতিহাসপ্রেমীরা এই আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছেন। সামাজিক মাধ্যমে ইতিমধ্যেই হ্যাশট্যাগ #SaveTrams ছড়িয়ে পড়েছে। লাল-নীল রঙের ট্রাম কলকাতার সংস্কৃতির সঙ্গে গভীরভাবে যুক্ত। অনেকে মনে করছেন, এটি কেবল পরিবহণ নয়, বরং কলকাতার ‘আইকনিক হেরিটেজ’।
২৬ অক্টোবর টালিগঞ্জ ডিপোতে অনুষ্ঠিত এই কর্মসূচি কতটা সাড়া জাগাতে পারে, সেটাই এখন দেখার। তবে এতটুকু স্পষ্ট—ট্রাম বাঁচানোর লড়াই কেবল পরিবহণ নয়, এটি কলকাতার ঐতিহ্য ও পরিবেশ রক্ষার লড়াইও।
