কলকাতার যাতায়াত ব্যবস্থায় মেট্রোরেল (Kolkata Metro) আজ এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। ১৯৮৪ সালে প্রথমবার পরিষেবা শুরুর পর পেরিয়ে গেছে ৪১ বছর। দীর্ঘ এই সময়ের পর ২০২৫ সালের নভেম্বরে এসে মহানগরের মেট্রোর বিস্তার পৌঁছেছে ৭২ কিলোমিটারে। কিন্তু এখানেই শেষ নয়—আগামী এক বছরে অর্থাৎ ২০২৬-এর ডিসেম্বর নাগাদ কলকাতা মেট্রো আরও ১৯ কিলোমিটার পথে ছুটবে, মোট দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে প্রায় ৯১ কিলোমিটার।
কলকাতা মেট্রো রেল কর্পোরেশন (KMRC) ও ইস্টার্ন রেলওয়ের যৌথ উদ্যোগে শহরের একাধিক নতুন রুটে দ্রুত কাজ এগোচ্ছে। উত্তর-দক্ষিণ, পূর্ব-পশ্চিম ও জোকা–এসপ্লানেড করিডর মিলিয়ে চলতি অর্থবছরেই কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ উদ্বোধনের অপেক্ষায়। সংস্থার জেনারেল ম্যানেজার শুভ্রাংশু মিশ্র জানিয়েছেন, “মেট্রো কলকাতার জীবনরেখা। আমাদের লক্ষ্য আগামী কয়েক বছরের মধ্যে শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তকে নির্বিঘ্নে যুক্ত করা। ২০২৬ সালের ডিসেম্বর নাগাদ মেট্রোর নেটওয়ার্ক অন্তত ৯১ কিলোমিটারে পৌঁছবে।” নতুন যে অংশগুলো চালুর পথে, তার মধ্যে রয়েছে জোকা–এমাজন, নিউ গড়িয়া–রুবি–সেক্টর ফাইভ, এবং পূর্ব-পশ্চিম করিডরের সল্টলেক সেক্টর ফাইভ থেকে হাওড়া ময়দান পর্যন্ত রুট।
এই রুটগুলো চালু হলে কলকাতার দক্ষিণ ও পূর্ব অংশের সঙ্গে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের সংযোগ আরও মজবুত হবে। মেট্রোরেল সূত্রে জানা গেছে, জোকা–এসপ্লানেড করিডরের বাকি অংশের কাজ দ্রুত গতিতে এগোচ্ছে। একই সঙ্গে গড়িয়া–রুবি অংশে ট্রায়াল রান শুরু হয়েছে, এবং বছরের মধ্যেই তা যাত্রীদের জন্য খুলে দেওয়া হতে পারে।
১৩০ কিলোমিটার মেট্রো শহরের লক্ষ্য
কলকাতা মেট্রোর জেনারেল ম্যানেজার শুভ্রাংশু মিশ্র আরও জানান, “বর্তমানে ৭২ কিলোমিটার রুট চালু রয়েছে, ২০২৬ সালের মধ্যে তা হবে ৯১ কিলোমিটার। তবে এখানেই থেমে থাকছে না উন্নয়ন। আগামী কয়েক বছরের মধ্যেই মহানগরে মেট্রোর দৈর্ঘ্য ছুঁবে ১৩০ কিলোমিটার।”
এই লক্ষ্য পূরণ হলে কলকাতা ভারতের অন্যতম বৃহত্তম মেট্রো নেটওয়ার্কের শহরে পরিণত হবে। বর্তমানে দিল্লি ও হায়দরাবাদের পর, কলকাতাও দ্রুত এগোচ্ছে সংযোগের দিক থেকে।
যাত্রী সুরক্ষা ও সুবিধা
শুধু রুট বৃদ্ধি নয়, আধুনিক প্রযুক্তি ও যাত্রীসুবিধাতেও জোর দিচ্ছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। নতুন ট্রেনে থাকছে স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থা, এয়ার-কন্ডিশনড কোচ, উন্নত নিরাপত্তা ও রিয়েল-টাইম মনিটরিং সিস্টেম। স্টেশনগুলিতে থাকছে এলিভেটর, এস্কেলেটর, এবং বিশেষভাবে সক্ষম যাত্রীদের জন্য আলাদা ব্যবস্থা। প্রতিদিন গড়ে প্রায় ৮ লক্ষ যাত্রী কলকাতা মেট্রো ব্যবহার করেন। নতুন রুট চালু হলে এই সংখ্যা বাড়বে অন্তত ৩০ শতাংশ বলে অনুমান।
মহানগরের ভবিষ্যৎ
বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী এক দশকে কলকাতার গণপরিবহনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা নেবে মেট্রো। যানজট, দূষণ ও সময় নষ্ট কমাতে মেট্রোর সম্প্রসারণই হবে মূল চাবিকাঠি। শহরের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যাত্রার সময় অনেকটাই কমে আসবে। একজন শহরবাসীর ভাষায়, “এখনো প্রতিদিন অফিস যাওয়ার সময় এক ঘন্টারও বেশি লেগে যায়। নতুন মেট্রো রুট চালু হলে অন্তত অর্ধেক সময় বাঁচবে।”


