কলকাতা: পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থাকে আরও গতিময় ও কার্যকর করতে বড় পদক্ষেপ নিল কলকাতা পুরসভা। এবার থেকে প্রতিদিন সকাল ৭টা থেকে ৯টার মধ্যে শহরের কোনও রাস্তায় গাড়ি পার্কিং করা যাবে না (Kolkata no-parking rule)। শুক্রবার এক গুরুত্বপূর্ণ প্রশাসনিক বৈঠকের পর এই সিদ্ধান্তের কথা স্পষ্ট জানিয়ে দিলেন কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিম।
মেয়র জানান, প্রতিদিন ভোরবেলায় পুরসভার জঞ্জাল সংগ্রহের কাজে সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়ায় রাস্তাজুড়ে পার্ক করা গাড়ির সারি। আবাসিক কমপ্লেক্স, বহুতল এলাকা, গলি বা প্রধান রাস্তায় যেখানে-সেখানে গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকার ফলে পুরসভার জঞ্জাল গাড়িগুলি ভেতরে ঢুকতে পারে না। ফলে জঞ্জাল জমে থাকে, এবং বাসিন্দারা অভিযোগ করেন যে ময়লা পরিষ্কার করা হচ্ছে না।
তিনি আরও জানান, অনেক গাড়ির মালিক ইচ্ছাকৃতভাবে গাড়ির আড়ালে আবর্জনা ফেলেন অথবা গাড়ির নিচেই ময়লা জমে থাকে, যার ফলে পুরকর্মীদের কাজ আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এই সমস্যার দায় পুরসভার ওপর চাপানো হলেও প্রকৃত সমস্যা গাড়ি পার্কিং শৃঙ্খলার অভাবেই তৈরি হচ্ছে এমনটাই দাবি মেয়রের।
এই পরিস্থিতি মোকাবিলাতেই নতুন ‘মর্নিং নো-পার্কিং উইন্ডো’ চালু করা হচ্ছে। মেয়র বলেন, “সকাল সাতটা থেকে নয়টা পর্যন্ত শহরের রাস্তায় কোনও গাড়ি দাঁড়িয়ে থাকতে পারবে না। নির্দেশ মানা না হলে পুলিশ গাড়ি সরাসরি টো করে থানায় নিয়ে যাবে।” শিগগিরই পুর কমিশনারের অফিস থেকে এ সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশিকা জারি করা হবে।
তিনি আরও জানিয়েছেন, শুধু সকালবেলার পার্কিং নিষেধাজ্ঞাই নয়, দীর্ঘদিন ধরে থানায় জমে থাকা পরিত্যক্ত গাড়িগুলির ক্ষেত্রেও কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বহু থানায় মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর ধরে পরিত্যক্ত গাড়ি পড়ে থাকার ফলে রাস্তা দখল হয় ও আবর্জনা জমে থাকে। কলকাতা পুলিশ কমিশনারকে চিঠি দিয়ে জানতে চাওয়া হবে কোন থানায় কত গাড়ি ছয় মাসের বেশি পড়ে আছে।
পরিকল্পনা অনুযায়ী সমস্ত পরিত্যক্ত গাড়িকে দ্রুত কল্যানী এক্সপ্রেসওয়ের পাশের ক্র্যাশার-এ পাঠানো হবে। এর ফলে শহরের রাস্তা মুক্ত হবে, এবং জনসাধারণের চলাচল আরও সহজ হবে।
পুরসভা আশা করছে, এই কঠোর পদক্ষেপ বাস্তবায়িত হলে জঞ্জাল সংগ্রহ, ডোর-টু-ডোর ক্লিনিং এবং সকালবেলার ট্রাফিক সবই অনেক বেশি স্বচ্ছন্দ ও শৃঙ্খলাপূর্ণ হয়ে উঠবে। নাগরিকদের সহযোগিতা কামনা করে মেয়র বলেন—“পরিচ্ছন্ন কলকাতা গড়তে সকলে এগিয়ে আসতে হবে। সকালবেলার দুই ঘণ্টা সবার জন্যই অত্যন্ত জরুরি।”
কলকাতার প্রশাসনিক মহলে মনে করা হচ্ছে, এই সিদ্ধান্ত শহরের পরিচ্ছন্নতা র্যাঙ্কিং উন্নত করতেও বড় ভূমিকা নেবে। পাশাপাশি অফিস টাইমে যানজট কমবে এবং রাস্তায় নিয়মশৃঙ্খলা বাড়বে। সব মিলিয়ে কলকাতাকে আরও পরিচ্ছন্ন, সুন্দর ও বাসযোগ্য করে তুলতেই পুরসভার এই নতুন উদ্যোগ।


