কলকাতা: দীর্ঘদিনের যাত্রী অভিযোগ অবশেষে কানে তুলল কলকাতা মেট্রো (Kolkata Metro) রেল কর্তৃপক্ষ। দক্ষিণেশ্বর থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম পর্যন্ত ব্লু লাইনের প্রতিটি স্টেশনে যাত্রীরা প্রতিদিনই ভোগান্তিতে পড়ছেন স্বয়ংক্রিয় গেট না খোলার সমস্যায়। এবার সেই সমস্যার স্থায়ী সমাধান আনতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ সিদ্ধান্ত নিয়েছে — সমস্ত পুরনো স্বয়ংক্রিয় গেট (AFC-PC) বদলে নতুন গেট বসানো হবে।
মেট্রো সূত্রে জানা গেছে, এই পুরো রুটে মোট ২৫টি স্টেশনে ১৩৩টি নতুন গেট বসানো হবে। ইতিমধ্যেই দরপত্র আহ্বান করা হয়েছে। নতুন গেটগুলিতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করা হবে যাতে কিউআর কোড ও স্মার্ট কার্ড— দুই ধরনের টিকিটই দ্রুত স্ক্যান করা যায়।
২০১১ সালে বসানো পুরনো গেটগুলো এখন প্রায় ১৫ বছর পুরনো। সেই সময়কার যন্ত্রাংশ এখন আর সহজলভ্য নয়। ফলে মেরামতির বদলে সম্পূর্ণ নতুন গেট বসানোর সিদ্ধান্তই কার্যকর বলে মনে করছে কর্তৃপক্ষ।
নতুন কিউআর কোড যুক্ত কাগজের টিকিট চালু হওয়ার পর থেকেই যাত্রীদের সমস্যার পরিমাণ বেড়েছে। অনেক সময় টিকিট পকেটে ভাঁজ হয়ে যাওয়ায় কিউআর কোড ‘রিড’ করতে পারছে না গেট। ফলে গেট না খুলে লাইন জমে যাচ্ছে। এমনকি স্মার্ট কার্ড ব্যবহার করলেও গেট না খোলার অভিযোগ রয়েছে। ফলে অফিস সময়ে বিপত্তি আরও বাড়ছে।
যাত্রীদের অভিযোগ, তাড়াহুড়োয় প্ল্যাটফর্মে নামার পর গেট খুলতে দেরি হওয়ায় ট্রেনের সামনে হুড়োহুড়ি শুরু হয়। একসঙ্গে দুই ট্রেন ঢুকলে সমস্যা দ্বিগুণ হয়ে যায়। আবার অনেক সময় নেটওয়ার্ক দুর্বল থাকায় স্মার্ট কার্ডও কাজ করছে না।
মেট্রো কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, যাত্রীদের অসুবিধা দূর করতে চিপ-ভিত্তিক সেন্সর প্রযুক্তি যুক্ত নতুন গেট বসানো হবে। এগুলিতে দ্রুত রিডিং, নির্ভুল স্ক্যানিং ও মসৃণ অপারেশনের ব্যবস্থা থাকবে। ফলে গেট খুলতে আর দেরি হবে না।
তবে দক্ষিণেশ্বর, বরানগরের মতো নতুন স্টেশনগুলিতে আপাতত গেট পরিবর্তন করা হবে না, কারণ সেগুলি তুলনামূলকভাবে আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, অনেক সময় দেখা যায় যাত্রীরা টিকিট বা স্মার্ট কার্ড সঠিক জায়গায় না ছোঁয়ালে গেট খুলছে না। এতে সিস্টেমে বারবার ‘এরর’ তৈরি হয়। সেই অবস্থায় স্মার্ট কার্ডও কাজ করে না। নতুন গেট বসানো হলে এই সমস্যাগুলিও অনেকটাই কমবে বলে আশাবাদী মেট্রো রেল।
আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই এই গেট বদলের কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। এতে যাত্রীদের দৈনন্দিন মেট্রো যাত্রা আরও দ্রুত, সহজ ও ঝামেলামুক্ত হবে।
এক মেট্রো আধিকারিকের মন্তব্য অনুযায়ী, “যাত্রীদের অভিযোগ আমরা গুরুত্ব সহকারে দেখেছি। পুরনো গেটগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে। তাই পুরো সিস্টেম নতুনভাবে সাজানোই সবচেয়ে কার্যকর সমাধান।”
যাত্রীরা বলছেন, “প্রতিদিন অফিসের ভিড়ে গেট না খোলার জন্য সময় নষ্ট হয়। যদি নতুন গেট বসে, তাহলে অনেকটাই স্বস্তি পাব।”

