কলকাতা: কলকাতার রাস্তায় শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কলকাতা পুলিশ কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছে। শুক্রবার পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, বিভিন্ন অপরাধের জন্য ১৩২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২২ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে অশান্তিমূলক আচরণের জন্য এবং ১০ জনকে নিষিদ্ধ আতশবাজি ফাটানোর অভিযোগে।
বৃহস্পতিবার রাতে এই অভিযানের সময় পুলিশ ৩.৭ কেজি নিষিদ্ধ আতশবাজি এবং ৪.২ লিটার অবৈধ মদ বাজেয়াপ্ত করেছে। এই অভিযান শহরে উৎসবের মরসুমে নিরাপত্তা জোরদার করার অংশ হিসেবে দেখা হচ্ছে, বিশেষ করে দীপাবলি ও কালীপুজোর আগে।কলকাতা পুলিশের এই অভিযান শহরের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে থাকা অপরাধের বিরুদ্ধে একটা শক্তিশালী বার্তা।
সাইবার জালিয়াতি রোধে DoT-র প্রস্তুতি, Airtel, BSNL, Jio, Vi-এর জন্য তৈরি নতুন নিয়ম
পুলিশের বিবৃতি অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার রাতে শহরের বিভিন্ন থানা এলাকায় টহলদারি এবং বিশেষ অভিযান চালানো হয়। এই সময় অশান্তিমূলক আচরণের অভিযোগে গ্রেফতার ব্যক্তিদের মধ্যে অনেকেই জনসমাগমে হট্টগোল, মাতাল অবস্থায় হইচই, এবং পাবলিক প্লেসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির সঙ্গে জড়িত ছিল। এই ধরনের ঘটনা শহরের শান্তিপূর্ণ পরিবেশকে ব্যাহত করে, বিশেষ করে উৎসবের মরসুমে যখন মানুষের ভিড় বাড়ে। পুলিশ স্পষ্ট জানিয়েছে যে, এই ধরনের আচরণে কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
এছাড়াও, নিষিদ্ধ আতশবাজি ফাটানোর ঘটনায় ১০ জনের গ্রেফতারি উৎসবের সময় পরিবেশ ও নিরাপত্তার উপর কঠোর নজরদারির ইঙ্গিত দেয়। পশ্চিমবঙ্গ সরকার এবং কলকাতা পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ শব্দের এবং পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর আতশবাজির বিরুদ্ধে প্রচার চালাচ্ছে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী, শুধুমাত্র নির্দিষ্ট ধরনের ‘গ্রিন ফায়ারক্র্যাকার্স’ ব্যবহারের অনুমতি রয়েছে, যা কম শব্দ এবং কম দূষণ সৃষ্টি করে।
কিন্তু অনেকেই এই নিয়ম লঙ্ঘন করে নিষিদ্ধ আতশবাজি ব্যবহার করছে, যা শুধু পরিবেশের ক্ষতি করে না, বরং অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকিও বাড়ায়। ৩.৭ কেজি নিষিদ্ধ আতশবাজি জব্দ করা প্রমাণ করে যে পুলিশ এই বিষয়ে কঠোর অবস্থানে রয়েছে।অবৈধ মদের বিরুদ্ধেও পুলিশের এই অভিযান উল্লেখযোগ্য। ৪.২ লিটার বাজেয়াপ্ত করা অবৈধ মদ শহরের কিছু এলাকায় অবৈধ মদের ব্যবসার বিস্তারের ইঙ্গিত দেয়।
উৎসবের মরসুমে এই ধরনের অবৈধ কার্যকলাপ বেড়ে যায়, কারণ চাহিদা বাড়ে। পুলিশ জানিয়েছে, এই মদগুলো স্থানীয়ভাবে তৈরি বা সীমান্ত এলাকা থেকে পাচার করা হয়। এই ধরনের মদ শুধু স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, বরং প্রায়ই অপরাধের সঙ্গে যুক্ত থাকে। পুলিশের টহলদারি দল এবং গোয়েন্দা বিভাগ যৌথভাবে এই অভিযান চালিয়েছে, যাতে শহরের বিভিন্ন পানশালা, রাস্তার ধারের দোকান এবং গুদামে তল্লাশি চালানো হয়।
এই অভিযানের ফলে শহরের সাধারণ মানুষের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। অনেকে পুলিশের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন, বিশেষ করে যারা উচ্চ শব্দের আতশবাজির কারণে বিরক্ত। উত্তর কলকাতার বাসিন্দা রমেশ দাস বলেন, “আতশবাজির শব্দে আমার বয়স্ক মা রাতে ঘুমোতে পারেন না। পুলিশের এই পদক্ষেপ আমাদের জন্য স্বস্তির।”
তবে, কিছু ব্যবসায়ী অভিযোগ করেছেন যে, পুলিশের অতিরিক্ত তৎপরতায় তাদের বৈধ ব্যবসার উপর প্রভাব পড়ছে। একজন আতশবাজি বিক্রেতা বলেন, “আমরা সরকারি নিয়ম মেনে গ্রিন ফায়ারক্র্যাকার্স বিক্রি করি, তবু পুলিশের তল্লাশিতে আমাদের হয়রান হতে হয়।”


