বহু দশকের পুরোনো ‘থ্রি নট থ্রি’ রাইফেলের যুগ শেষ হতে চলেছে কলকাতা পুলিশে। তার বদলে এবার শহরের বাহিনীর হাতে উঠছে অত্যাধুনিক Trichy Assault Rifle (TAR)। অর্ডন্যান্স ফ্যাক্টরি তিরুচিরাপল্লী নির্মিত এই নতুন রাইফেলের প্রথম লট আগামী বছরের শুরুতেই কলকাতায় পৌঁছনোর কথা। পুলিশের এক ডেপুটি কমিশনার জানিয়েছেন, কনসাইনমেন্টগুলি ধাপে ধাপে আসবে এবং সঙ্গে সঙ্গে বিভিন্ন ইউনিটে বিলিও শুরু হবে।
নতুন TAR-এর সবচেয়ে বড় সুবিধা—হালকা ওজন ও আধুনিক অপারেশন মোড। যেখানে পুরনো .303 রাইফেলের ওজন ছিল প্রায় ৫.৫ কেজি, সেখানে TAR কমপক্ষে ২ কেজি হালকা। রাইফেলটি সিঙ্গল-শট এবং বার্স্ট—দু’ধরনের ফায়ার মোডে চালানো যায়। প্রায় ৫০০ মিটার দূরের লক্ষ্যবস্তুকেও নির্ভুলভাবে আঘাত করতে পারে এই অস্ত্র। মডুলার ডিজাইন, ভাঁজযোগ্য বাট এবং লাইটওয়েট কাঠামো এটিকে টহলদারি, নজরদারি ও গার্ড ডিউটির জন্য বিশেষভাবে উপযোগী করে তুলেছে।
আধুনিকীকরণের দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অংশ হিসেবে কলকাতা পুলিশ ইতিমধ্যেই পুরনো অস্ত্র বাদ দিয়ে INSAS এবং SLR রাইফেলের দিকে ঝুঁকেছে। তবে TAR-এর অন্তর্ভুক্তিকে কর্মকর্তারা আরও এক ধাপ এগোনো পদক্ষেপ বলছেন। বিশেষ করে ২৬/১১ মুম্বই হামলার পরে দেশের পুলিশ বাহিনীতে আধুনিক আগ্নেয়াস্ত্রের প্রয়োজনীয়তা তীব্রভাবে অনুভূত হয়।
ইতোমধ্যেই BSF, CRPF-সহ একাধিক কেন্দ্রীয় নিরাপত্তাবাহিনী TAR ব্যবহার করছে। ছত্তিশগড়, ঝাড়খণ্ড, রাজস্থান এবং মধ্যপ্রদেশ পুলিশও এই রাইফেল সংগ্রহ করেছে। কলকাতা পুলিশও TAR-এর পাশাপাশি ইশাপুর রাইফেল ফ্যাক্টরি থেকে প্রায় ২০০টি স্বয়ংক্রিয় 9mm 1A পিস্তল কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পাশাপাশি টেকানপুর টিয়ার স্মোক ইউনিট থেকে অ-প্রাণঘাতী গোলাবারুদ কেনার পরিকল্পনাও চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
পুলিশ কর্তাদের মতে, এই ধরনের অস্ত্র আপগ্রেড শুধুমাত্র বাহিনীর সক্ষমতা বাড়ায় না, মাঠে থাকা কর্মীদের মনোবল ও আত্মবিশ্বাসও উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। সশস্ত্র অপরাধী বা সম্ভাব্য জঙ্গি মোকাবিলায় আধুনিক রাইফেল অত্যন্ত জরুরি—এটিই তাদের সামগ্রিক মূল্যায়ন।
