কলকাতা: যাত্রীদের অপেক্ষা কমাতে এবং পরিষেবা আরও মসৃণ করতে রবিবার ভোরে কলকাতা মেট্রোর গ্রিন লাইনে (Kolkata Metro Green Line) চলল এক বিশেষ মহড়া। সকাল পাঁচটা থেকে আটটা পর্যন্ত হাওড়া ময়দান থেকে সল্টলেক সেক্টর–৫ পর্যন্ত এই পরীক্ষামূলক পরিষেবা চলে। এই সময়ে মোট ১৪টি রেক নামিয়ে পরীক্ষা করা হয় ট্র্যাকের সক্ষমতা এবং ট্রেন চলাচলের সময়ের ব্যবধান কতটা কমানো সম্ভব।
বর্তমানে গ্রিন লাইনে একসঙ্গে ১০টি ট্রেন চালানো হয়। রবিবারের মহড়ায় চারটি রেক বাড়িয়ে মোট ১৪টি ট্রেন চালানো হয় আপ ও ডাউন দু’দিকেই। মেট্রো সূত্রে জানা গিয়েছে, এই পরীক্ষার মূল লক্ষ্য ছিল একই সময়ে একাধিক ট্রেন চললে সিগন্যালিং, টেলিকম ও রেল ট্র্যাকের সামগ্রিক প্রতিক্রিয়া কী হয়, তা পর্যবেক্ষণ করা।
গত ২২ আগস্ট হাওড়া ময়দান থেকে সল্টলেক সেক্টর–৫ পর্যন্ত ১৬.৬ কিলোমিটারের গ্রিন লাইনের সম্পূর্ণ পরিষেবা শুরু হয়। এর পর থেকেই কলকাতার মেট্রো যাত্রীসংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণেরও বেশি। প্রতিদিন গড়ে দু’লক্ষের বেশি যাত্রী এই রুটে যাতায়াত করছেন। বাড়তে থাকা যাত্রীর ভিড় সামলাতে মেট্রো কর্তৃপক্ষ ট্রেনের ব্যবধান ৮ মিনিট থেকে কমিয়ে ৬ মিনিট করেছে।
তবুও রাশ আওয়ারে স্টেশনগুলিতে যাত্রীদের ভিড় কমছে না। মেট্রো কর্মীদের বক্তব্য, “যাত্রীচাপের সঙ্গে সঙ্গে যান্ত্রিক চাপও বাড়ছে। ফলে সিগন্যালিং সিস্টেমে মাঝে মাঝে সমস্যা দেখা দিচ্ছে।” গত ১৮ সেপ্টেম্বর এই লাইনে সিগন্যাল গোলযোগের কারণে কয়েক ঘণ্টা পরিষেবা বন্ধও রাখতে হয়েছিল।
এই সমস্যাগুলি মাথায় রেখে রবিবারের বিশেষ মহড়ার আয়োজন করা হয়। মেট্রোর সিগন্যাল ও টেলিকম বিভাগের এক আধিকারিক জানান, “১৪টি রেক একসঙ্গে চালানো হলে আপ ও ডাউন দু’লাইনেই ৪ থেকে ৫ মিনিট অন্তর ট্রেন চালানো সম্ভব। তবে তার আগে প্রযুক্তিগতভাবে সব দিক পরীক্ষা করাই ছিল এই মহড়ার উদ্দেশ্য।”
গ্রিন লাইনে ব্যবহৃত আধুনিক Communication Based Train Control (CBTC) সিস্টেমের মাধ্যমে ন্যূনতম ৯০ সেকেন্ড অন্তর ট্রেন চালানো সম্ভব। কিন্তু সেই মাত্রায় পৌঁছতে হলে কমপক্ষে ২১টি রেক প্রয়োজন। আপাতত মেট্রো কর্তৃপক্ষ ১৪টি রেক ব্যবহার করে প্রাথমিক ধাপের ট্রায়াল সেরেছে।
একজন জ্যেষ্ঠ মেট্রো আধিকারিক বলেন, “এই ট্রায়াল থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে ভবিষ্যতে পরিষেবার ফ্রিকোয়েন্সি আরও বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।”
অফিসযাত্রীদের আশা, এই পরীক্ষার ফল ইতিবাচক হলে গ্রিন লাইনে ট্রেনের ব্যবধান আরও কমবে। এক নিয়মিত যাত্রী বলেন, “যদি চার-পাঁচ মিনিট অন্তর ট্রেন আসে, তবে গ্রিন লাইন হবে শহরের দ্রুততম সংযোগ পথ।”
যদিও মেট্রো কর্তারা এখনই নিশ্চিত করে কিছু জানাচ্ছেন না, তবে স্পষ্ট ইঙ্গিত—যাত্রীদের সুবিধা ও ভিড় নিয়ন্ত্রণে শীঘ্রই নতুন পরিকল্পনা আসছে গ্রিন লাইনে।